তালা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটার একমাত্র সরকারি কবরস্থানটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলো থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে কবরগুলো ঢেকে ফেলা হয়েছে। চারিদিকে প্রাচির তৈরি করা হলেও এখন সেটি ভেঙে ইটগুলো লোকে নিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ দখলদাররাও বসে নেই। এসব দেখার কেউ আছে বলে কারো জানা নেই। এটি সংরক্ষণের জন্য কোনো কমিটিও করা হয়নি কখনো। ফলে অভিভাবকহীন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কবরস্থানটি।
সূত্র জানায়, প্রায় একশ’ বছর আগে থেকে সাধারণ গরিব অসহায় ছিন্নমূল মানুষ মারা গেলে পাটকেলঘাটা গরু হাটের উত্তর পাশে কবর দেওয়া হতো। একজন দু’জনের কবর হতে হতে এখানে হাজারো মানুষের কবর দেওয়া হয়েছে। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে উপার্জনের জন্য পাটকেলঘাটা বাজারে এসে অনেকে বসবাস করে। যাদের স্থায়ী কোনো কবরস্থান নেই। তাদের কেউ মারা গেলে এই কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে এটা সরকারি কবরস্থান নামে পরিচিত হয়ে যায়। প্রায় ৩ বিঘা জমির উপরে এটি গড়ে ওঠে। সেখানকার আশপাশে আগে কোনো জনবসতি ছিলো না।
স্থানীয় সরুলিয়া ইউনিয়ন তহশিলদার তারক নাথ মন্ডল জানায়, পাটকেলঘাটায় সরকারি কবরস্থানের নামে কোনো জায়গা আছে বলে আমার জানা নেই। ওখাকার দাগ-খতিয়ানের জায়গা সবটুকু রেকর্ডকৃত সম্পত্তি। আর যেখানে কবরস্থান আছে সেটা কোন ধরনের সম্পত্তি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না।
স্থানীয়রা জানান, তারা জন্ম থেকে এই জায়গাটি সরকারি কবরস্থান বলে জেনে আসছে। ছিন্নমূল কেউ মারা গেলে এখানে কবর দেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত সৈয়দ কামাল বখ্ত সাকি এমপি থাকাকালীন কবরস্থানটি সংরক্ষণের জন্য ২লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে তৎকালীন সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রয়াত মোবারক আলী সরদার প্রাচিরসহ একটি গেট নির্মাণ করেছিলেন। তবে যদি এ জায়গা কারো নামে রেকর্ড হয়ে থাকে তবে বাজারের উপর এত দামী সম্পত্তি তারা ছেড়ে দেবে কেনো। আর যদি ছেড়ে দেয় তাহলে কবরস্থান নামে লিখে দেয় না কেনো। জায়গাটি কবরস্থানের নামে বলেই সেটি সংরক্ষণের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাজার পরিচ্ছন্নকর্মী মুক্তার আলী সানা বলেন, আমি কবরস্থানটি অনেক বার পরিস্কার করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে আবার যাতা অবস্থা। বাজারের লোকজন বিশেষ করে পান হাটের লোকজন প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার রাতে কবরস্থান মধ্যে প্রশাব-পায়খানা করে।
কবর খননকারী আব্দুস সালাম বলেন, এলাকার মধ্যে যাদের জায়গা জমি নেই তাদেরকে এখানে কবর দেওয়া হয়। আমি ২০-৩০জনের কবর খুঁড়েছি। তবে কারো কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক নেইনা। তবে পাশ্ববর্তী লোকজন বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ফেলে ৩-৭ ফুট উঁচু স্তুপ করে ফেলেছে। ফলে কবর খুঁড়তে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। আবার একপাশে গভীর গর্তের সৃষ্টি করা হয়েছে। যেখানে কারো কবর দেওয়া যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ হোসেন বলেন, কবরস্থানে জায়গা আমরা কেউ দখল করে রাখিনি। কেউ যদি বলে সেটা তারা জানে না তাই বলছে। সরকারি যেটুকু জায়গায় কবরস্থান থাকার কথা সেটুকু প্রাচির দেওয়া আছে। আমরাতো মুসলমান। আমাদেরও মরতে হবে।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, স্থানীয় নাগরিকরা সচেতন হলে আমরা তাদেরকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কবরস্থানটি সংরক্ষণের জন্য কাজ করব। ভেঙে যাওয়া প্রাচির পুনঃনির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হবে। অবৈধ দখলদার যদি থেকে থাকে তাহলে এসিল্যান্ডকে দিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।
অরক্ষিত তালার পাটকেলঘাটা সরকারি কবরস্থান!

Leave a comment