By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: উপকূলে নারীদের কষ্টে গাঁথা ‍জীবন
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > উপকূলে নারীদের কষ্টে গাঁথা ‍জীবন
সাতক্ষীরা

উপকূলে নারীদের কষ্টে গাঁথা ‍জীবন

Last updated: 2025/12/19 at 2:38 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 3 days ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :  উপকূলের নারীদের কষ্টে ‌গাথা জীবন। লবণাক্ততার কারণে শরীরে নানান রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পরেও বসে নাই‌।রাজিলের বেলেম শহরে হয়ে গেল ‌কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলন। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন আর্থিক ক্ষতিপূরণ। পাশাপাশি দরকার বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের লাগাম টেনে ধরা। কিন্তু এ দুটো বিষয় নিয়ে বিশ্বনেতারা এখনো একমত হতে পারেননি।
অথচ ধনী দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে উন্নয়নের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট। এর প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে নারীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রাণ হারানো, মিঠাপানির কষ্ট, স্বাস্থ্য সমস্যা, পারিবারিক সহিংসতাসহ নানা রকম সংকটে কাটছে নারীদের জীবন। এর ভুক্তভোগী হচ্ছে শিশুরাও।
উপকূলীয় এলাকায় গেলে দেখা যায়, বৃষ্টি নামলে নারীদের চোখ খুশিতে চকচক করে ওঠে। তবে বৃষ্টিবিলাসের জন্য নয়। প্লাস্টিকের ট্যাংক, মাটির বড় পাত্র বা মটকা, প্লাস্টিকের নানা আকারের বোতলে বৃষ্টির পানি বা মিষ্টি পানি ভরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। এ পানিই সারা বছর পরিবারের সদস্যদের মুখে তুলে দেওয়ার প্রাথমিক দায় নারীরই।
বাগেরহাট ও খুলনার উপকূলীয় এলাকার নারীরা নানান রোগব্যাধিতে ভোগেন। ভুক্তভোগী নারীরা জানান, রোগব্যাধি আমলে নেওয়ার ফুরসত তেমন নেই। সংসারের নানা কাজসহ খাওয়া ও রান্নার পানির জোগান ঠিক রাখতেই দিনের বেশির ভাগ সময় চলে যায়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২০২১ সালে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য কালো রঙের একটি প্লাস্টিকের ট্যাংক বসেছে রুশিয়া বেগমের উঠানে। তিনি বাগেরহাটের মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের বাসিন্দা। ট্যাংকের সঙ্গে লাগানো ট্যাপ থেকে জগে পানি ভরে দেখালেন রুশিয়া বেগম। কিন্তু এই পানি এখন খাবে কে? অপচয় যাতে না হয়, তাই নিজেই মুখে ঢেলে খেলেন। হেসে বললেন, ‘মিষ্টি পানি তো নষ্ট করন যাইব না।’
রুশিয়া বেগমের ট্যাংকের পাশেই আরেকটি কালো রঙের ট্যাংক। জানালেন, ছেলের বউয়ের সঙ্গে পানি নিয়ে ঝগড়া হওয়ায় ছেলের শ্বশুর ট্যাংকটি কিনে দিয়েছেন। কিন্তু ১৪ সদস্যের বড় পরিবারের জন্য এটুকু পানি যথেষ্ট নয়। পুকুর থেকে পানি আনতে প্রায় আধ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই তাঁকে ঘরের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন পাত্রে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখতে হয়।
এক বছরের বেশি সময় আগে রুশিয়া বেগমের জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে। এক ছেলে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে ৭০ হাজার টাকায় মায়ের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। তবে এত খরচ হওয়ায় গালমন্দও শুনতে হয় রুশিয়া বেগমকে। স্বামী রফিকুল ইসলাম জাহাজের ডকের শ্রমিক ছিলেন। দুর্ঘটনায় পা অচল হয়ে গেছে।
২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর দক্ষিণ উপকূলের বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায় দেখা দেয় সুপেয় ও নিরাপদ পানির তীব্র সংকট। এ ছাড়া আয়রন, আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডও পাওয়া যায় এসব এলাকার পানিতে।
শুধু রুশিয়া বেগম নন, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনার উপকূলীয় এলাকার নারীরা নানান রোগব্যাধিতে ভোগেন। এ বছরের ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিবেদক ওই এলাকা ঘুরে দেখেন। ভুক্তভোগী নারীরা জানান, রোগব্যাধি আমলে নেওয়ার ফুরসত তেমন নেই। সংসারের নানা কাজসহ খাওয়া ও রান্নার পানির জোগান ঠিক রাখতেই দিনের বেশির ভাগ সময় চলে যায়।
২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর দক্ষিণ উপকূলের বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায় দেখা দেয় সুপেয় ও নিরাপদ পানির তীব্র সংকট। এ ছাড়া আয়রন, আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডও পাওয়া যায় এসব এলাকার পানিতে।
গত বছর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বৃষ্টির সময়ের ব্যাপ্তি কমে আসতে পারে। কম সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি হতে পারে। রুশিয়া বেগম অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারছেন, বৃষ্টির মতিগতি আগের মতো নেই। এলাকার পানিও দিন দিন আগের চেয়ে যেন বেশি লোনা হচ্ছে।
