By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: উপকূলে ‌মাঠের অভাবে বিপন্ন শৈশব
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > উপকূলে ‌মাঠের অভাবে বিপন্ন শৈশব
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলে ‌মাঠের অভাবে বিপন্ন শৈশব

Last updated: 2025/11/04 at 12:02 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 1 week ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতেই জর্জরিত নয়, এই প্রতিকূলতার প্রভাব এখানকার শিশুদের শৈশব থেকে কেড়ে নিচ্ছে খেলার আনন্দ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা এখানকার খেলার মাঠগুলোকে যেমন গ্রাস করছে, তেমনি দখলদারির থাবায় সংকুচিত হচ্ছে অবশিষ্ট খেলার জায়গা। এর ফলস্বরূপ সাতক্ষীরা শহরের শিশুরা খোলা আকাশের নিচে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিশুরা ঝুঁকছে স্মার্টফোন আর অনলাইন গেমের ভার্চুয়াল জগতে, যা তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেলায় পৌর এলাকায় খেলার মাঠের এই সংকট এখন কেবল খেলার জায়গার অভাব নয়, এটি দখল, অব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবে শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে কিছু অল্প জায়গায় উপযোগী খেলা ও কার্যক্রম হতে পারে কার্যকর বিকল্প। এ জন্য প্রয়োজন অভিভাবক, শিক্ষক, কমিউনিটি সংগঠক বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ।

সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফায়েত হোসেন বিকেল হলেই খেলতে চায়। কিন্তু আশপাশে খেলার উপযোগী কোনো মাঠ নেই। বাসার সামনে খেলতে গেলেও তার মা-বাবার দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ে না। তার মা সালেহা বেগম বলেন, ‘রাস্তা গাড়িতে ভর্তি, মাঠ নেই, ছাদেও খেলা নিরাপদ না।’ শুধু সাফায়েত নয়, সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ শিশুই এখন খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত। যেসব মাঠ ছিল, সেগুলো দখল হয়ে গেছে বা বাণিজ্যিক ব্যবহারে চলে গেছে। শহরের শিশুদের জন্য আলাদা করে কোনো উন্মুক্ত মাঠ বরাদ্দ নেই।
শহরে নেই শিশুবান্ধব কোনো মাঠ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন ৩১.১০ বর্গকিলোমিটার। এখানে বসবাস করছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৫-১৫ বছর বয়সি শিশু-কিশোর রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। অথচ এই শহরে শিশুদের জন্য নির্ধারিত একটিও পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠ নেই। শুধু শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের একটি খোলা জায়গা রয়েছে।
‘আমার ছেলে আগে বিকেলে বাসার পাশে খালি জায়গায় দৌড়াতো। এখন মোবাইল ছাড়া চলে না। চোখে সমস্যা হচ্ছে, মনোযোগও কমে গেছে। একা একা থাকছে, কারও সঙ্গে কথা বলে না।’
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় পৌর এলাকায় ২৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনোটিতেই খেলার মাঠ নেই। ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাঠ আছে ৫টির। এর মধ্যে বড় মাঠ বলতে গেলে সরকারি কলেজ মাঠ, পিএন হাইস্কুল মাঠ, সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ আর রসুলপুর স্কুল মাঠ। কিন্তু এসব মাঠের কোথাও শিশুরা যখন খুশি তখন খেলতে পারে না।
স্কুলকলেজের মাঠগুলো ক্লাসের সময়ের পর অনেক ক্লাব বা খেলার একাডেমি ব্যবহার করে। তারা নিজেদের মতো করে খেলা বা শেখানোর কাজ করে। সেখানে এলাকার সব ছেলেমেয়েরা যখন তখন ইচ্ছেমতো খেলতে পারে না।
এদিকে জেলা স্টেডিয়ামের মাঠও বেশিরভাগ সময় বন্ধই থাকে। বড় কোনো খেলার টুর্নামেন্ট বা আয়োজন থাকলে তবেই সেটা খোলা হয়। ফলে স্টেডিয়ামের মাঠও সাধারণ শিশুদের খেলার কোনো কাজেই আসে না। সব মিলিয়ে শহরের অনেক ছেলেমেয়েই খেলার জায়গার অভাবে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
শহরের একমাত্র পার্ক সেটিও শিশুদের নয়
সাতক্ষীরা শহরের একমাত্র পার্ক শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক। একসময় এর একটি বড় অংশে শিশুরা খেলত। কিন্তু সেই মাঠ দখল করে এখন সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্পকলা একাডেমি ও সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবন। পার্কের শহীদ মিনারের সামনের অংশে সামান্য কিছু খোলা জায়গা থাকলেও, সভা-সমাবেশ ও মেলা আয়োজনের জন্য সেই অংশও মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। পার্কের একটি পাশে কয়েক বছর আগে বেসরকারি একটি সংস্থা শিশুদের জন্য রাইড স্থাপন করেছিল। ঘূর্ণি চাকা, স্লাইড, দোলনাসহ ছোটদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জোন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই রাইডগুলো সব নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। দেখভালের অভাবে স্থানটি এখন পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আস্তানায়। বিকেলে শিশুরা যখন খেলতে চায়, তখন এ জায়গা তাদের জন্য হয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর।
জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় বিপর্যস্ত খেলার মাঠ
প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রতিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত সবুজ অঞ্চল ও উদ্যান রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, নগরায়ণ, দখল, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দূষণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংকটের কারণে দেশব্যাপী খেলার মাঠগুলো ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশই দখল হচ্ছে, পাশাপাশি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং তার শ্রেণি চরিত্র হারাচ্ছে।
‘আমাদের সময় বাচ্চারা মাঠে খেলত, ঘুড়ি উড়াতো, ক্রিকেট-ফুটবল খেলায় মেতে থাকত, চিৎকার করত, হাসত। এখনকার বাচ্চারা চুপচাপ, হাসে কম, চোখ-মুখও ম্লান।’
তিনি বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর-চট্টগ্রাম-সিলেট-খুলনা-বরিশাল বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি মফস্বল শহর এমনকি গ্রামের খেলার মাঠগুলোও আজ হুমকির সম্মুখীন।
পাভেল পার্থ তার অভিজ্ঞতায় দেখেছেন দেশের উপকূল, হাওর ও পাহাড়ি এলাকার খেলার মাঠ বেশি ঝুঁকিতে আছে। বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ হারিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল, লবণাক্ততা, খরার কারণে মাঠগুলির পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ থাকার ফলে কিংবা খরার কারণে মাঠের মাটি ও ঘাস নষ্ট হয়। ক্রমান্বয়ে মাঠগুলি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার ফলে মাঠ পরবর্তীতে দখল করে অন্যরা। সেসব মাঠকে অন্য বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে। খেলার মাঠ হারানোর ফলে এর বড় প্রভাব পড়ে শিশু, কিশোর ও তরুণদের জীবনে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে খেলার মাঠের এই সংকটকে পাভেল ‘নন-ইকোনমিক লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, খেলার মাঠ বাঁচানোর জন্য কেবল রাষ্ট্রীয় আইন ও ব্যবস্থাপনা নয়, পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে জলবায়ু সম্মেলনের মতো পরিসরেও খেলার মাঠ বাঁচানোর জন্য তহবিল দাবি করতে হবে।
শিশুর বিকাশে খেলার বিকল্প নেই, মত বিশেষজ্ঞদের
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শামছুর রহমান এই প্রতিবেদককে‌বলেন, খেলার অভাব শিশুদের শারীরিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে সীমিত করে ফেলেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে তাদের স্বাস্থ্য ও মনে। বাইরে খেলার সুযোগ না থাকায় শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল বা অন্যান্য ডিভাইসে মুখ গুঁজে থাকছে। এই আসক্তি তাদের চোখের সমস্যা, স্থূলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। পাশাপাশি, সমবয়সিদের সঙ্গে মেলামেশা ও খেলাধুলার সুযোগ না পাওয়ায় তারা সামাজিক দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে। মানসিক চাপ, হতাশা ও একাকিত্ব অনুভব করছে, যা ভবিষ্যতে গুরুতর মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
‘বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ হারিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল, লবণাক্ততা, খরার কারণে মাঠগুলির পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ থাকার ফলে কিংবা খরার কারণে মাঠের মাটি ও ঘাস নষ্ট হয়। ক্রমান্বয়ে মাঠগুলি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার ফলে মাঠ পরবর্তীতে দখল করে অন্যরা। সেসব মাঠকে অন্য বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে। খেলার মাঠ হারানোর ফলে এর বড় প্রভাব পড়ে শিশু, কিশোর ও তরুণদের জীবনে।’
