জন্মভূমি ডেস্ক : কোটাবিরোধী যে আন্দোলন চলছে, সেটি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, খুঁজে দেখতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সেই সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্যও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার (০৭ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এসএসসি-এইচএসসি ২০২৩ ও ২০২৪ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এসবিএসি ব্যাংকের সহযোগিতায় এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডিআরইউ।
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা একের পর এক কর্মসূচি দিচ্ছে, সমাধানের পথ কোথায়? এই আন্দোলন যৌক্তিক কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই দেশের বাইরে অপপ্রচার করে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বা সংগঠন করতে দেওয়া হয় না। আজকে যারাই এই আন্দোলন করছেন, রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে যে তারা এটি করতে পারছেন, এটা কি প্রমাণ করে না? বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে, বাক স্বাধীনতা চর্চার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কারও ওপরেই কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাক্স্বাধীনতা অবশ্যই আছে। তবে যে বিষয়টি নিয়ে এখানে আন্দোলন হচ্ছে বা একটি চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে বা সেটাকে বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হচ্ছে সড়ক অবরোধ বা ব্লকেড কর্মসূচির মাধ্যমে। যেহেতু আমরা সরকারে আছি, আইনের শাসনের প্রতি আমাদের অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং এটা যেহেতু উচ্চ আদালতে এখনো বিচারাধীন, এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রায় আমাদের সর্বোচ্চ আদালত থেকে না এলে, এই বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা আদালত অবমাননার শামিল হবে। যে কোনো ব্যক্তি এ বিষয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হয়তো মন্তব্য করতে পারে, কিন্তু দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে আদালতের জন্য অবমাননাকর কোনো বক্তব্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে বলতে চাই-অনেক সময় জনপ্রিয় অনেক বিষয়কে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রকারীরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। সেই ফাঁদে যেন আমরা পা না দেই। প্রথমত এটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে, আদালতের সিদ্ধান্তের পরে নির্বাহী বিভাগের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে। সেটার জন্য অবশ্যই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে, সেটি সমাধান না হওয়ার আগেই হঠাৎ করে আমি রাস্তায় নেমে এলাম, রাস্তাঘাট সব ব্লক করে দিলাম, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রশ্ন থাকতে পারে, এর পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র আছে কি না! কারণ স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করার জন্য অনেকেই অনেকভাবে অনেক জায়গায় উসকানি দেয়। আমরা দেখেছি, ৭৫ পরবর্তী সময় থেকে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বারংবার এমন একটা অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, যেখানে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীরা বারবার এগিয়ে যায়। সেই ধরনের কোনো প্রচেষ্টা হচ্ছে কি না, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
ডিআরইউয়ের সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভর সভাপতিত্বে ও কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীম। ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিনের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এসবিএসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নুরুল আজিম।
অনুষ্ঠানে এসএসসি-এইচএসসি ২০২৩ ও ২০২৪ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তারা ডিআরইউয়ের সদস্যদের সন্তান। পাশাপাশি ডিআরইউয়ের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের হাতেও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।