জন্মভূমি রিপোর্ট : কক্সবাজার সদর মডেল থানা এলাকায় আততায়ীর আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে নিহত খুলনা সিটি কর্পোরেশন-কেসিসি’র সাবের কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানী টিপু (৫৫) হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া দুই জনকে শানবার দুপুরে থানা পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে। তবে, রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়নি।
আসামিরা হচ্ছেন, কেসিসি’র ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং আওয়াামী লীগের ওই ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালু এবং কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মেজবাহ উল্লাহ ভুট্টো। র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন এর একটি টিম তাদেরকে ওই শহরের ভিন্ন-ভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছিল। শনিবার দুপুরে তাদেরকে থানায় হস্তান্তরের পর পুলিশ দু’ অভিযুক্তকে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে শুক্রবার নিহতের ভগ্নিপতি ইউনুস আলী শেখ কক্সবাজার সদর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ কি হতে পারে, এ ব্যাপারে তিনি এজাহারে কিছু উল্লেখ করেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মোঃ নূরুজ্জামান দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলের একটি গুলির খোসা আলামত হিসেবে জব্দ হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনের রহস্য উদঘাটন, ঘাতকের ব্যাবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চলছে। যদিও দুই আসামিকে রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদনের ব্যাপারে রাত ৮ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
র্যাব জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার শহরে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে রাস্তার ফুটপাতে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা গোলাম রব্বানী টিপুর মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে টিপু বৃহস্পতিবার সকালে আসামি শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালুর সাথে রুমি নামে এক নারীসহ কক্সবাজারের গোল্ডেন হিল হোটেলে ওঠেন জানিয়ে র্যাব-১৫ এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সন্ধ্যার পর ওই নারীকে সঙ্গে নিয়ে টিপু হোটেল থেকে বের হন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সেই নারী পলাতক রয়েছে।
কি হতে পারে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ? এ ব্যাপারে থানা পুলিশ এখনও নিশ্চিত কিছু জানতে পারেনি। স্থানীয় কয়েকটি সূত্র বলছেন, নিহত গোলাম রব্বানী টিপু ৯০ দশকের শেষের দিকে চরমপন্থী সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই সংগঠনের এক নেতার সাথে মতবিরোধের জেরে পরবর্তীতে তিনি আরেকটি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। বিগত আওয়ামী শাসনামলে তিনি শেখ সোহেল এবং কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থেকে মহানগরী খুলনার অপরাধ জগতে দাপুটে প্রভাব বিস্ত্রা করেছিলেন। তিনি পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে মাদক কারবার পরিচালনা করতেন। পাট ব্যাবসায়ী, তেলের ডিপোসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদাবাজি করতেন। তিনি নগরীর দৌলতপুর থানা এলাকায় দিনে-দুপুরে ফিল্মি স্টাইলে খুন হওয়া ঠিকাদার হুজি শহিদসহ দুইটি হত্যা মামলার আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কেসিসি’র সাবেক কাউন্সিলর টিপু হত্যা মামলা: দু’ আসামি কারাগারে, রিমাণ্ড চায়নি পুলিশ
Leave a comment