
কেশবপুর প্রতিনিধি : কেশবপুর থানা প্রাঙ্গণের গাছে গাছে কয়েক বছর ধরে বাস করে আসছে ঝাঁক ঝাঁক বিরল প্রকৃতির পানকৌড়ি ও বক। থানা প্রাঙ্গণের পাশে মধু সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচলকারীসহ থানার স্টাফরাও এগুলো দেখে অভ্যস্ত।
কালের বিবর্তনে প্রকৃতির নিষ্ঠুর ও বিরূপআচার-আচরণে, মানুষের অত্যাচার-অনাচারে হারিয়ে যেতে বসা বক ও পানকৌড়ি পাখিদের কিছুই বলেনা তারা। তাইতো থানা প্রাঙ্গণের ওই সকল গাছগুলো পাখিদের নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, কেশবপুর থানা প্রাঙ্গণের মধ্যে বড় আকৃতির গাছগুলির মগডালে বাসা বেঁধে অবস্থান করছে পানকৌড়ি এবং বক।
এখানে বাসা তৈরি করে রীতিমত সংসার পেতেছে বিলুপ্তপ্রায় পান কৌড়ি ও বক প্রজাতিরা। থানা প্রাঙ্গণের পুকুর, একটু অদূরে বয়েচলা হরিহর নদ ও জলাশয় থাকায় সেখান কার মাছ খেয়েই ফিরে আসে নীড়ে।
লম্বায় পানকৌড়ি সাধারণত ৫১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। গা, বুক উজ্জ্বল কালো। গলায় সাদা একটি দাগ আছে, পাখার নিচের পালক ধূসর রং। লেজ কুলার মতো। ঠোঁট সরু আর প্রান্ত ভাগ বাঁকানো। পা দুটি খাটো। তবে হাঁসের পায়ের মতো পানকৌড়ির পা। চোখ সবুজাভ বাদামি। মাথায় ঝুঁটির মতো পালক ও আছে। থানার পূর্ব পাশের ৪ তলা ভবনের এক স্কুল শিক্ষিকা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানে বক ও পানকৌড়ি পাখির থানা প্রাঙ্গণের গাছে কয়েক বছর বসবাস করতে দেখে আসছি প্রতিদিন সকালে তারা চলে যায় ঝাঁক ধরে খাদ্যের সন্ধানে, ফিরে সন্ধ্যায়।
এসকল দৃশ্য ছাদে বসে ভোগকরি।
পান ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, এখানে কেউ পাখিদের উপর অত্যাচার করেনা। নিরাপদে থাকতে পেরে শুধু বক ও পানকৌড়ি নয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে বাসা তৈরি করেছে।
সকাল সন্ধ্যায় তাদের ডাক শুনে ব্যবসায়ীদের ও মন ভরে যায়। স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে ঝড় ও বৃষ্টিপাত কম হওয়া ডিম ও বাচ্চা নষ্ট না হওয়ার কারণে এবছর পাখির সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
এখানে এসে অনেককে দেখা যায় পাখির কিচিরমিচির ডাক ও উড়া উপভোগ করতে,শীত পড়ায় বাইরের পাখিদের ও আনাগোনা বেড়েছে এলাকায়। কেশবপুর শহর জুড়ে উড়ে বেড়ানো পাখিগুলো দেখে শহরের মানুষ মুগ্ধ হয়।
প্রতিবছর মৌসুমে শতশত বক ও পানকৌড়ি আসে। থানার পুকুর পাড়ের গাছগুলোতে অস্থায়ী বাসাবানিয়ে বংশবিস্তার করে থাকে। সন্ধ্যা হলেইপাখিদের কিচিরমিচিরে থানা প্রাঙ্গণ মুখরিতহয়ে ওঠে।
উপজেলা বন বিভাগের তথ্যে জানা গেছে , থানা প্রাঙ্গণের গাছে নিরাপদে থাকার কারণে পাখির অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। এটিই এখন উপজেলার ভেতর সবচেয়ে পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
অধিকাংশ ডিম থেকেই বাচ্ছা জন্ম নেয়। তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহে ডিম থেকে ছানা বেরহয়। তিন বছর বয়সে এরা বয়োঃপ্রাপ্ত হয়।
এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মফিজুর রহমান বলেন, থানা প্রাঙ্গণের ভেতর পাখির নিরাপদে থাকা ও তাদের খাদ্যের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাখির বাসা থেকে ছানা মাটিতে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আবারও গাছে বাসায় উঠিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া পাখির খাদ্যের জন্য থানা প্রাঙ্গণের ভেতর পুকুরে পোনা মাছ ছাড়া হয়। পানকৌড়ি ও বক এ পুকুর থেকে মাছ শিকার করে খায়।