জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেছেন, আওয়ামী লীগের মতো দল মাস শেষ হয়ে গেল, একটা নেতাকর্মী অফিস তো দূরের কথা, একটা মুরগিরও ক্ষোভ পেল না। আওয়ামী লীগের রাজনীতিটাই শত্রু আর ষরযন্ত্র। আমরা যখনই যা কিছু করতা তা ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হতো। রাজনতির যে মূলমন্ত্র সেগুলো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করতো না। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন আন্দালিভ রহমান পার্থ।
তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে ফেরা খুবই ডিফিকাল্ট ফর আওয়ামী লীগ, পলিটিকালি ভাবনায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কোনও কমিটমেন্ট নেই, কমিটমেন্ট ছিল পাওয়ারের উপরের, কমিটমেন্ট ছিল শুধুমাত্র অর্থের উপরই। আওয়ামী লীগের যে সাম দাম দণ্ড রাজনীতি বন্ধ করে সেগুলো বিশ্বাস করত না। সলিমুল্লাহ স্যার বলেছেন যে আওয়ামী লীগ কোনও দিন ফিরে না আসলে, উনার লেখা পড়াই বৃথা। নানক সাহেব রহমান, দীপু মনি যারা আছেন তাদের কারোই গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে নাই।’
অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কি, তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা কতটুকু আর ফিরে আসলেও নেতৃত্বে কারা থাকতে পারেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী পরিবারের সদস্য না। আওয়ামী লীগ আমার আত্মীয়, আমার পরিবার, আমার, আমার ফ্যামিলি আমার বাবার সাইট আলাদা। কারণ, ভবিষ্যদ্বাণী তো আমরা করতে পারি না। আমরা পলিটিশিয়ান আমরা এনালাইসিস করতে পারি। আমাদের এক্সপেরিয়েন্স থেকে আমরা ক্যালকুলেশন করতে পারি। ভবিষ্যৎ তো আল্লাহর হাতে, এটা আমরা জানি না। আমি মনে করি এই প্রশ্নটা আজকে আওয়ামী লীগের যতো লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী বা তাদের যারা ভোটার আছেন প্রতিদিনই তারাই চিন্তা করেন এবং নিজেদের মধ্যে তারা আলাপ করেন।’
আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘কিছু কম্পারেটিভ স্টাডিতে দেখুন, আপনার বাড়ির পাশে মাঠ থাকলে কিন্তু আপনি ম্যারাডোনা হবে না। আপনার এখানে অনুশীলনের ব্যাপার আছে। রাজনীতি মাত্র প্র্যাক্টিস। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যখন ৭৫ এর পরে ৮১ সালে দেশে ফিরে আসে, তখন কিন্তু একটা সিকান্দরের অ্যাকসেপটেবল পলিটিশিয়ান ছিল। রাজ্জাক সাহেব ছিলেন, আমির হোসেন আমু সাহেব ছিলেন, তোফায়েল আহমেদ ছিলেন, আব্দুস ছামাদ আজাদ ছিলেন, জিল্লুর রহমান ছিলেন, তাজউদ্দীন সহ আরও অনেকে ছিলেন। একটা বড় টিম ছিল, যে যার কারণে উনি ফিরে আসার পর উনাকে পলিটিকাল গাইডলাইন পলিটিকাল গাইড্যান্স এই জিনিসগুলি দেওয়া সম্ভব ছিল এবং যার কারণে একটা বড়ভাবে এত বড় একটা ক্রাইসিস ৭৫ এর ১৫ অগস্টের পরে উনারা কিন্তু কামব্যাক করেছেন রাজনীতিতে এবং ভালোভাবে কামব্যাক করেছেন। এই ট্রেনিংটা জায়গাটা আজকে জিরো। গত ছয় সাত বছরে আওয়ামী লীগের দ্বি পলিটিসাইজড হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ পলিটিক্স বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের ওই নেতা এক সেকেন্ডে কেউ আর জনগণের কাছে অ্যাকসেপ্টেড কেউ আসেনি। এখানে সব নেতাদের সভানেত্রী নিজে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন যে আমি ছাড়া সবাইকে কেনা যায়। তার মানে বেসিকালি সবাই