জন্মভূমি ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সোনালি যুগ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিজের দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের রাউটেন্ডা হলে শপথ নেওয়ার পরপরই অভিষেক ভাষণ দেন চার বছর বিরতি দিয়ে হোয়াইট হাউজে ফেরা এই রিপাবলিকান। ট্রাম্প ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় নানা ভুল তথ্য ছড়িয়েছিলেন; সেই কারণে সোশাল মিডিয়ায় নানা সময়ে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয় তাকে। সোমবার দ্বিতীয় অভিষেক ভাষণেও ট্রাম্প অবলীলায় নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। তার মধ্যে কিছু অর্ধ সত্য, কিছু একেবারে সত্য নয়। ভাষণে ট্রাম্প এমন কী কী ভুল কিংবা অর্ধ সত্য তথ্য দিয়েছেন, তা খুঁজে বের করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স ও গার্ডিয়ান। খবর সকাল সন্ধ্যা।
ভোটে জেতার পর থেকে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা বলছিলেন ট্রাম্প; অভিষেক ভাষণেও সেকথা বলেছেন। বক্তৃতায় তিনি বলেন, পানামা খাল খননের সময় ৩৮ হাজার আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো, পানামা খাল নিয়ন্ত্রণ করছে চীন। তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, পানামা খাল খননের সময় মারা যাওয়া আমেরিকানের সংখ্যাটি ট্রাম্পের বলা তথ্যের চেয়ে অনেক কম, ৫ হাজার ৬০০ জন। খালটিও চীন নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি তদারকির ভার পানামা ক্যানেল অথরিটির, যা পানামা সরকারের গঠিত সংস্থা। পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো গত মাসেই বলেছিলেন, “পানামা খালের ওপর চীন কিংবা ইউরোপের কোনও দেশ কিংবা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কারও প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ নেই।”
ভাষণে মূল্যস্ফীতি নিয়েও কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণ সরকারি অতিরিক্ত ব্যয় এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি। প্রকৃত অর্থে চার দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ মাত্রায় উঠেছিল ২০২২ সালের গ্রীষ্মে। তখন তা ছিল ৯.১ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি কমতে কমতে গত ডিসেম্বরে ২.৯ শতাংশে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯২০ সালে, সেবার তা ২৩.৭ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।
ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি গ্রেপ্তার করে আবার ছেড়ে দেওয়ার নীতি বন্ধে একটি নির্বাহী আদেশ দেবেন। প্রকৃত পক্ষে এই ধরনের কোনও নীতি নেই। তবে ট্রাম্পসহ রিপাবলিকানরা বিভিন্ন সময় ডেমোক্রেট সরকারের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করতে গিয়ে এই শব্দ বন্ধটি ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনও নীতি না থাকায় ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে আসলে কী বন্ধ করতে চাইবেন, তা অস্পষ্ট।
অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ণের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভয়ঙ্কর সব অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। এদের অনেকে কারাগার কিংবা মানসিক হাসপাতালে ছিল, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছে। ট্রাম্প এই ধরনের কথা আগেও বলেছেন। তবে এর সপক্ষে কোনও প্রমাণ তিনি কখনও দেখাতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে, তবে তারা প্রায় সবাই বৈধভাবেই দেশটিতে গেছেন। আর অপরাধ সংঘটনের হার অভিবাসীদের চেয়ে আমেরিকার স্থায়ী নাগরিকদেরই বেশি বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে।
ভাষণে ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ার সাম্প্রতিক দাবানলে ক্ষয়-ক্ষতি দেখিয়ে বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দাবানল নিয়ে ট্রাম্প এর আগেও বিভিন্ন সময় ভুল তথ্য দিয়ে গেছেন অবলীলায়। তিনি এর আগে এটাও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আবহাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ খাটানো উচিৎ। দাবানল ঠেকাতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরকে রাজ্যের উত্তর অংশ থেকে পানি ছাড়তেও বলেছিলেন ট্রাম্প; যদিও বিশেষজ্ঞরা তা অকার্যকর বলে উড়িয়ে দেন।
ভাষণে খনিজ সম্পদ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, তেল-গ্যাসের মজুদ বিশ্বে যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রেরই বেশি। তবে তিনি এই তথ্যের পক্ষে কোনও পরিসংখ্যান হাজির করেননি। এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনস্টেশনের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের তেল উত্তোলন রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গত অক্টোবরে দাঁড়িয়েছিল ১৩.৪৬ মিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে,ওপেকের তথ্য অনুয়ায়ী- বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের মজুদ ভেনেজুয়েলা, সৌদি আরব ও ইরানের। আর প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদে বিশ্বে শীর্ষে রাশিয়া, ইরান ও কতার। (সংক্ষেপিত)।
অভিষেক ভাষণে ট্রাম্পের যত ভুল তথ্য

Leave a comment