
নগরীতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ভ্রাম্যমান বিক্রেতারা, সল্প খরচে অধিক লাভ
অনুমোদনহীন যত্রতত্র এসব মাঠা বিক্রিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে
জন্মভূমি রিপোর্ট : সম্প্রতি সময়ে খুলনার সড়কসহ স্থানীয় এলাকায় হাকডাকে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ফার্মেন্টেড মিল্ক (মাঠা)। খোলা বাজারে ভ্রাম্যমান ভ্যানে বিক্রি হওয়া এসব মাঠার নেই কোনো বিএসটিআই’র অনুমোদন উৎপাদন বা মেয়াদ উর্ত্তীনের সময়সীমা। অনুমোদনহীন ভাবে যত্রতত্র এই মাঠা বিক্রিতে স্বাস্থ্যঝুকি বাড়ছে। অনুমোদনহীন এই মাঠা খেয়ে পেটের বিভিন্ন রোগ ব্যাধি, বিশেষ করে পেটের পীড়া, বমিসহ ডায়রিয়া হওয়ার প্রবনতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, খুলনায় বেশ কিছু এলাকায় অনুমোদনহীন ভাবে এসব ফার্মেন্টেড মিল্ক (মাঠা) তৈরীর কারখানা গড়ে ওঠেছে। বিশেষ করে সোনাডাঙ্গা এলাকায় তাকওয়া ডেইরী মাঠা, খালিশপুরস্থ নয়াবাটি মোড় এলাকায় আরিফা ডেইরী মাঠা, হার্ডবোর্ড মিল সংলগ্ন এলাকায় মা ডেইরী মাঠা, বিসমিল্লাহ ডেইরী মাঠে, চমক ডেইরী মাঠা নামের মাঠা কারখানা রয়েছে বলে জানা গেছে। অনুমোদনহীন এসব কারখানা হতে প্রতিদিন বেশ কিছু ভ্রাম্যমান ভ্যানের ট্যাংকিতে ৩০ লিঃ মাঠা নিয়ে খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে বের হয়। বিক্রেতাদের মাত্র ৫০০টাকা বেতন দিয়ে এসব কারখানা মালিকেরা সল্প খরচে অধিক লাভ করছে।
সচেতন মহল বলছেন, সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান ভ্যানে করে হকাররা ডাকহাকে বিক্রি করছে অনুমোদনহীন মাঠা। গরম পড়ার কারণসহ সু-স্বাদু হওয়ার দরুন শিশু হতে সব বয়সী মানুষেরাই বেশ আগ্রহী হয়ে খোলা বাজার হতে এসব মাঠা খাচ্ছে। মাঠা তৈরীতে যে গরুর দুধ, দই, চিনি ও পরিশোধিত পানি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে , আদৌও তা মানসম্মত কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে কোন পরিবেশে তৈরী হচ্ছে এবং বাসি মাঠা বিক্রি হচ্ছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। আর্শ্চ্যযের বিষয়, শহরের বিভিন্ন মিস্টান্ন ভান্ডার গুলোতে যেখানে ১ কেজি দই’র দাম সর্বনিন্ম ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে আরিফা ডেইরী মাঠা কারখানায় মাত্র ১১০ টাকায় বিক্রি করছে ১ কেজি দই।
আরিফা ডেইরী মাঠা বিক্রেতা গোলাম মোস্তফা জানান, অনুমোদন আছে কিনা জানিনা। কারখানার মালিক বলতে পারবে। আমি প্রতিদিন ৩০ লিঃ মাঠা নিয়ে মার্কেটে বের হই। খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে প্রতি গ্লাস ২০ টাকা বিক্রি থাকি। মালিক আমাকে প্রতিদিনের বেতন হিসাবে ৫০০ টাকা দিয়ে থাকে। কি দিয়ে তৈরী হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, দই, চিনি, দুই ও পানি দিয়ে। কি পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে জানতে চাইলে তিনি সঠিক ভাবে বলতে পারেননি। বিক্রির জন্য আনা মাঠা থেকে গেলে কি করেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মালিক ফ্রিজে রেখে দেন। আমার কোনো খরচ নেই ভ্যানও কারকাখার।
