অভিজিৎ পাল
২৯ দিন পরে ফরিদপুর থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়ার পরে গত রোববার আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন রহিমা বেগম। তবে আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও উদ্ধারের পর পিবিআই’র কাছে দেওয়া বক্তব্যে মিল পাচ্ছে না পিবিআই। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ফরিদপুরে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরির চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। বান্দরবন থেকে ট্রেনে ঢাকায় আসার কথা বললেও এসেছেন বাসে। সেখানে একটি ভাতের হোটেলে ফরিদপুরের বাসিন্দা পরিচয়ে কাজও করেছেন তিনি।
অন্যদিকে খুলনায় নিরাপদ বোধ না করায় সোমবার মেয়ে মরিয়মের সাথে ঢাকায় গেছেন রহিমা বেগম। সোমবার দুপুরে পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ সাদিকে। পিবিআই থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে বললেও গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চানানি মিরাজ সাদিক।
মরিয়ম মান্নান বলেন, আমি আমার মাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছি। ওখানে নিরাপদ বোধ করছি না। তার মা আত্মগোপনে গেছেন বলছে গণমাধ্যম। কিন্তু তিনি মনে করেন তার মা অপহৃত হয়েছিলেন।
তিনি ময়মনসিংহে লাশ দেখে তার মা দাবি করার বিষয় নিয়েও বলেছেন। ২৬ থেকে ২৭ দিন মা হারিয়ে আমরা আসলে অনেক বেশি ভেঙ্গে পড়েছিলাম। এ কারণে আমাদের লাশের ছবি ও কাপড় দেখে মনে হয়েছিল যে সে আমাদের মা। অনেকে আমার পিছনে লেগেছেন। তাতে আমি ভয় পাই না। আমার তাদের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি আছে।
অন্যদিকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, মরিয়ম মান্নানের আদালতের জবানবন্দি ও পুলিশের কাছে দেওয়া বক্তব্যে রয়েছে অমিল।
পিবিআই খুলনার পুলিশ পরিদর্শক মো: আব্দুল মান্নান বলেন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ২ এর বিচারক আলআমিনের নিকট ২২ ধারায় রহিমা বেগম যে জবানবন্দি দিয়েছে তার সাথে কোন মিল নেই পিবিআই এর কাছে দেওয়া তার বক্তব্যের।
পিবিআই পুলিশ সুপার জানালেন আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য, ফরিদপুরের বোয়ালমারিতে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার চেষ্টা করে রহিমা বেগম। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় উনি ট্রেনে যাওয়ার কথা বললেও মূলত উনি এসেছেন বাসে। বান্দরবনে একটি ভাতের হোটেলে কাজ নেয় সে, সেখানে পরিচয় দেন তার দেশের বাড়ি ফরিদপুর।
পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার, সৈয়দ মুশাররফ হোসেন বলেন, রহিমা বেগম বান্দরবনে মনিরা নামে এক ব্যক্তির ভাতের হোটেলে কাজ নেন। সেখানে সে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। সেখানে সে ফরিদপুরের বাসিন্দা, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে পরিচয় দিয়েছিলেন। ফরিদপুরে আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে থাকার সময় তিনি ওখানকার চেয়ারম্যানের নিকট জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্য কথাও বলেছিলেন। সেখানে তিনি পরিচয় দেন তিনি ফরিদপুরের বাসিন্দা পরিচয় দিলেও বড় হয়েছেন বাগেরহাটে বলে জানান।
পিবিআই মনিরা বেগম ও ফরিদপুরের চেয়ারম্যানের সাথেও কথা বলেছে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ রহিমা বেগম কি করেছেন তা ইতিমধ্যেই বের করে ফেলেছে পিবিআই তাদের তদন্তে। এখন চেষ্টা চলছে ২৭ আগস্ট থেকে ১২ সেপ্টেম্বরের ঘটনা উদ্ধারে চলছে তদন্ত।
উল্লেখ্য ২৭ আগষ্ট খুলনার মহেষ¦রপাশা থেকে রহিমা বেগম অপহরণ হয়েছে বলে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন তার ছোট মেয়ে আদুরী আকতার। এর ২৮ দিন পর দৌলতপুর থানা পুলিশ ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করে রহিমা বেগমকে। এই মামলায় গ্রেফতারও হয়েছেন ৬ জন। তার আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে অজ্ঞাত এক লাশের ছবি ও পোশাক দেখে নিজের মা বলে দাবি করেন রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান।
আদালতের জবানবন্দি ও পুলিশের কাছে দেওয়া বক্তব্যে মিল পাচ্ছে না পিবিআই
Leave a comment