জন্মভূমি ডেস্ক : ২০২১-২২ অর্থবছর বড় লোকসান গুনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে সে ঘাটতি পূরণে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেয়নি সরকার। এতে পিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বিল বকেয়া পড়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরের বকেয়া ভর্তুকি ২০২২-২৩ অর্থবছর ছাড় করে সরকার। আবার গত অর্থবছরের বকেয়া ভর্তুকির কিছু অংশ চলতি অর্থবছর ছাড় করা হয়েছে। এরপরও বকেয়া বেড়েই চলেছে পিডিবির।
বাধ্য হয়েই বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বকেয়া বিল বিশেষ বন্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোয় পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত বন্ডের মাধ্যমে ১৩ হাজার ৯১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এরপরও গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ও রেন্টার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া পড়েছে ১৭ হাজার ৪২০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে শীর্ষ ১৩টি গ্রুপ ও কোম্পানির কাছেই বকেয়া রয়েছে ১৪ হাজার ৬০৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে বাংলাদেশ-চীন যৌথ উদ্যোগে নির্মিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের। এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ কেন্দ্রটির বিল ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে দুই হাজার ৪০০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বকেয়ার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ কেন্দ্রটির বিল ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে দুই হাজার ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কয়লাভিত্তিক এ দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়াভিত্তিক সিডিসি গ্রুপ। এ গ্রুপের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৭৬০ মেগাওয়াট। এ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে এক হাজার ৯২৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানাধীন রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিসিএল) বিল বকেয়া পড়েছে এক হাজার ৭১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বেসরকারি সামিট গ্রুপের আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে এক হাজার ৬৭৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানার সেম্বকর্প-এনডব্লিউপিজিসির বকেয়া দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৩১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বেসরকারি খাতের অন্য কেন্দ্রগুলোর বকেয়া হাজার কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড গ্রুপের সাতটি কেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে ৭৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ভারতীয় নতুন বিদ্যুৎ কোম্পানির বিল বকেয়া পড়েছে ৭১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। কয়লাভিত্তিক বরিশাল ইলেকট্রিক কোম্পানির বিল বকেয়া পড়েছে ৬৬১ কোটি টাকা। আর ওরিয়ন গ্রুপের ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে ৫৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে।
অন্যান্য কোম্পানি ও গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া ৪০০ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে প্যারামাউন্ট গ্রুপের বকেয়া বিল রয়েছে ৩৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা, বি-আর পাওয়ারজেনের ৩০৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা ও ইয়ুথ গ্রুপের ৩০২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া বারাকা গ্রুপের বকেয়া বিল ২৬০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ইউনিক গ্রুপের ২৩৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, কেপিসিএলের ২২৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও কনফিডেন্স গ্রুপের ২১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ডরিন গ্রুপের বিল বকেয়া পড়েছে ১৭০ কোটি চার লাখ টাকা, হোসাফ গ্রুপের ১৬৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা, রিজেন্ট গ্রুপের ১৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যুক্তরাজ্যভিত্তিক এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনালের ১৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, দেশীয় সিনহা গ্রুপের ১২৭ কোটি ছয় লাখ ও বাংলাক্যাটের ১১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। শ্রীলঙ্কান লঙ্কা গ্রুপের বকেয়া বিল ৮৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ইপিভি গ্রুপের ৫২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, দেশ গ্রুপের ৫০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, ইনডেক্স গ্রুপের ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, নর্দান গ্রুপের ২৪ কোটি ৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ মালিকানার রামপালের ১৭ কোটি চার লাখ টাকা ও সিকদার গ্রুপের ১০ কোটি টাকা উল্লেখযোগ্য।
এদিকে বেসরকারি খাতের সৌরবিদ্যুতের ছয়টি কোম্পানির বকেয়া ৩১৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেক্সিমকোর বকেয়া ১৬৮ কোটি দুই লাখ টাকা, এইচডিএফসি সিন সোলারের ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, স্পেক্ট্রা সোলারের ৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও টেকনাফ সোলারের ২৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা উল্লেখযোগ্য।