প্রতি লিটারে ১ হাজার মিলিগ্রাম লবণের মাত্রা হলো সহনীয় বা খাবারের উপযোগী। বাগেরহাটের অনেক উপজেলায় প্রতি লিটারে ৩ হাজার মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। লবণের মাত্রা বেশি বলে মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া, চিতলমারী ও রামপালের কিছু অংশে গভীর নলকূপ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক পাঁচ গ্রাম লবণ গ্রহণ করার কথা বলছে। অথচ উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে দুই লিটার খাওয়ার পানির মাধ্যমে ১৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে। ঘরে মিষ্টি পানি থাকলে নারী নিজে না খেয়ে তা স্বামী ও সন্তানদের খেতে দেন। রান্না, মাসিকের সময় ব্যবহৃত কাপড় পরিষ্কার থেকে শুরু করে সব কাজে নারীদের লোনাপানির সঙ্গেই নিত্য বসবাস।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক এই ‌বলেন, প্রতি লিটারে ১ হাজার মিলিগ্রাম লবণের মাত্রা হলো সহনীয় বা খাবারের উপযোগী। বাগেরহাটের অনেক উপজেলায় প্রতি লিটারে ৩ হাজার মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। লবণের মাত্রা বেশি বলে মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া, চিতলমারী ও রামপালের কিছু অংশে গভীর নলকূপ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
গত বছর বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় অন্য একটি গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, উপকূলের যে নারীরা ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে থাকেন, তাঁদের গর্ভপাতের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বেশি হয়। এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত এবং গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পৃক্ত।
একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় মোংলার কুসুম হালদারের বাড়ি। এভাবেই জীবন কাটছে তাঁদের।
গত বছরের জুনে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’ শিরোনামের প্রতিবেদন বলছে, বাইরে থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহে খুলনা বিভাগের ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ পরিবারের ৩০ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। উন্নত উৎস থেকে পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে লবণাক্ততা একটি সমস্যা হতে পারে। দেশের বিভাগগুলোর মধ্যে খুলনা বিভাগে নবজাতক মৃত্যুর হার (প্রতি হাজারে ২১.৭৯ জন) সব থেকে বেশি। বাল্যবিবাহের হার বেশি এমন পরিসংখ্যানে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে খুলনা।
খুলনার বটিয়াঘাটায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, লবণসহিষ্ণু ফলনের জন্য পানিতে ৩ ডিএস/মিটার আর অন্য ফসলের বেলায় ১ ডিএস/মিটার হলো লবণের আদর্শ পরিমাপ। অথচ এপ্রিল-মে মাসে পানিতে লবণের মাত্রা ৩৫ ডিএস/মিটার হয়। তখন সেচের জন্য এ পানি ব্যবহার করলে ফসল মরে যায়। অথচ এ পানিই নারীদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম জরায়ুর সমস্যা। মোংলা উপজেলার বেশ কয়েকজন নারী এ সমস্যার কথা জানান।
গত বছর বিশ্বব্যাংকের ‘অ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণায় ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জরিপে দুই ধাপে ১৬ হাজারের বেশি মানুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এতে অন্য একটি গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উপকূলের যে নারীরা ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে থাকেন, তাঁদের গর্ভপাতের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বেশি হয়। এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত এবং গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পৃক্ত।
উপকূলে বাল্যবিবাহ ও কিশোরী মাতৃত্ব হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম জরায়ুর সমস্যা। মোংলা উপজেলার বেশ কয়েকজন নারী এ সমস্যার কথা জানান।
দক্ষিণ কানাইমারীতে রুথ সরকার জানান, তাঁর জরায়ু প্রায় বের হয়ে গিয়েছিল। পরে চিকিৎসক তিন বছর আগে জরায়ু কেটে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর এক বোনেরও জরায়ুতে সমস্যা, তবে টাকার অভাবে তিনি অস্ত্রোপচার করাতে পারছেন না।
কানাইনগরের রিমা আক্তারের মাত্র সাড়ে ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। ৩০ বছর বয়সী রিমার একমাত্র সন্তানের বয়স ১৩ বছর। তিন বছর‘ আগে রিমার জরায়ুতে সিস্ট ধরা পড়ে। পরে অস্ত্রোপচার করা হয়, তবে জরায়ু কেটে ফেলতে হয়নি। রিমা শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক জটিলতার কথা জানান।
