মোঃ এজাজ আলী : ঝড়বৃষ্টি হলেই গ্রামের মানুষের মধ্যে বজ্রপাতের আতঙ্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে যারা মাঠেঘাটে কাজ করেন তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে আতঙ্ক উদ্বেগ। যখন তখন বজ্রপাত হতে পারে এবং আক্রান্ত হলে মাঠ থেকে ঘরে না ফিরতে পারেন এ ভীতিই তাদের মধ্যে কাজ করছে। আবার ঝড়বৃষ্টির সময় মাঠে যেতেই হয়, ক্ষেতমজুর-কৃষকদের গরে বসে থাকার সুযোগ নেই। গত মঙ্গলবার সারাদেশে একদিনে বজ্রপাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবারও মৃত্যুর ঘটনা গটেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে সারাদেশে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এককোটি তালগাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সারাদেশে ৩৮ লাখ চারা রোপণ করা হয়েছিল। কিন্তু সে প্রকল্প মাঠে মারা গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তালগাছ মরে গেছে। অথচ আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন প্রায়ই ঝড়বৃষ্টি চলতে থাকবে। ঝড়বৃষ্টি হলেই বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েই যায়। দেখা গেছে, এবারও ঝড়বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়েছে বজ্রপাত। প্রচন্ড তাপদাহের পর বৃষ্টি প্রশান্তি না এনে বজ্রপাতের আশংকা নিয়ে এসেছে। বৃষ্টি আর ঝড় হলে বজ্রপাতে মৃত্যু যেন অনিবার্য। ফিনল্যান্ড ভিত্তিক বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার তথ্যমতে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান তাতের ৭০ ভাগই কৃসক বা যারা খোলা মাঠে কাজ করেন। এছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শহরে বেশিরভাগ ভবনে বজ্রনিরোধক দন্ড থাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু তেমন হয় না। কিন্তু গ্রামে তা না থাকা ও বড় গাছপালা কমে গিয়ে খোলা মাঠের কারনে সেখানে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বেশি। তাদের কথা দেশের হাওড় এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারন সেখানকার ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ নেই। বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত আনার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গা পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। বৃক্ষহীন হাওড় এলাকার কৃষকদের শরীরই মাটি থেকে উঁচু থাকে। তাই বজ্রপাতের সময় মাঠে বা খোলা জায়গায় যেখানে উঁচু কোনো গাছ নেই বা বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা নেই, সেখানে যারা থাকেন তারা শিকার হন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে বাংলাদেশে বজ্রপাতে কমপক্ষে ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়। গত একযুগে তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন বজ্রপাতে। ২০২১ সালে মারা গেছে ৩৬৩ জন, ২০২০ সালে ২৩৬ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন এবং ২০১৫ সালে ১৬০ জন মারা গেছে। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেভ দ্যা সোসাইটি এন্ড্য থান্ডারস্ট্রম আ্যওয়ারনেস ফোরামের গবেষণা সেলের প্রধান াাব্দুল আলীমের মতে, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারন দুইটি। বৈশ্বিক উষতা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে উঁচু গাছ কেটে ফেলা। হাওড় অঞ্চলের মাঠে আগেও তেমন গাছ ছিল না। এখন অন্যান্য এলাকার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে মাঠে বা খোলা জায়গায় যেসব মানুষ থাকেন বজ্রপাতের এককিলোমিটোরের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহী উঁচু জিনিস হিসাবে সেই মানুষকেই পায়। মানুষ না থাকলে মাঠে গবাদি পশু, ফলে মানুষ ও গবাদি পশু দুটোই মারা যায়।