জন্মভূমি রিপোর্ট
একাত্তরের ৩ মার্চ ছিল রক্তঝরা দিন। পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে। বিক্ষোভে উত্তাল ৩ মার্চে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রলীগের বিশাল জনসমাবেশ। এই সমাবেশ থেকেই স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অহিংস অসহযোগ আন্দোলন ও লাগাতার হরতালের ডাক দেন।
সামরিক আইন প্রত্যাহার করে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি। সব দাবি মেনে নিতে সামরিক জান্তাকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়ে তিনি ঘোষণা দেন ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করা হবে। ওই সমাবেশ থেকেই বঙ্গবন্ধু রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ জনসভার ঘোষণা দেন।
এ দিনে ঘোষিত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপরেখা। পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। বঙ্গবন্ধুকে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক মনোনীত করা হয় আজকের এ দিনেই।
স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত পল্টনের বিশাল সমাবেশ থেকে আসা এ ঘোষণার পরপরই ৭১-এর এই দিনে রাজধানী ঢাকা হয়ে ওঠে প্রতিরোধ আর সংগ্রামের নগরী।
পল্টন ময়দানের ওই সভায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা শাজাহান সিরাজ। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সমাবেশে ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখনসহ জাতীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
৩ মার্চ পূর্ব নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের বৈঠক বাতিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারাদেশে পালিত হয় অর্ধদিবস হরতাল। এই দিন আন্দোলনরত বাঙালিদের ওপর গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর গুলিতে চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারান অনেকেই। বর্বর এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোর রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার জনতা।
পল্টন ময়দানের এ জনসভায় পুনরায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই জনসভা থেকেই মূলত ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সর্বস্তরের জনতাকে উপস্থিত হওয়ার আহŸান জানানো হয়।
এদিন বিক্ষোভে ফেটে পড়া পূর্ব বাংলার জনগণকে দমন করতে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। এ বৈঠকের আহŸানের প্রেক্ষিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, এমন কতিপয় লোকের সঙ্গে আমাদের বৈঠকে বসার আহŸান জানানো হয়েছে, যাদের জঘন্য ও ঘৃণ্য চক্রান্তের কারণে নিরীহ, নিরস্ত্র চাষী, শ্রমিক ও ছাত্রকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি এ বৈঠককে ‘এক নিষ্ঠুর কৌতুক’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ ছাত্রনেতা ফারুক ইকবালের শাহাদাতবার্ষিকী। একাত্তরের এইদিনে ছাত্রনেতা ফারুক ইকবাল একটি প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে রামপুরাস্থ টিভি স্টেশনে যান। সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পুলিশ ও পাক সেনাদের গুলিতে নিহত হন তিনি। অকুতোভয় এ ছাত্রনেতার লাশ বহনকারী একটি বিশাল মিছিল ওই দিন পল্টনে আহূত জনসভায় যোগ দিলে সেখানে উপস্থিত জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।