
জন্মভূমি ডেস্ক : কর তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি এলিমেন্ট মাত্র, এটি সমস্যার সমাধান নয় বলে মন্তব্য করেছে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কামাল আহমেদ। ২০৪০ সালের মধ্যে ধূমপানসহ তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিতে ধূমপায়ীদের অভ্যাস ছাড়তে সহযোগিতা ও ক্রিমিনালাইজেশন জরুরি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে গবেষণা ও এডভোকেসি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের ‘সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কামাল আহমেদ বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসার অঙ্গিকার রয়েছে। তবে বাস্তবে এর প্রতিফলিত দেখা যাচ্ছে না। সিগারেটের বিক্রি ও ব্যবহারকারী ক্রমেই বাড়ছে। এভাবে চললে আগামী ১৬ বছরে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না।
শুধুমাত্র করারোপের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু করের মাধ্যমে সমাধান খুঁজলে সমাধান পাওয়া যাবে না। তবে করারোপটাও জরুরি। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে তবে প্রকৃত আয় কমেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। তাই কর হতে হবে মুদ্রাস্ফীতির বেশি। মানুষ অভ্যাসের কারণে কষ্ট করে হলেও সিগারেট কিনে খায়। আইন আছে, কিন্তু তা কার্যকর করার সামর্থ্য পুলিশের নেই। তারা তাদের অন্য দায়িত্বগুলো পালন করতে হিমশিম খাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে নিরুৎসাহী করার কাজ করতে হবে। একে ক্রিমিনালাইজেশন করতে হবে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ, রেস্টুরেন্ট মালিক, রিকশাচালক থেকে শুরু করে সবাই ভূমিকা পালন করতে পারে। ধূমপায়ীদের মধ্যে অপরাধবোধ সৃষ্টি করাতে হবে।
বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে সিগারেটে প্যাকেটের উপর দেওয়া হয়। ফলে প্যাকেট দেখলেই গা ঘিনঘিন করবে। আমাদের দেশে ‘সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ এর বাইরে ছোট পরিসরে ছবি থাকে। ধূমপায়ীদের মানসিক চাপ বাড়াতে পুরো প্যাকেটে বীভৎস ছবি ব্যবহার করতে হবে। তামাক দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। অথচ নানা উপায়ে সিগারেটের বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে। তারা ম্যারাথন ও গাছ লাগানো কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচারণা করছে। পেছনের পথ দিয়ে এই প্রচারণা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। তামাক চাষ বন্ধে পাল্টা প্রণোদনার সুযোগ রাখতে হবে।
তামাক ব্যবহারকারীদের অভ্যাস পরিবর্তনে সহযোগিতা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। সিগারেট ব্যবহারকারীরা যেন ভ্যাপিং এর মতো নতুন প্রোডাক্টে আসক্ত না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য একদম শিশু বয়স থেকে ধরতে হবে। প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবিত আইনের আদলে নতুন প্রজন্মের তামাক দ্রব ক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে। কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীরা তামাক পণ্য নিয়ে তাদের মাঠ পর্যায়ের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে আয়োজকদের প্রতি পরামর্শ ও প্রশ্ন জানতে চান। উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী তার বক্তব্যে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব প্রশ্নের জবাব দেন। কর্মশালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিবার আমরা যখন কোনও প্রস্তাবনা নিয়ে যাই আমাদের বলা হয় আরও কয়েকমাস আগে আসলে বিষয়টা হয়ে যেত। তাই আমরা এবার বাজেটের আগের বছরেই কাজ শুরু করেছি। আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশের লক্ষ্যে একটি কার্যকর করনীতি চাই। এটি একক সমাধান নয় তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
উন্নয়ন সমন্বয়য়ের জ্যৈষ্ঠ প্রকল্প সমন্বয়কারী জাহিদ রহমানের সঞ্চালনায় কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বিসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।