মিলের গাড়ি স্ত্রীর অফিস বাহন
রান্না হয় বৈদ্যুতিক হিটারে
মিলজুড়ে গরু ছাগলের খোয়াড়
এম সাইফুল ইসলাম
খুলনা ইস্টার্ণজুট মিল। যেখানে চলতি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের সিসি ক্যামেরার বিল দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এছাড়া মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ২০২১ সালের মার্চ মাসের বেতন ও অত্যবশকীয় ব্যায় নির্বাহের জন্য ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হিসাব দেখিয়েছেন। আইনজীবিদের বিল ২ লাখ টাকা, জ্বালানী খরচ ৩০ হাজার টাকা । অন্যদিকে একটি নরমাল কম্পিউটারের কি বোর্ড মূল্য দেখানো হয়েছে ১৫শত টাকা, একটি এন্টিভাইরাস ডিস্কের দাম দেখানো হয়েছে ১ হাজার টাকা, একটি নরমাল মাউসের মূল্য ১ হাজার টাকা। বাজার মূল্য যাচাইবাছাই করে দেখা যায় এসব খাতের খরচের হিসাব অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে।
বিজেএমসি’র যে কয়েকটি রাষ্টায়াত্ব পাট কল রয়েছে তার মধ্যে খুলনা জোনের ইষ্টার্ণজুট মিল অন্যতম। মিলের সৃষ্টির ইতিহাস বলে দেয় এই জুট মিলের ইতিকথা। মিলের অভ্যান্তরে সাজানো গোছাল ফুলের শোভা আর রাশি রাশি সৌন্দয্য বর্ধমান গাছের সমাহার ছিল। মুহমুহ ফুলের গন্ধে একটি কর্মময় পরিবেশ ছিল গোটা মিলজুড়ে। এখন সে মিলে গরু বাছুরের বিচরন, মিলের অভ্যান্তরে প্রবেশ করলে গরু ছাগলের মলমূত্রের গন্ধে থাকা যায় না এক মুহুর্ত।
ইস্টার্ণ জুট মিলের বর্তমান চিত্র যেন একটি গো-খামার। মিলের নিরাপত্তা প্রহরীদের দিয়ে গরু বাছুরের পরিচর্যাসহ মলমূত্র পরিস্কার করার অভিযোগ রয়েছে বর্তমান প্রকল্প প্রধানের ড. জিএএম মাহাবুবুর রশীদ জুলফিককার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে তার সরকারি গাড়িটি ব্যবহার হয় তাঁর স্ত্রীর অফিসে যাতায়াতের জন্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনার নূরনগর বয়রায় অবস্থিত জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে প্রতিদিনই মিলের গাড়িতে চড়ে সরকারি তেল খরচ করে যাতায়াত করেন প্রকল্প প্রধানের স্ত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারি জানান, অবৈধ সংযোগ দিয়ে এই হিটারে রান্না হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন। এছাড়া আবাসিক বাসভবনে হিটার ব্যবহার করা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ থাকলেও বহুল তবিয়তে হিটারে চুলা ব্যবহার করে আসছে প্রকল্প প্রধান নিজেই। মিল অভ্যান্তরে প্রকল্প প্রধানের বাসভবনে প্রতিদিনই রান্না হয় বৈদ্যুতিক হিটারের চুলায়।
মিলের নিরাপত্তা বিভাগের বর্তমান দায়িত্বরত জোমাদ্দার শাহাদাৎ হোসেনকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে জোমাদ্দার বানিয়েছেন প্রকল্প প্রধান এমন অভিযোগ এখানকার নিরাপত্তা কর্মীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মী জানান, শাহাদাৎ হোসেন মিলের প্রকল্প প্রধান জুলফিককারের খাস লোক। এমনকি প্রকল্প প্রধানের গুরু বাছুর ধোয়া মুছা সহ কবুতার পালন ও হাটবাজারে কবুতর বিক্রি করেন শাহাদাৎ । ফলে একটু বিশেষ খাতির পেয়ে থাকেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তা কর্মী শাহাদাৎ হোসেন বর্তমান মিলের অ-ঘোষিত সেকেন্ড ডিজিএম। তার দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছে মিলের নিরাপত্তা প্রহরী থেকে শুরু করে বড় বড় কর্মকর্তারা।
নিরাপত্তা বিভাগের জোমাদ্দার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, যখন মালি না থাকে, তখন গরু তো নিরাপত্তা প্রহরীরাই বের করে। গরু ছাগলরে বিষয় নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নাই। জোনাল অফিসের জিএম যিনি, তাঁর অফিসেও গরু ছাগল গার্ডরা দেখাশোনা করে থাকে। এতে অপরাধ কি!।
সাবেক সিবিএ নেতা ইউসুফ আলী গাজী বলেন, প্রকল্প প্রধান যা ইচ্ছা তাই মিলে করে যাচ্ছে। মিলে এখন তাকে বাধা দেওয়ার কেউ নাই।
ইস্টার্ণ জুট মিলের প্রকল্প প্রধান ড. জিএএম মাহাবুবুর রশীদ জুলফিককার এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিজেএমসি’র অনুমতি ব্যাতিত আমি কোন মন্তব্য দিব না।
বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, তার ব্যাপারে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি । মিলের গাড়ি অন্য কেউ তাঁর ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। এছাড়া মিলের অভ্যান্তরে গরু বাছুর পালনে নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে কোন কাজ করানো যাবে না।