মোংলার রুশিয়া বেগমের জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে। এখনো শারীরিক যন্ত্রণা বয়ে চলেছেন তিনি
১ নম্বর চাঁদপাই ইউনিয়নের কুসুম হালদারের বাড়িটি প্রায় পানিতে তলিয়ে গেছে। জরায়ুতে কোনো সমস্যা আছে কি না, জানতে চাইলে লজ্জা পান। তবে পরে অবশ্য বললেন, ‘২০০৮ সালে জরায়ু কাইট্যা ফালাইছে।’
হলদিবুনিয়ার ৪৫ বছর বয়সী শংকরী রায়কে বাবার বাড়িতেও পানি টেনে আনতে হতো। ২০০২ সালে বিয়ের পরও এ কাজ করতে হচ্ছে। দুই বছর হলো বাড়িতে ব্র্যাকের একটি পানির ট্যাংক বসেছে। শাশুড়ির বয়স ৭৫ বছর। আর একমাত্র মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায় কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
বাস্তব অভিজ্ঞতায় বলা যায়, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানির সঙ্গে নারীর বিভিন্ন রোগের সম্পর্ক আছে। হাসপাতালে জরায়ুসংক্রান্ত সমস্যায় ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ভায়া টেস্ট করা হচ্ছে।
শংকরী রায় জানালেন, তাঁর জরায়ু নিচের দিকে নেমে গেছে বহু বছর হলো। ভারী জিনিস তুলতে পারেন না। তবে পানি আনাসহ সংসারের অন্যান্য কাজ করতেই হয়। ১০ লিটারের কলসিতে পানি টেনে আনার পর আর দম থাকে না। বললেন, উপকূলে ঝড়ঝাপটা লেগেই থাকে। পরিবারে বয়স্ক মানুষ আর প্রতিবন্ধী কেউ থাকলে সংগ্রামের মাত্রাটা বাড়ে। তখন জান নিয়েই টানাটানি। সেখানে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করার ফুরসত কমই পাওয়া যায়।
তবে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) এবং সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষ স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতন হচ্ছে উল্লেখ করে শংকরী বলেন, কষ্ট হলেও মাসিকের সময় মেয়েকে স্যানিটারি প্যাড কিনে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মোংলা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহিন বলেন, বাস্তব অভিজ্ঞতায় বলা যায়, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানির সঙ্গে নারীর বিভিন্ন রোগের সম্পর্ক আছে। হাসপাতালে জরায়ুসংক্রান্ত সমস্যায় ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ভায়া টেস্ট করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ শাহিন জানান, এ পরীক্ষায় ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকি আছে এমন রোগী পাওয়া যায় ৯৫ জন। উপজেলা পর্যায়ে গাইনি কনসালট্যান্ট নেই। এ জন্য জরায়ু কাটার জন্য নারীদের খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। হরমোনজনিত সমস্যায় কান ও মাথা দিয়ে আগুনের মতো গরম হাওয়া বের হওয়া, মাথা ঘোরানো, ঘুম না হওয়া, মানসিক ট্রমা, যৌনজীবনে সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে এখানে নারীরা আসেন।
খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ২০২ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর করা গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের অন্তঃসত্ত্বা নারীদের রক্তস্বল্পতা ও গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ খাওয়ার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণের উপস্থিতি।
মোংলার কানাইনগরে কথা হয় রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। তাঁর এক মেয়ের বয়স ১২ বছর। আরেক সন্তান এ বছরের জুন মাসে পেটেই মারা গেছে। রাবেয়া জানালেন, তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। জ্বর হয় ১০৫ ডিগ্রি। খিঁচুনি শুরু হয়। খুলনায় একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান, পেটের সন্তান তিন দিন আগে মারা গেছে। আর এ সন্তান পেটে আসার আগে থেকেই রাবেয়ার জরায়ুতে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ২০২ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর করা গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের অন্তঃসত্ত্বা নারীদের রক্তস্বল্পতা ও গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ খাওয়ার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণের উপস্থিতি। খাওয়ার পানিতে লবণের মাত্রা এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যে প্রি-একলাম্পসিয়া এবং গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধান করা হয়েছে। গবেষণা প্রবন্ধটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের প্লজ ওয়ান নামের সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর ল্যানসেট সেই প্রবন্ধের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলেছে, জলবায়ুর প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ছে। এই গবেষণার গবেষকেরা ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত খুলনা শহরের উত্তরের একটি জনপদের ১ হাজার ৬ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড রিসার্চের গবেষণা বলছে, স্ট্রোক বেশি খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায়। খাবার ও পানির সঙ্গে নিয়মিতভাবে লবণ বেশি খাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোক বেশি হচ্ছে।
বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড রিসার্চের গবেষণা বলছে, স্ট্রোক বেশি খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায়। খাবার ও পানির সঙ্গে নিয়মিতভাবে লবণ বেশি খাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোক বেশি হচ্ছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ‘সমৃদ্ধি’ কর্মসূচির অর্থায়নে দেশের সাতটি বিভাগের ১৮ বছরের বেশি বয়সী ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৪টি পরিবারের ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৮৯ জনের আর্থসামাজিক তথ্যের সঙ্গে রোগের তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকেরা। ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিচালিত এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে।
উপকূলের নারীদের পানির সঙ্গে বসবাস
মোংলা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত কারণে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার জন্য যে সাধারণ বয়স, তার আগেই বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে অনেকে হাসপাতালে আসছেন। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে এবং প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বের হয়ে যাচ্ছে। এতে হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করলে পরবর্তী সময়ে খিঁচুনি হচ্ছে। গর্ভের সন্তান মারা যাওয়া এমনকি মায়ের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। অনিয়মিত মাসিক, যোনিপথের সংক্রমণ, লিউকোরিয়া (সাদা স্রাব), জরায়ুতে টিউমার, জরায়ু ও প্রস্রাবের স্থানে জ্বালাপোড়া, একজিমা এবং অ্যালার্জির মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যাও বাড়ছে।
শুধু প্রান্তিক নারী নয়, শহুরে নারীরাও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের পাঁচটি হলে খাওয়ার জন্য ইলেকট্রিক ফিল্টারের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে গোসলসহ অন্যান্য কাজে এ পানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নারী শিক্ষার্থী জানান, তাঁদের চুল পড়ে যাচ্ছে। ত্বক খসখসে হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, এলাকার পানিতে লবণের পাশাপাশি ক্লোরিনও আছে। চুল পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা হবেই।
কোনো কোনো উপকূল অঞ্চলে জন্ম নেওয়ার আগে থেকেই শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
গত বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানে। ২৭ মে ভোরের দিকে মোংলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া অন্তঃসত্ত্বা ফাতেমা আক্তারের পানি ভাঙা শুরু হয়। মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত কোনোভাবে পৌঁছালেও তাঁকে খুলনায় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু নদী উত্তাল, খুলনায় যাওয়ার উপায় নেই। এলাকার দুটি ক্লিনিক ঘুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরে আসতে হয় ফাতেমাকে। রিমালের প্রভাবে এলাকায় দুই দিন বিদ্যুৎ ছিল না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্ত্রোপচার কক্ষের (ওটি) মেরামতের কাজ চলছিল। মেরামতের জিনিসপত্র সরিয়ে তেল কিনে জেনারেটর চালু করে অস্ত্রোপচার করা হয়। ফাতেমা মেয়েসন্তানের জন্ম দেন।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে দেশের উপকূলে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। মোংলার চিলা গ্রামের সেন্ট মেরিস গির্জাসংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সাথী সরকার সন্তানের জন্ম দেন। ঘূর্ণিঝড়ের নামের সঙ্গে মিলিয়ে শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল ‘সিডর সরকার’।
কোনো কোনো উপকূল অঞ্চলে জন্ম নেওয়ার আগে থেকেই শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। গত বছরের শেষ দিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘হেলথ ইফেক্টস অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড মিটিগেটিং ইফেক্টস অব ক্লাইমেট পলিসি: এভিডেন্স ফ্রম বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টি কমে আসায় কৃষক পরিবারগুলোর আয় কমছে। মায়েরা গর্ভকালীন অবস্থায় পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন না। এতে শিশুরা মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় এবং জন্মের পরও অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। দেশের গ্রামীণ এলাকার শূন্য থেকে ৬০ মাস বয়সী ৬ হাজার ৮০২ শিশুর ওপর পরিচালিত হয় এ গবেষণা।
