তালা উপজেলার কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগে অনিয়মের কারনে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। শনিবার সকালে কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারীর শূন্য পদে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০মিনিট পর এই ঘটনা ঘটে।
ঐ পদে তাপস ঘোষ নামের এক পরীক্ষার্থী অভিযোগে করে বলেন, “দশদিন পূর্বে আমি প্রধান শিক্ষক গৌতম দাশের সাথে অত্র স্কুলের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। গত মঙ্গলবার রাতে প্রশ্নপত্র দেওয়ার নামে তিনি আমার কাছ থেকে দেড়লাখ টাকা নগদ নেন। অত:পর তালবাহানা শুরু করেন। শনিবার সকালে এসে গোপন সূত্রে জানতে পারি তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে চ‚ড়ান্ত নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি এখন চরমভাবে প্রতারিত হয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছি।
এ কথা বলতে বলতে তাপস ঘোষ বিষয়টা নিয়ে অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তার চিৎকারে স্থানীয়রা ও গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে জড়ো হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে নিয়োগ পরীক্ষায় আসা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের লোকজন নিয়োগ স্থগিত রেখে চলে যান।
অত:পর স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার সেখানে গিয়ে তাপস ঘোষ ও স্কুলের ম্যানিজং কমিটির সাথে দফারফা শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। যদিও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি বানোয়াট বলে উড়িয়ে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
কুমিরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রকিকুল ইসলাম জানান, ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগের নামে অধিকাংশ প্রার্থীর কাছ হতে গোপনে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছে। ৯ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিকারের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি দরখাস্ত করেন। শনিবার সকালে কুমিরা বাজার এসে তিনি জানতে পারেন স্কুলের ভিতরে টাকার বিষয়ে গোলযোগ চলছে। এ সময় প্রধান শিক্ষকের প্রতারণার কারণে তাপস ঘোষ চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তথা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ^াস প্রদান করেন।
এ বিষয়ে কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম দাশ জানান, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের প্রার্থী তাপস ঘোষ আমার নামে অপপ্রচার দিয়ে বেড়াচ্ছে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, দুই তিনদিন আগেও তাপস আমার কাছে এসেছিল। আমি তাঁকে বলেছিলাম কারোর সাথে অবৈধ লেনদেন থেকে বিরত থাকতে। যদি এ ধরনের কাজ সে বা কেউ করে থাকে তার দায়ভার আমি নেব না।
এছাড়া যদি প্রধান শিক্ষক বা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে সু-নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলা প্রশাসক আমাকে বিষয়টি জানালে আমি সাথে সাথে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দিই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম দাশের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, বিষয়টি আমি শোনামাত্র জেলা শিক্ষা অফিসারকে অবগত করে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে দিই। পরবর্তী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।