ক্রীড়া প্রতিবেদক : মুলতানে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে কাল শুরু হয়েছে এশিয়া কাপের ১৭তম আসর। হাইব্রিড মডেলে টুর্নামেন্টের আরেক আয়োজক দেশ শ্রীলঙ্কা। আর লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই আজ এশিয়া কাপ মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। পাল্লেকেল্লেতে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৩০টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে দুঃসংবাদ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। জ্বরের কারণে দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা যেতে না পারা টাইগার ওপেনার লিটন দাস শেষ পর্যন্ত ছিটকেই গেছেন টুর্নামেন্ট থেকে। এদিকে তার জায়গায় আকস্মিকভাবে ডাক পেয়েছেন দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়। তবে সব ছাপিয়ে বাংলাদেশ দল আশাবাদী ভালো কিছুর, দেশ ছাড়ার আগে এমন সুর মিলেছে টাইগার ক্রিকেটারদের।
শ্রীলঙ্কার বিমান ধরার আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা, ইনশাআল্লাহ্। দলগত অর্জনই সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে আসল লক্ষ্য হলো ভালো ক্রিকেট খেলা। সবাই দোয়া করবেন, যেন আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি।’ যদি সত্যিই এমনটি হয় তাহলে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দলের তকমা জুটবে টাইগারদের।
এদিকে এশিয়া কাপের আগে টাইগারদের নতুন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দেশ ছাড়ার আগে বলেন, ‘এখন আমাদের ভাবনা শুধুই এশিয়া কাপ। যেখানে আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ জয়। আমরা প্রতিটি ম্যাচ আলাদা আলাদা করে টার্গেট করবো। ওয়ান বাই ওয়ান জয়ের পরিকল্পনা।’
টাইগার দলপতির এমন প্রত্যাশ্যায় হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের স্বপ্ন একটু চওড়া হতে পারে। তবে বাস্তবে সেটি খানিকটা কঠিনই হবে। আসন্ন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের দুই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। আসরের সুপার ফোর নিশ্চিত করতে দুই ম্যাচেই জয় পেতে হবে টাইগারদের।
সবশেষ ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর সিরিজে তৃতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। কিন্তু পরিসংখ্যান বিবেচনায় টাইগারদের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে আফগান আটলানরা।
তবে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের তকমা অর্জন কি সত্যিই কঠিন, এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের অতীত দেখলে হয়তো তাই। যদি তাই না হয় তাহলে এই মঞ্চে তিনবার ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন তকমা থেকে বঞ্চিত হবে কেন টাইগাররা! ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের মঞ্চে ফাইনালে লড়াই করেছে টাইগার বাহিনী। তবে তিনবারেই রানার্সআপ হয়ে ফিরেছেন টাইগাররা।
প্রথমবার ঘরের মাঠে ২০১২ সালে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিলো পাকিস্তান। সেবার শিরোপার খুব কাছ দিয়ে চলে যায় বাংলাদেশ। শেষ ওভারের ৬ বলে ৯ রানের আক্ষেপ এখনও মনে দাগ কেটে আছে টাইগার ক্রিকেট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের। সেই কষ্টের স্মৃতি ভুলতে না ভুলতে তিন বছরের মাথায়, ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালের মঞ্চে ওঠে লাল-সবুজ প্রতিনিধীরা।
তবে সেবার ফাইনালের বল মাঠে গড়াবের আগেই প্রকৃতি যেনো টাইগারদের পক্ষে ছিলো না। বেরসিক বৃষ্টি থামতেই কার্টেল ওভারে (১৫) শুরু হয় এশিয়া সেরার লড়াই। সেবার অবশ্য সেবার ফরম্যাট ও প্রতিপক্ষ দুটোই আলাদা ছিলো বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের মুখোমুখি ছিলো ভারত। ফাইনালের মঞ্চে লাল-সবুজ প্রতিনিধীদের ১২০ রানের লক্ষ্যে ভারত ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে টাইগারদের আরেকটি শিরোপার আক্ষেপে পুড়ায়।
কিন্তু অধরা শিরোপা ধরার স্বপ্নে হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বে গড়ায় ওয়ানডে ফরম্যাটে। যেখানে নিজেদের উজার করে এশিয়া কাপের ফাইনালের মঞ্চে তৃতীয়বারের মতো উঠে লাল-সবুজ প্রতিনিধীরা। আবারও টাইগারদের প্রতিপক্ষ ভারত। সেবার বাংলাদেশের ২২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে টাইগারদের বোলিংয়ে শুরু থেকেই চাপে থাকে ভারত। তবে টাইগারদের শ্রেষ্ঠত্বের তকমার নিয়তি নিয়ে হয়তো আসেননি! না হলে রুদ্বশ্বাস লড়াইয়ে শেষ বলে জয় নিশ্চিত করতে পারতো না ভারত! সেদিন যদি লিটনের পাশাপাশি সাকিব-মুশফিকরা দলের হাল ধরতে পারতেন, তাহলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকমও হতে পারতো!
এবার অক্টোবরে ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ বলে ওয়ানডে ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এশিয়া কাপ। যেখানে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের শেষ কিছু বছরের পরিসংখ্যান দেখলে ভালো ক্রিকেট খেলছে বলা যায়। বিশেষ করে চলতি বছরের নিজেদের সেরা প্রদর্শন করেছে টাইগাররা। অবশ্য মাঝেমধ্যে খেই-ও হারিয়ে ফেলেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। এর মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ খুইয়েছে টাইগাররা।
তবে এশিয়া কাপের দুইটি ম্যাচই টাইগারদের জন্য রোমাঞ্চকর হতে যাচ্ছে। সাকিব-মুশফিকরা নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে হয়তো লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের এশিয়া কাপের অধরা স্বপ্ন পূরণও হতে পারে!