বেকায়দায় পড়েছেন স্বল্প আয়ের অভিভাবক
এম সাইফুল ইসলাম
খুলনা মহানগরীর প্রায় প্রতিটি স্কুলই এখন শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের সাথে বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
শিক্ষকরা বলছেন, তারাও অসহায়। বেতন আদায় না করলে তাদের নিজেদেরই বেতন হবে না। তারাও বেকায়দায় আছেন বলে জানান। তারা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তাদেরও কারও কারও বেতন হয়নি। কেউ পূর্ণ বেতন পাচ্ছেন না। আবার কারো অর্ধেক বেতন নিয়ে ই খুশি থাকতে হচ্ছে।
করোনার কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পরীক্ষার বদলে শিক্ষার্থীদের নেয়া হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট। এর আগে শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের চাপ দিচ্ছে খুলনা মহানগরীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলে অভিযোগ করছে শিক্ষার্থী ও তার অভিবাবকরা।
স্বল্প সময়ের মধ্যে সন্তানের বেতনের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক অভিভাবক। সরকারি-বেসরকারি স্কুলে এই টাকার চাপ অব্যাহত রয়েছে। কোথাও আবার জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
মিতু আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, আগে বেতনের টাকা দিতে বলা হচ্ছে স্কুল থেকে। তারপর অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কেসিসি উইমেন্স কলেজে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা করা হচ্ছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রত্যেককে বেতন পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে।
মহানগরীর এ- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, চলতি বছরের আট মাস বেতন বকেয়া রয়েছে।
এ আট মাসে শিক্ষার্থীদের বেতন চার থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে। এর আগেও যাদের বকেয়া ছিল তাদের মোট বকেয়ার পরিমাণ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন অভিভাবক বলেন, আমরা অল্প বেতনে চাকরি করি। এত টাকা একসঙ্গে দেব কিভাবে? সরকার করোনার সংকটকালে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদেরও করোনাকালের বেতন মওকুফ করা উচিত।
খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কেসিসি উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ তৌহিদুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি নয়। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয় শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। এ কারণে টাকা আদায় করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, টাকা না দিলে যে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করা হবে না বিষয়টি এ রকম নয়। তাছাড়া অনেক অভিভাবকই এসে তাদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, করোনায় চাকরি হারিয়েছেন। তাই আমরা তাদের বেতন কমানোরও চেষ্টা করছি।
তবে সিটি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহ জিয়াউর রহমান শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের সাথে বকেয়া বেতন পরিশোধের নোটিশের কথা স্বীকার বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করেই শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের সাথে বকেয়া বেতন পরিশোধের নোটিশ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দ্বারা বেতনের সকল টাকাই ফান্ডে জমা হয়। কারণ আমাদের বেতন সকল খরচ কেসিসি বহন করে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উপপরিচালক এ এস এম আব্দুল খালেক বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের সাথে বকেয়া বেতন পরিশোধের নোটিশ সম্পর্কে আমার জানা নেই। এ ধরনের কোন নির্দেশনা আমরা দিই নাই। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।