জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার একটি বড় কারণ হিসেবে চাঁদাবাজির কথা বলছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আগে যারা চাঁদাবাজি করতো তাদের পাশাপাশি রাজনীতিতে যারা জায়গা দখলের চেষ্টায় আছে তাদের লোকজন চাঁদাবাজি করছে এবং স্থানীয় পর্যায়ের অন্যান্য চাঁদাবাজরাও সক্রিয় আছে। নির্বাচিত সরকার আসার আগে এটার পুরোপুরি সমাধান কঠিন বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির।
গত ছয় মাসে একটি বড় ইস্যু বারবার সামনে এসেছে, তা হলো মূল্যস্ফীতি। গত তিন মাসেও মূল্যস্ফীতি ১০ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি আপনারা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না কেন? প্রশ্নর জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতি এখানে লিগ্যাসি প্রবলেম। গত দুই-তিন বছরে ধরে মূল্যস্ফীতির এই রকম অবস্থা হয় নাই। দেয়ার আর লট অব মানি প্রিন্টটেন্ড, লট অব মানি ফ্লটিং অ্যারাউন্ড (প্রচুর আয়-উপার্জন হয়েছে, অনেকে টাকা উড়ে বেড়িয়েছে)। দ্য বিগ মেগা প্রজেক্টস, কোটি কোটি টাকার মেগা প্রজেক্টস। মেগা প্রজেক্টর সমস্যা হলো, রিটার্ন আর আউটপুট দ্রুত আসে না। ব্রিজ হলো, সরবরাহ চেইনে তো দ্রুত কোনো প্রভাব নাই। অ্যাট দ্য সেম টাইম, রেমিট্যান্স অনেকটা কমে গেল। এর ফলে মূল্যস্ফীতি আমরা একেবারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই, তা না। কিছুটা করেছি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি একটু বেড়েছে। কিন্তু নন-ফুডে আবার কিছুটা কমেছে। সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। আমরা সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব। সাপ্লাই চেইন ইজ ব্রোকেন। আর অনেক মিডল ম্যান। মহাস্থানগড় থেকে একটি ট্রাক ঢাকায় আসবে। পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া পড়ে ১২ হাজার টাকা। চাঁদাবাজি তো কমে নাই।
চাঁদাবাজি কমানোর দায়িত্ব তো আপনাদের মাঝেই পড়ে। এমন ইঙ্গিতবাহী প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এর আগে যেমন চাঁদাবাজি কম হতো। কারণ রাজনৈতিক সরকারের সুবিধা হলো, তার পলিটিক্যাল আর্মস ছিল। আমাদের তো সেরকম নাই। ইউ নো দ্য লিমিটিশেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, একজন দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। চাঁদাবাজিতে এখন তিনটি বড় দল জড়িত। এক, আগে যারা ছিল তারাও আছে (আওয়ামী লীগের); দুই, যারা এখন পলিটিক্যালি ইমার্জিং মাঠ পর্যায়ে আছে তারাও চাঁদাবাজি করছে; তিন, স্থানীয় জনগণ। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছে।
আপনি যেটি বলছিলেন, পুলিশ দিয়ে চাঁদাবাজির ইস্যুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছিলেন, রাজনৈতিক দল আসার আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসবে না? বা রাজনৈতিক দল কেন এটি নিয়ন্ত্রণে আনবে? অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলের তো ভোটের দিকে নজর থাকে। তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। বড় রাজনৈতিক দল যাদের একেবারে মাঠ পর্যায়ে কর্মী আছে, তাদের তো নিয়ন্ত্রণ করা এখন অন্তবর্তী সরকারের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়ছে। যে সমস্যাটার কথা বলছেন, এটা কি নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত সমাধান হবে না? অর্থ উপদেষ্টা: আমরা চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, জুনের মধ্যে মুল্যস্ফীতি ৮ এর নিচে নিয়ে আসতে পারবো। একেবারে পাঁচ-ছয়-চারে চলে যাওয়া অসম্ভব। পাঁচ তো আদর্শিক অবস্থান। (সংক্ষেপিত)
উচ্চ মূল্যস্ফীতির বড় কারণ চাঁদাবাজি: বিবিসিকে অর্থ উপদেষ্টা

Leave a comment