শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কিছু অপশক্তি মাঠে নেমেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতারা দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, দেশের বিরুদ্ধে তারা নানারকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবব্ধভাবে সতর্ক থাকাতে হবে। শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত আলোচনাসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা জানান। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেদিন হালবিহীন নৌকা পরিচালনার আত্মিক ও মানসিক শক্তি কেউ দেখাতে পারেনি। আমি কাউকে ছোট করতে চাই না। তবে, বলতে চাই আওয়ামী লীগের কর্মীরা কখনও মাথা নোয়ায় না। কর্মীরাই এসে হাল ধরে এটা তারা বারবার প্রমাণ করেছেন। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দলের প্রেসিডিয়ামের আরেক সদস্য জাহাঙ্গির কবির নানক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের অনুচর জিয়াউর রহমানকে ঢুকিয়ে দিয়ে, খন্দকার মোশতাকদের ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে চেয়েছিল। ব্যর্থ হয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেদিন আমাদের দলের ভেতরে অস্থিরতা ছিল, সেই অস্থিরতা শুভফল বয়ে আনেনি। জেনারেল জিয়াউর রহমানরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানতে পারেনি। মোশতাকরা মানতে পারেনি। তাই বাংলাদেশ মুসলিম বাংলা নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭২ সালে। এরা সারাদেশে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেদিন বিভাজনের মধ্য দিয়ে গণবাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে সত্য কথা আমাকে বলতেই হবে। সেদিন জাসদ সৃষ্টি, গণবাহিনী সৃষ্টি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছিল। সেদিন আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করা হয়েছিল।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সেদিন কেন আমরা কার্যকর প্রতিরোধ, প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারলাম না। রাজপথে আন্দোলন করতে পারলাম না, সেই ব্যর্থতা নিয়েও আমাদের কথা বলতে হবে। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতে হবে। ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি।
আলোচনা সভায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, বিজয়ের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী, পরাজয়ের গ্লানি চিরস্থায়ী। এই পরাজয়ের গ্লানি মোচন করা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্য ৭১-এর পরাজিত শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর প্রথম স্বপ্ন ছিল এদেশের স্বাধীনতা। দ্বিতীয় স্বপ্ন ছিল এদেশের মানুষের মুক্তি। তাই স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই তিনি অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামের ডাক দেন। জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধুপরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী, ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রকারী, নেপথ্য কারিগর ও পরবর্তীতে হত্যাকারীদের রক্ষাকারী ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতকদেরও বিচার করতে হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুলতানা শফির সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন যুবমহিলালীগরে সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও দলের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আফসানা ফেরদৌসি কেকা।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও উপ-কমিটির সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকি, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম প্রমুখ।