উপকূলীয় অঞ্চলে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিও বাড়ছে। গত ২৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ‘লার্নিং ইন্টারাপটেড: গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে ইউনিসেফ জানায়, ওই বছর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়। বড় সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকলে কন্যাশিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া এবং বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়ে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ‘স্যালানিটি থ্রেট ইন উইমেনস সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস’ শিরোনামের একটি গবেষণা প্রকাশ করে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর, বাগেরহাটের মোংলা, বরগুনার কাঁঠালতলী ও পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এবং ভোলার বোরহানউদ্দিনে করা এ গবেষণা বলছে, লোনা ও অপরিষ্কার পানি ব্যবহারের ঝুঁকি কমাতে উপকূলীয় অঞ্চলের কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি বা ইনজেকশন ব্যবহার করে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাসিক বন্ধ করে দেন।
উপকূলীয় অঞ্চলে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিও বাড়ছে। গত ২৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ‘লার্নিং ইন্টারাপটেড: গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে জাতিসংঘের শিশু তহবিল—ইউনিসেফ জানায়, ওই বছর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়। বড় সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকলে কন্যাশিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া এবং বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়ে।
ইউনিসেফের চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (শিশুদের জন্য জলবায়ুঝুঁকি সূচক) অনুযায়ী, জলবায়ু ও পরিবেশগত সংকটের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা। ২০২৩ সালে সেভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল গার্লহুড রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বাল্যবিবাহের ঝুঁকির ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ।
মোংলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ঐতি রায় হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে বৃষ্টির পানিতে কতটুকু ভরেছে ট্যাংক
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ সেপ্টেম্বর দেখা মিলল সন্তান জন্ম দেওয়া দুই মায়ের, কাগজে-কলমে তাঁদের বয়স ১৮ বছর। একজন হলেন ফাহিমা আক্তার। অস্ত্রোপচার করে সন্তান হয়েছে। চার ভাইবোনের মধ্যে ফাহিমার সব থেকে ছোট ভাইয়ের বয়স মাত্র ৬ বছর।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সোহানা সুলতানা বললেন, অনেককেই ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক সন্তানের মা হচ্ছে তারা। এর পাশাপাশি গৃহস্থালিসহ অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে কম বয়সেই জরায়ু হারাতে হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় চামড়া বা ত্বকের নানা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা নিয়ে আসছেন অনেকে।
ফ্রান্স ও সেনেগালের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশ উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের গবেষকেরা দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়।
গত বছরের মার্চে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট এবং ইউএন উইমেন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান’ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১৮৫টি চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। যেকোনো দুর্যোগ বা দুর্যোগের পর নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ে। নারীর অবৈতনিক কাজের বোঝা বাড়ে।
বিবিএস ও বাংলাদেশে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে আলাদা কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলের বিবাহিত নারীরা স্বাভাবিক এলাকার নারীদের তুলনায় বেশি সহিংসতার শিকার হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য মোংলাসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার নারীদের জরায়ু কেটে ফেলাসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতা থাকায় স্বামী নির্যাতন করছেন বলে কেউ সরাসরি স্বীকার করেননি এ প্রতিবেদকের কাছে।