চোর। আর এখানে আওয়ামী লিগের একটা স্টাইল ছিল যে একজন ব্যক্তিকে আলোকিত করা হত। হঠাৎ রাজনীতিতে এ রকম হয়ে গেছে যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ছিলেন একটি সিটে। আর বাকি সব ঝাড় বাতি, ইলেকট্রিসিটি নেই কেউই নেই। এভাবে কোনওদিন একটা রাজনৈতিক দল কিন্তু চলতে পারে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যদি সেকেন্ডের পলিটিশিয়ান হন। যেমন আজকে কি হচ্ছে, এরশাদ সাহেবের পতনের পরে তার কিছুদিনের মধ্যেই কিন্তু মিজান চৌধুরী অফিস খুলে বসেছিল। ওয়ান ইলেভেনের সময় খোন্দকার দেলোয়ার সেই ন্যাম ভবনে অফিস খুলে বসে এবং জিল্লুর রহমান সাহেব অফিস খুলে বসে। তো আজকে আওয়ামী লীগের মতো একটা দল সাড়ে চার মাস শেষ হয়ে গেল। একটা নেতাকর্মী অফিস তো দূরের কথা, একটা মুরগির খোপ পেল না। যেখান থেকে দাঁড়িয়ে বলবে আসেন নেতাকর্মীরা ভালো থাকেন, এটা থাকেন ওটা থাকেন নাই। ওবায়দুল কাদেরের মতো মানুষ যারা আছেন এখন তো অনলাইন আছে অনেক কিছু করা যেতে পারে। মাঠ পর্যায়ে যারা নেতা আছেন উনারাও চিন্তা করে আমরা কার জন্য করব।’
পার্থ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের একটা ছেলে মনে করে আমরা করব, বেনিফিট পাবে শামীম ওসমান। কসবার কেউ চিন্তা করে আমরা করব বেনিফিট পাবেন নন পলিটিক্যাল আনিসুল হক। নওয়াবগঞ্জের কেউ চিন্তা করে আমরা করব বেনিফিট পাবে দরবেশ। তো আমর করে লাভ হবে কি? আলটিমেটলি কেউ না কেউ উপর থেকে চলে আসবে হাইব্রিড এবং তারাই করবে। নিচের যারা কর্মীরা আছে তারা চিন্তা করে যে এই যে আজিজ খানের দায়দায়িত্ব, দরবেশের দায়দায়িত্ব, নজরুলের দায়দায়িত্ব লক্ষ কোটি টাকা করাপশন এই হত্যার দায়িত্ব আমরা নেব কেন? কার জন্য, কীসের জন্য নেব? সুতরাং বিশ্বাসের জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভালো মানুষ যারা রাজনীতি করে বা করতো তারা চিন্তা করছে আমরা কার জন্য রাজনীতি করব। আওয়ামী লিগের সেকেন্ড বয় এবং সেকেন্ড ৩০ আর যারা আছে নানক সাহেব, রহমান সাহেব, দীপু মনি যারা আছেন তাদের কারোই গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে নাই। আপনি সূর্য হন, চাঁদ হন কিন্তু আপনার রাজনীতিতে ধারা রাখতে হবে আশেপাশে। না হলে কিন্তু আপনি টিকবেন না পলিটিক্সে। আমার মনে হয় এই কারণে সলিমুল্লাহ স্যার যেভাবে বলেছেন যে আওয়ামী লীগ কোনওদিন ফিরে আসলে ওনার লেখাপড়ায় বৃথা, আমি অত কড়াভাবে বলব না। কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে দেখি এটা খুবই ডিফিকাল্ট ফর আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক সময় লাগবে এবং যখন আওয়ামী লীগ অনুশোচনা করে আবার শুরু করবে অথবা নেতৃত্ব পরিবর্তনের চিন্তা করবে, না ঠিক আছে যা হয়েছে হয়েছে, আমরা এভাবে করি, আমরা করি। আমার কথা হল আওয়ামী লীগ যদি এখনই সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে, গণ অভ্যুত্থানকে চ্যালেঞ্জ করে, প্রতিটা মানুষের আত্মত্যাগকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বলে এগুলো ষরযন্ত্র, এগুলো শত্রু। আওয়ামী লীগের রাজনীতিটাই শত্রু আর ষরযন্ত্র। আমরা যখনই যা কিছু করতা তা ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হতো। রাজনতির যে মূলমন্ত্র সেগুলো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করতো না।’
আ.লীগের ফেরা খুবই কঠিন, তাদের রাজনীতিটাই শত্রু-ষড়যন্ত্র: পার্থ

Leave a comment