মো. মনিরুজ্জামান : শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আমাদের দেশে শিক্ষারহ হাতে খড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। একটা সময় প্রাথমিক বিদ্যালয় বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠতো ভগ্নদশা ভবন, রুগ্ন এক ঝাঁক শিক্ষার্থী, শিক্ষক শুন্য শ্রেণিকক্ষসহ নানা দৃশ্য। কিন্তু গত ১৫ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিরচেনা সেই চিত্র পাল্টে গেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে রঙিন নতুন একাডেমিক ভবন, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই, সংকট নিরসনে শিক্ষক নিয়োগ, শিশুদের শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলায় মনোনিবেশ করতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ চালু, ডিজিটাল ক্লাসরুমসহ একগুচ্ছ পদক্ষেপে বদলে গেছে প্রাথমিক শিক্ষার ধরন। এগিয়ে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা।
সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয় জাতির ভবিষ্যত কান্ডারি তৈরির কাজ। নানান সংকটের মাধ্যমে শিক্ষকরা এই কাজ করে যাচ্ছেন দক্ষতার সঙ্গে। আর এই কাজকে সহজ করেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া নানা পদক্ষেপ। গত ১৫ বছরে সরকারি পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। যার মাধ্যমে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম।
প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তৃতিতে গত ১৫ বছরে অগ্রগতি হয়েছে ব্যাপক। যার শুরুটা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই। ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই দেশের ৩৬ হাজার ১৬৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রার শুভ সূচনা করেছিলেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত আরও পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে চার দফার প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি। এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনেই রঙিন বই তুলে দেয়া, উপবৃত্তি কার্যক্রম, নতুন ভবন ও শ্রেণিকক্ষ, নিবিড় মনিটর্রিং, সরকারি বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগের মতো বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
দেশের ৪ বছরের শিশুদের কিন্ডারগার্টেনে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অভিভাবকদের মধ্যে। তাই চলতি বছর থেকে প্রি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এর আগে চালু করা হয় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা। এখন থেকে ৪ বছরের শিশুরা খেলতে খেলতে বিদ্যালয়মুখী হওয়ার মানসিকতা নিয়ে বড় হবে। আর শিশুরা যাতে বিদ্যলয়বিমূখ না হয় সেজন্য শতভাগ শিক্ষার্থীকেই উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। শহরের শিক্ষার্থীরাও এখন উপবৃত্তি পায়।
লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হচ্ছে। শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টিসহ লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু, পুল শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগও প্রশংসা পাচ্ছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। সারাদেশের বিদ্যালয়গুলোকে ডিজিটাল ক্লাস রুম স্থাপন করা হয়েছে। শিশুদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। একটা সময় শিশু-কিশোরেরা বঙ্গবন্ধু ও দেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতেই পারতো না। কিন্তু এখন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ রকম নানান পদক্ষেপে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা। এগিয়ে নেওয়ার কাজে সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, মুহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা এবং জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক।