সিরাজুল ইসলাম শ্যামনগর : গ্রীষ্মের এই সময়ে বাইরে তীব্র রোদের আঁচ। গরমে কাঁচা আমের স্বাদ আমাদের এনে দিতে পারে স্বস্তি। কাঁচা আমের শরবত, চাটনি, আম দিয়ে ডাল, ভর্তা, আম পান্না আরো কত পদ তৈরি করে খাওয়া হয়। তবে শুধুই কি স্বাদ? কাঁচা আমের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি?চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা বলছেন, কাঁচা আম লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। লিভার শরীরকে দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি, হজম এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখে। লিভারের রোগ হলে দুর্বল হয়ে পড়ে শরীর। দেখা দেয় নানা ধরনের রোগ। চিকিৎসকরা বলছেন, ‘‘বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কাঁচা আম বাইল উৎপাদনে সাহায্য করে, যা লিভারের কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি।’’
কীভাবে কাঁচা আম লিভারকে ভালো রাখে?
১. শরীরকে দূষণমুক্ত করার জন্য প্রথমে শরীরে যাওয়া ফ্যাটকে ভাঙে লিভার। তার পরে তা থেকে দূর করে বিষাক্ত বা দূষিত পদার্থকে। বাইল সেই প্রক্রিয়ার জন্য জরুরি। কাঁচা আম সেই বাইল তৈরি করে লিভারকে সাহায্য করে। বাইল ফ্যাট শোষণ করতে সাহায্য করে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক বিপিন।
২. এ ছাড়া কাঁচা আমে থাকে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার, যা এই দূষণমূক্তির প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
৩. কাঁচা আমের শাঁসে থাকে লুপেয়োল নামের একটি উপাদান, যা লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।
এ ছাড়া কাঁচা আম আর কী উপকারে লাগে?
হার্টের স্বাস্থ্য: কাঁচা আমে রয়েছে ভিটামিন বি এবং ফাইবার, যা কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনেও সাহায্য করে। ফলে হার্ট ভালো থাকে।
হজমে সহায়ক: কাঁচা আমে আছে প্রাকৃতিক হজমকারী উপাদান, যা পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, অ্যাসিডিটির সমস্যা দূরে রাখে।
দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য: দাঁতের ক্ষয় কমানোর পাশাপাশি দাঁতের গোড়া মজবুত করে কাঁচা আম। এমনকি, মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও কাঁচা আম কার্যকরী। আবার ভিটামিন সি-এর অভাবে মাড়িতে যে স্কার্ভি রোগ হয়, তা-ও দূরে রাখা সম্ভব কাঁচা আম খেলে। কারণ, কাঁচা আমে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন সি। দেহের দৈনিক ভিটামিন সির চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করতে পারে একটি কাঁচা আম।
রক্তের অসুখ: রক্তাল্পতা, রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা, হেমোফিলিয়ার মতো রক্তের অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে কাঁচা আম। এর ভিটামিন সি এবং অন্য পুষ্টিগুণ কোলাজেন সংশ্লেষে সাহায্য করে, যা রক্তবাহী নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সঞ্চালন ভালো করে। রক্তে নতুন কোষ তৈরি করতেও সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমানোর চেষ্টা করলে পাকা আম খাওয়ায় বিধিনিষেধ থাকতেই পারে। কিন্তু কাঁচা আমে তা নেই। তার কারণ, কাঁচা আমে ক্যালোরি অত্যন্ত কম। তাতে থাকা শর্করাও কম। বদলে রয়েছে ফাইবার। তাই ওজন কমানোর খাদ্যতালিকায় এই গ্রীষ্মে এক বেলা কাঁচা আমের স্যালাড রাখা যেতেই পারে।
ত্বক, চুল ও চোখ: কাঁচা আমে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তিও ভালো রাখে।
কতটা খেতে পারেন?
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য কাঁচা আম খেতে বলা হয়। কাঁচা আম শরীরে আরো নানা উপকারে লাগলেও কাঁচা আম খাওয়ার পরিমাণের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি। অতিরিক্ত কাঁচা আম খেলে তা থেকে পেটব্যথা, পেটখারাপ, গলায় অস্বস্তির মতো সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে, কাঁচা আম খাওয়ার পরেই ঠান্ডা পানি খেতে বারণ করছেন পুষ্টিবিদেরা। তাতে গলায় অস্বস্তি বাড়তে পারে।
কাঁচা আমের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ক্ষতি

Leave a comment