তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে খুলছে সুন্দরবনের দ্বার
শেখ মোহাম্মদ আলী, শরণখোলা : দীর্ঘ তিন মাস বন্ধের পরে আগামীকাল শুক্রবার হতে খুলে যাবে সুন্দরবনের দ্বার। ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে শুরু হবে সুন্দরবনে মাছ ধরা ও পর্যটকদের আনাগোনা। এ লক্ষ্যে জেলে ও বনজীবিরা নৌকা ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য প্রস্ততি নিয়ে বসে আছেন। অপরদিকে, নিষেধাজ্ঞায় বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয়ে জেলেদের তালিকা পাঠানো হলেও এখনো কোন বরাদ্দ আসেনি।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনে মৎস্য ও বণ্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরা ও পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বনবিভাগ। বনে মাছধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার জেলে ও পর্যটনের সাথে জড়িত বনজীবিরা। শরণখোলার পানিরঘাট এলাকার জেলে রুস্তম আলী, বগী গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীর, রাজাপুর গ্রামের বেলাল হোসেনসহ অনেক জেলে বলেন, গত তিন মাস মাছ ধরতে না পেরে অর্থ কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে তাদের দিন কেটেছে। সংসার চালাতে এনজিও এবং মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা সংগ্রহ করায় তাদের ঋণের বোঝা বেড়েছে। আগামী শুক্রবার থেকে সুন্দরবনে যাওয়ার লক্ষ্যে নৌকা ও ট্রলারে জাল ও খাদ্যসামগ্রী বোঝাইসহ সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করে এখন সময়ের অপেক্ষা করছেন বলে জেলেরা জানান এ ছাড়া সুন্দরবনে মাছধরা নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা আগামীতে এক মাস কমিয়ে দুই মাস করার জন্য বনবিভাগের প্রতি দাবী জানিয়েছেন ঐ জেলেরা।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব সুন্দরবন (টোয়াস) এর সেক্রেটারি নাজমুল আযম ডেভিড ইত্তেফাককে বলেন, সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও সুন্দরবনের করমজলে পর্যটকের আসা যাওয়া ঠিকই ছিলো। নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবনের তেমন কোন লাভ হয়নি বলে তিনি মনে করেন। তিন মাস পর্যটন বন্ধ থাকায় তাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ধার দেনা ও ব্যাংকের ঋণ করে বেকার হয়ে পড়া দেড় সহস্রাধিক গরীব পর্যটন শ্রমিক পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে হয়েছে জানিয়ে টোয়াস সেক্রেটারি আরো বলেন, ১সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনের দ্বার খুলে দেওয়া হলেও তাতে পর্যটন ব্যবসায়ীদের তেমন একটি লাভ হবে না কারণ এখন পর্যটনের অফসিজন। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটনের মৌসুম।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান বলেন, দীর্ঘ তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনে জেলেদের মাছধরা ও পর্যটকের যাতায়াতের জন্য ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাস (অনুমতিপত্র) দেওয়া শুরু হবে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দীর্ঘ তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে ও বনজীবিরা সুন্দরবনে যেতে পারবেন। তিন মাসের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ থেকে ৫ হাজার ৬শ জেলের একটি তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনো কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে ডিএফও জানিয়েছেন।