ডা. শামছুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, একজন শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি মনে করি, শিশুদের সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত এবং নিরাপদ খেলার পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটা তাদের মৌলিক অধিকারও বটে, যা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার এগিয়ে আসা উচিত।
মাঠ না থাকায় শিশুদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে বলছে গবেষণা
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের উদ্যোগে সাতক্ষীরার শিশুদের নিয়ে সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে ‘খেলার জন্য উন্মুক্ত জায়গা না থাকায় শিশুদের মধ্যে মোবাইল ও গেমে আসক্তি, একাকিত্ব, মানসিক চাপ, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা, মনোযোগের অভাব এবং সামাজিক দক্ষতার ঘাটতি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।’
এ বিষয়ে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সাতক্ষীরা অফিসের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করছি ও সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপটে এটি একটি বড় সমস্যা। শহরের মধ্যে খেলার মাঠের সংখ্যা এমনিতেই নগণ্য, তার ওপর যেটুকু আছে তাও বিভিন্নভাবে দখল হয়ে আছে বা খেলার উপযোগী নয়। এতে শিশুরা বাইরে খেলার সুযোগ না পেয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে ও স্মার্টফোন বা অনলাইন গেমে আসক্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, খেলার মাঠের অভাবে শিশুরা একে অপরের সঙ্গে মিশতে পারছে না, যা তাদের সামাজিক বন্ধন তৈরি ও মানসিক বিকাশে বাধা দিচ্ছে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এর ফলে শিশুদের মধ্যে হতাশা, মানসিক চাপ ও একাকিত্ব বাড়ছে। এমনকি অনেক শিশু মানসিক রোগের ঝুঁকিতেও পড়ছে। অথচ খেলাধুলা তাদের মানসিক শান্তি, স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।শরিফুল ইসলাম জানান, নীতিগতভাবে শিশুদের খেলার অধিকার স্বীকৃত হলেও মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন খুবই দুর্বল।
‘খেলার অভাব শিশুদের শারীরিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে সীমিত করে ফেলেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে তাদের স্বাস্থ্য ও মনে। বাইরে খেলার সুযোগ না থাকায় শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল বা অন্যান্য ডিভাইসে মুখ গুঁজে থাকছে। এই আসক্তি তাদের চোখের সমস্যা, স্থূলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। মানসিক চাপ, হতাশা ও একাকিত্ব অনুভব করছে, যা ভবিষ্যতে গুরুতর মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।’
সাতক্ষীরা পিএন হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র এই প্রতিবেদককে ‌।বলেন, খেলার মাঠের অভাবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমাদের স্কুলের নিজস্ব মাঠ থাকলেও, শহরের অনেক স্কুলে খেলার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এমনকি আমাদের শিক্ষার্থীরাও অনেক সময় পর্যাপ্ত মাঠ পায় না খেলার জন্য।
সাতক্ষীরায় খেলার মাঠের দুরবস্থা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য তাজুল ইসলাম রিপন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা একসময় খেলাধুলার জন্য খুবই পরিচিত ছিল। এখান থেকে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। কিন্তু বর্তমানে মাঠের অভাবে নতুন প্রতিভা তৈরি হওয়া বা নিয়মিত খেলাধুলা চর্চা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, শহর বা আশেপাশে খেলার জন্য ভালো মাঠ নেই বললেই চলে। যে কয়েকটি মাঠ আছে, সেগুলোও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। অনেক মাঠ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয় বা সারাবছর খেলার উপযোগী থাকে না। এতে শিশু-কিশোররা খেলাধুলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এমনকি অনেক ক্লাব বা একাডেমিও অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাচ্ছে না।
তাজুল ইসলাম রিপন বলেন, শুধু শরীরচর্চাই নয়, খেলাধুলা শৃঙ্খলা শেখায়, নেতৃত্ব গুণ তৈরি করে এবং মাদক বা অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। মাঠের অভাবে এই সুযোগগুলো থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম বঞ্চিত হচ্ছে।
শিশুদের জীবনযাপন বিষণ্ন: অভিভাবকরা যা বলছেন
সুলতানপুর এলাকার সোনিয়া খাতুন, শিশু শোয়াইব আহসানের মা, তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলায় বিকেলে মাঠে দৌড়াতাম, গাছতলায় বসতাম। এখন আমার ছেলেকে বারান্দায় বল নিয়ে খেলতে হয়। মাঠ নেই, ছাদেও ভয় লাগে। মোবাইলেই মন পড়ে ওর।
আছিয়া খাতুনের মা রুমি খাতুনের ভাষ্য, বাসার পাশেই একটা ফাঁকা জায়গা ছিল। ওখানে শিশুরা খেলত। এখন সেখানে নতুন বিল্ডিং উঠেছে। খেলার সুযোগ নেই বলে মেয়েটা সারাদিন ফোনে পড়ে থাকে।
‘সরকারের পক্ষ থেকে খেলার মাঠ উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। প্রতি উপজেলায় সরকারিভাবে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের খড়িবিলা এলাকায় একটি আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জমি নির্ধারণ করা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান মাঠগুলো দখলমুক্ত করে বা সংস্কার করে খেলার উপযোগী রাখতে বিভিন্ন সময় স্থানীয় ক্লাবগুলোকে সরকারি অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।’
আবু রাইহানের মা উর্মি খাতুন বলেন, আমার ছেলে আগে বিকেলে বাসার পাশে খালি জায়গায় দৌড়াতো। এখন মোবাইল ছাড়া চলে না। চোখে সমস্যা হচ্ছে, মনোযোগও কমে গেছে। একা একা থাকছে, কারও সঙ্গে কথা বলে না।
মুনজিৎপুর লম্বা টালি এলাকার এক বৃদ্ধ অভিভাবক বললেন, আমাদের সময় বাচ্চারা মাঠে খেলত, ঘুড়ি উড়াতো, ক্রিকেট-ফুটবল খেলায় মেতে থাকত, চিৎকার করত, হাসত। এখনকার বাচ্চারা চুপচাপ, হাসে কম, চোখ-মুখও ম্লান।
ছোট জায়গায় বড় আনন্দের জন্য দরকার বিকল্প চিন্তা
সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন কর্মকর্তা ও সংগঠক খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্সের দাবি, খেলার মাঠের অভাব মানেই খেলা বন্ধ, এমনটা ভাবলে হবে না। মাঠ না থাকলেও ছোট ছোট উদ্যোগে শিশুদের সক্রিয় রাখা সম্ভব। যেমন বাড়ির আঙিনায় বা বাসার ছাদে যদি নিরাপদ রেলিং থাকে লাফদড়ি, বুড়িচ্চুসহ দেশীয় খেলা, বারান্দায় দাবা, কারাম, লুডু কিংবা পাড়ার উঠানে বল ছোঁয়া, ব্যাডমিনটন বা ফুটবল পাসিং খেলা যেতে পারে।
শিশু অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি শিশুর খেলাধুলা ও বিশ্রামের অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ এই সনদের স্বাক্ষরকারী। নগর উন্নয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতি ১২ হাজার মানুষের জন্য একটি খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক। সাতক্ষীরায় এই হিসাব মেলাতে গেলে কমপক্ষে ১০টি মাঠ থাকা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে নেই একটিও।
পৌর কর্তৃপক্ষ যা বলছে
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ এই প্রতিবেদককে ‌বলেন, সাতক্ষীরা শহরে শিশুদের জন্য পরিকল্পিত খেলার মাঠ নেই এটা সত্য। তবে কয়েক বছর আগে একটি নতুন মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল, যেখানে ওয়ার্ড ভিত্তিক খেলার মাঠ রাখার প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়া শহরে অন্তত দুটি উন্মুক্ত মাঠ ও একটি শিশুবান্ধব পার্কের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

