খুবি প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, ‘গণহত্যা’ ও গণ-গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষকরা। এ সময় নিহত ছাত্র ও জনগণের হত্যার যথাযথ বিচার দাবি করেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বরে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে এ মানববন্ধন করা হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের প্রায় শতাধিক শিক্ষক মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় তাঁরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হত্যা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানান এবং গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান।
অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. অনির্বাণ মোস্তফা বলেন, ‘এ প্রজন্ম আমাকে শেখাল, দাসত্ব কীভাবে ভাঙতে হয়। এ প্রজন্মকে আমি স্যালুট জানাই। আমি শিক্ষক বলব না বরং ওরাই আমার শিক্ষক। ওরা আমাকে শেখাল কীভাবে দাসত্ব ভাঙতে হয়। কারণ, আমাদের মেধাটা আসলে আস্তে আস্তে জিভে চলে এসেছে। সেই জিভের চর্চাই আমরা বেশি করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে বিচারের দাবি নিয়ে আসিনি। কারণ, রাষ্ট্র যখন গুলি করে তখন কোথাও বিচার পাওয়া যায় না। শুধু জানাতে এসেছি, আমার ছাত্ররা আমাকে দাস থেকে মুক্ত হতে শিখিয়েছে। সুতরাং, আমি আর দাস থাকছি না।’
ড. অনির্বাণ মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের দাসত্বের কারণেই আজ মুগ্ধ, আবু সাঈদদের মরতে হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে যখন আমরা দাস হই—তখন রাষ্ট্র থাকে না, জাতি থাকে না, সমাজ থাকে না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটা ছেলের গায়ে যদি হাত তোলা হয়, যদি হাজতে নেওয়া হয়, আমরা কিন্তু আবার যাব। তখন কিন্তু ঠেকাতে পারবেন না।’
ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি (এফএমআরটি) ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ বলেন, ‘এই দেশের ছাত্রসমাজ তোমাদের কাছ থেকে ভাই আমি শিখেছি। আমি পিএইচডি, ডক্টর অব ফিলোসফি করে যে ফিলোসফি আমি শিখতে পারি নাই, সেই ফিলোসফি আমি তোমাদের কাছ থেকে শিখেছি। আমার ডক্টর অব ফিলোসফি তোমরা দিয়েছ। ছাত্রসমাজের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। তোমাদের এই ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আরো বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম এবং দেশের ভবিষ্যৎ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যে নৃশংসতা সংগঠিত হচ্ছে তাতে আমরা বাকরুদ্ধ, মর্মাহত ও ব্যথিত। এমন নারকীয়তা স্বাধীনতার পরে আর কখনও দৃশ্যমান হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আজকের এই ছাত্র আন্দোলনও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এজন্য এ আন্দোলনে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদেরকে আমরা শহীদ বলে চিহ্নিত করছি। একই সাথে চলমান ছাত্র হয়রানি এবং এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি। পাকিস্তান আমলে লুঙ্গি খুলে ধর্ম যাচাই করা হতো আর এখন মোবাইল দেখে রাজনৈতিক আদর্শ বিচার করা হচ্ছে। তাহলে পার্থক্য কোথায়? ছাত্রদের মেস ও বাসায় যেয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ইঁদুরের মত ফাঁদ পেতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এসবের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’