ভুক্তভোগী সুজন জানান, বেশ কিছু আগে আমার বাসার সামনে মাঠা বিক্রির গাড়ি দাড়িয়ে ছিল। আমি ২০ টাকা দিয়ে এক গ্লাস কিনে খায়। পরবর্তীতে পেটে ব্যথা শুরু হয়। গাড়ীর উপর থেকে ভেতরে কি আছে দেখা যায় না। সঠিক নিয়মে তৈরী হয় কিনা জানিনা। পরে জানতে পারি এর কোনো সরকারি অনুমোদন নেই।
অভিভাবক মো. আনিছুর রহমান জানান, বাচ্চারা মাঠা সু-স্বাদু হওয়ার কারণে তৃপ্তি করে খায়। কিন্তু কখনো খোজ খবর নিয়ে দেখি নাই সঠিক এবং গুনগত মান সম্পন্ন উপাদান দিয়ে তৈরী করছে কিনা। তবে সন্দেহ গাড়ীতে কোনো বিএসটিআই’র অনুমোদনের কোনো লোগো লাগানো নাই, তাই হয়তোবা অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন কোম্পানী গুলো এই মাঠা বিক্রি করছে। যেহেতু অনুমোদন নাই, সেহেতু স্বাস্থ্য ঝুকি আছে।
এ ব্যাপারে আরিফা ডেইরী মাঠার মালিক আলিয়ার হোসেন জানান, আমার বিএসটিআই’র কোনো অনুমোদন নাই। কেবলমাত্র ট্রেড লাইসেন্স আছে। গরমের মধ্যে মাঠা বেশ চাহিদা থাকে। প্রতিদিনই ৩০ লিঃ এর মতো প্রতি গাড়িতে বিক্রি হয়। তবে গরম কমে যাওয়ার দরুন বর্তমানে ১৫/২০ লিটার মাঠা বিক্রি হচ্ছে। মাঠা কিভাবে ঠান্ডা থাকে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, প্রতি ভ্যানের ট্যাংকির ভেতরে বরফের ৮/১০ বোতল ছেড়ে দেয়। এতেই মাঠা ঠান্ডা এবং ভালো থাকে। উৎপাদন ও মেয়াদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
এ ব্যাপারে খুলনা শিশু হাসপাতালের সিনিয়ন মেডিকেল অফিসার এস আরেফিন জানান, খোলা বাজার হতে কোনো খাবারই খাওয়া উচিৎ নয়। বিশেষ করে অনুমোদনহীন খাবার সমূহ। এসব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। যে সব পাত্রে এসব খাবার বিক্রি বা পরিবেশন করা হচ্ছে তা আদৌও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কিনা সেটি দেখার বিষয়। এসব খাবার খেয়ে ডায়রিয়া, বমিসহ পেটের বিভিন্ন রোগ ব্যাধি দেখা দিতে পারে। সচেতন ব্যক্তিদের এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ।
ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব জানান, শহরের মধ্যে যারা অনুমোদনহীন ভাবে ফার্মেন্টেড মিল্ক (দই/ মাঠা/লাবাং) তৈরীর কারখানা গড়ে তোলাসহ বাজারজাত করছে তাদের ব্যাপারে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় বিএসটিআই অফিসের সহকারী পরিচালক গোবিন্দ কুমার ঘোষ জানান, খুলনায় কেবলমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের ফার্মেন্টেড মিল্ক (মাঠার) লাইসেন্স আছে। খোলা বাজারে ভ্রাম্যমান ভ্যানে করে সেসব ফার্মেন্টেড মিল্ক (দই/ মাঠা/লাবাং) বিক্রি করা হচ্ছে তার কোনো অনুমোদন নাই। যারা অনুমোদন ছাড়া এসব মাঠা বাজারে বিক্রি করছে, তাদের ইতোপূর্বে অনুমোদন ছাড়া বিক্রয় করা হচ্ছে বিরত থাকতে বলছি। তারপরও তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিক্রয় চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।