
এম সাইফুল ইসলাম
খুলনা ইপিআর সদস্য আঃ হক। একাত্তর সালে ইপিআরে চাকুরি করতেন। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। এ অভিযোগে তাকে ডিউটিরত অবস্থায় গুলি করা হয়। শহীদ হন এ মুক্তিযোদ্ধা।
নগরীর খালিশপুরে বাস করতেন মুক্তিযোদ্ধা আঃ হক। তার বাবার নাম, ইদ্রিস মোক্তার। শহীদ হওয়ার পূর্বে রেখে যান ৩ জন ছেলে ও মেয়ে। বড় ছেলে ছিল আঃ কাদেরের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। তিনি বর্তমানে নগরীর খালিশপুরে বসবাস করেন।
জানা যায়, একাত্তরের ২৬শে মার্চ খুলনার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা বাঙালি তরুণ-যুবাদের বাধার মুখে পড়ে। ওই দিন রাতে ছয়-সাতজনের একটি দল খুলনা সার্কিট হাউস ও ইউনাইটেড ক্লাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর হামলা চালায়। দুর্বল ওই আক্রমণের পর হানাদার বাহিনী ধরপাকড়ের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তরুণ-যুবাদের তারা গণহারে গ্রেপ্তার শুরু করে। এ সময় মুক্তিকামি বাঙ্গালিদের নানা ভাবে সহযোগিতা করেন স্থানীয়রা। বাদ যান না সদস্য পুলিশ, ইপিআর সহ প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনির সদস্যরা। একইভাবে ইপিআর সদস্য শহীদ আঃ হকও মুক্তিকামি যোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। বিষয়টি টের পেলে পাক হানাদাররা ডিউটিরত অবস্থায়ই তাকে রূপসা ক্যাম্পে গুলি করে হত্যা করে।
প্রতিদিনের মতো একাত্তরের ৩১ জুলাই রুপসা ইপিআর ক্যাম্পে কর্মস্থলে পৌছলে তাকে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করে। ঘটনাস্থল ইপিআর ক্যাম্প হওয়ায় তখন আর তার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বড় ছেলে আঃ কাদের বলেন, বাবা মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের হাতে শহীদ হন। যদি তার লাশ পাওয়া যেত তাহলে ন্যূনতম কবর জিয়ারত করে মনে শান্তি পাইতাম, এখন সেটাও সম্ভব নয়। পৃথিবীর প্রতিটি স্বাধীন জাতির অভ্যুদয়ের বা স্বাধীনতা অর্জনের একেকটি ইতিহাস আছে। প্রতিটি স্বাধীন জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে বহু প্রাণের বিনিময়ে। তাই বাবার শহীদ হওয়া নিয়ে আমার কোন কষ্ট নেই।
মুক্তিযোদ্ধা গবেষক আবু জাফর বলেন, শহীদ আঃ হক মুক্তিকামি যোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। যা টের পেয়ে পা হানাদাররা রূপসা ক্যাম্পেই তাকে গুলি করে হত্যা করে। তবে এটা ইপিআর ক্যামেই হওয়ায় তার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।