জলবায়ু পরিবর্তন নারীর মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলছে। গত বছরের ২৭ জুন প্রকাশিত হয় ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের দুটি ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য: একটি নৃতাত্ত্বিক গবেষণা’। ফ্রান্স ও সেনেগালের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশ উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের গবেষকেরা দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাসহ স্বামীর কাজের জন্য শহরে স্থানান্তরিত হওয়ায় উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে। লিঙ্গভিত্তিক ও পারিবারিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে। অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য মেয়েসন্তানকে কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়।
উপকূলীয় অঞ্চলের নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখনো গুরুত্ব পায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি-বেসরকারি সমন্বিতভাবে উদ্যোগ না নিলে, জাতীয় ও বড় আকারে কর্মসূচি গ্রহণ না করলে, এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে না।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর যৌথভাবে ২০১৯ সাল থেকে ‘উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রকল্পের অধীনে ৪৩ হাজার নারীর সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু তহবিল গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) আর্থিক সহায়তায় ৩০০ কোটি ৮৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প খুলনার দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এ প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হাই আল মাহমুদ বলেন, ‘কথা সত্য। উপকূলীয় অঞ্চলের নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখনো গুরুত্ব পায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি-বেসরকারি সমন্বিতভাবে উদ্যোগ না নিলে, জাতীয় ও বড় আকারে কর্মসূচি গ্রহণ না করলে, এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে না।’
প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হাই আল মাহমুদ বলেন, ‘কথা সত্য। উপকূলীয় অঞ্চলের নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখনো গুরুত্ব পায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি-বেসরকারি সমন্বিতভাবে উদ্যোগ না নিলে, জাতীয় ও বড় আকারে কর্মসূচি গ্রহণ না করলে, এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে না।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে কমিউনিটি-বেসড রেজিলিয়েন্স, উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড অ্যাকশন প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৬ সালের আগস্টে। উপকূলীয়, চর/বন্যাপ্রবণ, হাওর ও পার্বত্য অঞ্চলে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ প্রকল্পে সরাসরি নারী স্বাস্থ্যের বিষয়টি অনুপস্থিত।
মোংলায় বাড়ির পাশে বৃষ্টির পানি জমেছে, সেই পানি দিয়েই কাজ করছেন মাজেদা বেগম
ব্র্যাক ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোংলায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ‘এনহ্যান্সিং সেফ ড্রিংকিং ওয়াটার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স থ্রু রেইনওয়াটার হারভেস্টিং’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৭২ হাজারের বেশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছে। এর মধ্যে নারী ছিলেন ৩৯ হাজারের বেশি। ব্র্যাক বর্তমানে মোংলা, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও বরগুনার পাথরঘাটায় ‘রেইন ফর লাইফ’ শিরোনামের আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে গবাদিপশুর জন্যও খাওয়ার পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

জন্মভূমি ডেস্ক December 19, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি এনসিপির বার্তা
Next Article বটিয়াঘাটায় স্বেচ্ছসেবক দলের সভাপতিসহ গ্রেফতার ২

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
খুলনা

সরবরাহ বাড়ায় ডুমুরিয়ায় বাজারে শীতের সবজির দাম কমেছে

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
জাতীয়

পুলিশ রিপোর্ট আসার ৯০ দিনের মধ্যে হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: আইন উপদেষ্টা

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
জাতীয়

সাবেক এমপি সুকুমার রঞ্জন আর নেই

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

তালায় শাহ্জালাল ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

By জন্মভূমি ডেস্ক 2 hours ago
সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের ২ নেতা গ্রেফতার

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 hours ago
সাতক্ষীরা

মোঘল সাম্রাজ্যে জনজীবন কেমন ছিল

By জন্মভূমি ডেস্ক 7 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?