জন্মভূমি ডেস্ক : এসএমই খাতের সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে মূসক, আয়কর এবং শুল্ক সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
সংস্থানটির বাজেট প্রস্তবনায় বলা হয়, জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই)- সংজ্ঞা দেওয়া আছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের সকল কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ এ উল্লিখিত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই)-এর সংজ্ঞা অনুসরণ করা হয়। কিন্তু এনবিআর এর রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সিএমএসএমই’র কোন সংজ্ঞা নাই। এক্ষেত্রে এনবিআর জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ অনুসরণ করে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংঙ্গা আয়কর ও ভ্যাট আইনে সন্নিবেশ করতে পারে, যাতে করে এই খাতকে সহজেই চিহ্নিত করে এমএসএমই খাতে আয়কর ও ভ্যাট সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায়।
এসএমই খাতের বিকাশের লক্ষ্যে এই খাতের উদ্যেক্তাদের জন্য একটি পৃথকীকৃত ভ্যাট, আয়কর এবং শুল্ক সংক্রান্ত বিধি বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে এসএমইদের জন্য অগ্রাধিকারমূলক কর ব্যবস্থা বা প্রেফারেন্সিয়াল ট্যাক্স রেজিম এর ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। প্রেফারেন্সিয়াল ট্যাক্স রেজিম (পিটিআর) হল বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থা যা একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ বা গোষ্ঠীর জন্য মূলধারার ট্যাক্স ব্যবস্থার তুলনায় কম করের হার এবং সহজ কর ব্যবস্থা করা। সংস্থাটি যে প্রস্তাবনা এনবিআর’ কাছে পেশ করেছে। যে সমস্ত এসএমইদের বার্ষিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকার নিচে, তাদের ভ্যাট রিটার্ন প্রতি মাসের পরিবর্তে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জমা দেয়ার বিধান সন্নিবেশ করা যাতে করে জনবলের অভাবে এখনো যারা রিটার্ন জমা দিতে পারছেন তারা কর জালের মধ্যে পুরোপুরি প্রবেশ করতে উৎসাহিত হবেন।
আদেশ নং ১৭/২০১৯ এর মাধ্যমে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টার্নওভার নির্বিশেষে ভ্যাটের আওতায় নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসএমইদের স্বার্থ বিবেচনায় পন্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাৎসরিক টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হলে নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
যোগানদার কতৃক শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি দেওয়া থাকেলেও উৎপাদনকারী কতৃক শতভাগ রপ্তানীমুখী শিল্প কারখানায় স্থানীয় মুদ্রায় সরাসরি সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি নেই। তাই, উৎপাদনকারী কতৃক স্থানীয় মুদ্রায় উপকরণ সরাসরি সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতির বিধান করা যেতে পারে।
থ্রেসার মেশিন এর উপর বর্তমানে এসআরও/২১৩ এর মাধ্যমে মূসক অব্যাহতি রয়েছে। এখানে ভাষাগত পরিমার্জন করে সকল প্রকার শস্যের জন্য পাওয়ার থ্রেসার মেশিন” এর উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা যেতে পারে।
কম্বাইনড হারভেস্টর এর উপর বর্তমানে এসআরও/২১৩ এর মাধ্যমে মূসক অব্যাহতি রয়েছে। এখানে ভাষাগত পরিমার্জন করে সকল প্রকার শস্যের জন্য কম্বাইনড হারভেস্টরের উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করার প্রস্তাব করছি।
বর্তমানে কিছু কিছু কৃষি যন্ত্রপাতির উপর এসআরও ১৪৮ এর মাধ্যমে আগামকর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। উক্ত তালিকায় বর্ণিত যন্ত্রপাতি সমূহের সাথে আরও নতুন কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন- রাইচ ট্রান্সপ্লান্টার, পটেটো প্লান্টার, কীটনাশক স্প্রেয়ার, সীড ড্রায়ার ইত্যাদির আমদানিতে আগাম কর অব্যাহতির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এসআরও ২১৩ এর মাধ্যমে মুড়ি এর উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা রয়েছে, এই অব্যাহতি “মুড়ি ও চিড়া” উভয়ের জন্যও প্রস্তাব করছি।
পাউরুটি-বনরুটি, বিস্কুট, কেক, প্ল্যাস্টিক হাওয়াই চপ্পল ইত্যাদির জন্য উৎপাদন পর্যায়ে একটি নির্দিষ্ট মূল্য সীমা পর্যন্ত মূসক অব্যাহতি রয়েছে যেমন-পাউরুটি-বনরুটি ১৫০ টাকা/পিচ পর্যন্ত, হাতে তৈরি বিস্কুট ২০০ টাকা/কেজি পর্যন্ত, কেক ৩০০ টাকা/কেজি পর্যন্ত, প্ল্যাস্টিক হাওয়াই চপ্পল ১৫০ টাকা / জোড়া পর্যন্ত। এসএমইদের জন্য ইকনোমিক ইনফ্লেশন জনিত কারনে উপকরণের বর্ধিত বাজার মূল্যের সহিত সঙ্গতি রেখে উক্ত মূল্য সীমা ২৫% বর্ধিত করনের প্রস্তাব করছি।
বর্তমানে ১৫০ বর্গফুট পর্যন্ত বাণিজ্যিক স্পেচ ভাড়ার উপর মূসক অব্যাহতি রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাহিরের এসএমইদের জন্য এই সীমা ৩০০ বর্গ ফুট পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে।
প্ল্যাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে তৈরিকৃত খেলনা এবং কিছু গৃহস্থালি পণ্য সামগ্রীর উপর বর্তমানে ১৫% মূসক আরোপিত রয়েছে। এসএমইদের জন্য এই সব পণ্য গুলিতে মূসকের হার কমিয়ে ৫% করা যেতে পারে।
যেই সব এসএমইদের বাৎসরিক টার্নওভার সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা তাদের জন্য ভ্যাট আইনের আওতায় পিছনের দিকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর পর্যন্ত অডিটের জন্য নির্বাচনের বিধান করার প্রস্তাব করছি।
বাধ্যতামূলক সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য বাৎসরিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এসএমইদের জন্য ২০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করছি।
ক্ষুদ্র মেরামতকারীদের সেবার উপরও বর্তমানে ১০% মূসক আরোপিত রয়েছে, এসএমইদের জন্য উৎসে কর্তনকারীদের নিকট সেবা প্রদানের ক্ষেত্র ব্যতিত অন্যান্য মেরামতের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করছি ।
উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান (ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইআরসি) যাদের বাৎসরিক আমদানি মূল্য ৫ কোটি টাকা অতিক্রম না করিবে ঐ সব এসএমইদের কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর আদায়ের হার বর্তমান হার ৩% এর পরিবর্তে ১.৫% করার প্রস্তাব করছি।
এনবিআর’র বাজেট প্রস্তাব: টার্নওভার ৫ কোটি টাকার নিচে হলে ভ্যাট রিটার্ন ৩ মাসে করা

Leave a comment