সাতক্ষীরা শহরের খেলার মাঠ সংকটের মূল কারণ নগর পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা বলে মনে করেন সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক নগর পরিকল্পনাবিদ ও বর্তমানে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক শুভ্র চন্দন মহলী এই প্রতিবেদককে ‌তিনি বলেন, যখন শহরটি ছোট ছিল, তখন হয়ত কিছু ফাঁকা জায়গা খেলার জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনাহীনভাবে সেই জায়গাগুলো বাণিজ্যিক বা আবাসিক দখলে চলে গেছে। শহরের নতুন বর্ধিত অংশেও খেলার মাঠের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা হয়নি, রাখা হলে তাও অপ্রতুল। জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততাসহ ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মাথায় রেখে মাঠগুলোকে খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং টেকসই রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
প্রশাসন কী বলছে?
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহম্মেদ এই প্রতিবেদককে ‌বলেন, খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা আমরাও অনুভব করি। শহর এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গার পরিমাণ কমে আসছে, যার প্রভাব খেলার মাঠের উপরও পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খেলার মাঠ দখল হয়ে যাওয়া বা অনুপযুক্ত থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে খেলার মাঠ উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। প্রতি উপজেলায় সরকারিভাবে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের খড়িবিলা এলাকায় একটি আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জমি নির্ধারণ করা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান মাঠগুলো দখলমুক্ত করে বা সংস্কার করে খেলার উপযোগী রাখতে বিভিন্ন সময় স্থানীয় ক্লাবগুলোকে সরকারি অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।

জন্মভূমি ডেস্ক November 4, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article দিঘলিয়ায় প্রকল্পের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ
Next Article সাতক্ষীরা সীমান্তে এক মাসে ১১ কোটি টাকার চোরাচালানি মালামাল আটক

দিনপঞ্জি

November 2025
S M T W T F S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
« Oct    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ‌৪২ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে ইতিহাস গড়লেন আফরোজা!

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago
চুয়াডাঙ্গাতাজা খবর

অতিরিক্ত ডিআইজির দর্শনা থানা ও পুলিশ কোর্ট পরিদর্শন

By জন্মভূমি ডেস্ক 11 hours ago
কুষ্টিয়া

ভেড়ামারায় মাদ্রাসার কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ‌৪২ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে ইতিহাস গড়লেন আফরোজা!

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago
চুয়াডাঙ্গাতাজা খবর

অতিরিক্ত ডিআইজির দর্শনা থানা ও পুলিশ কোর্ট পরিদর্শন

By জন্মভূমি ডেস্ক 11 hours ago
তাজা খবরমহানগর

খুলনার জাতিসংঘ শিশু পার্কে উন্মুক্ত মঞ্চ , সমালোচনার মুখে কাজ স্থগিত

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?