বেড়েছে ধাঁরালো অস্ত্রের ব্যবহার
জন্মভূমি রিপোর্ট : মহানগরী খুলনার বিভিন্ন স্থানের সন্ত্রাসীরা খুন-জখমে হঠাৎ করে ধাঁরালো অস্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়েছে। গত সোমবার দপুর ১২ টা থেকে রাত নয় টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে খুলনা সদর এবং হরিণটানা থানা এলাকায় একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন ও দুই জনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তি যুবদলের একটি ওয়ার্ডের নেতা,আহতদের একজন কলেজ ছাত্র এবং অপরজন ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে একটি সন্ত্রাসী চক্রের সাথে যুক্ত ছিলেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নৃশংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।
শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা সজিব (২৯) শেখপাড়া এলাকায় পিতার ব্যবসায় সহযোগিতা করতেন। এ কাজের আড়ালে তিনি স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী চক্রের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। গত আওয়ামী সরকারের আমলে তিনি ওই বাহিনিতে জড়ালেও ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পরও তারা নিবৃত হননি। তদন্তের স্বার্থে পুলিশের একটি সূত্র চক্রটির ব্যাপারে এখনই বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে সজিব ও তার সহযোগীরা ৫/৭ টি মোটর সাইকেলযোগে হরিণটানা থানাধীন চিতেখোলা চেয়ারম্যানের ভিটা এল্কাায় গিয়েছিলেন। সেখানেই রাত নয় টার দিকে ধাঁরালো চাপাতি দিয়ে সজিবের দুই হাতে উপর্যপুরি কোপানো হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার দুই হাতের প্রায় সকল শিরা-উপশিরা কেটে গেছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ১২ টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হরিণটানা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) টিপু সুলতান দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, জখম হওয়া যুবককে হামলাারীদের ব্যাপারে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও সে কোনো জবাব দেয়নি। সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছে।
একই দিন সন্ধ্যায় খুলনা সদর থানাধীন আজমখান কমার্স কলেজের মধ্যে সন্ত্রাসীরা নওফেল (১৭) নামে সরকারি সুন্দরবন কলেজের এক ছ্রাত্রকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে। ভিকটিমের বাম হাতের একটি আঙ্গুল কেটে পড়ে গেছে। বা হাটুতেও জখম। তিনি খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নৃশংসতায় জড়িত কাউকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।
এর আগে দিনে-দুপুরে একই থানা এলাকার রেলওয়ে মসজিদের পেছনে যুবদলের ২১ নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি মানিক হাওলাদার (৩৫) কে সন্ত্রাসিরা ছুরিকাঘাতে মারাত্মক জখম করে। তার বুকে ও পেটে ধাঁরালো অস্ত্রটি দিয়ে আঘাত করা হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল চার টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার দুপুরে মরদেহ নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ জোহর জানাজা শেষে তাকে বসুপাড়া কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
থানা পুলিশ বলছে, সোমবার দুপুরে রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি মাদ্রাসার মাঠে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছিল। সেখানে লাইনে আগে-পরে দাড়ানো সংক্রন্ত বিষয় নিয়ে মানিক সেখানকার কয়েকজনের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এর এক পর্যায়ে আতৎায়ী তাকে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে সাজ্জাদ (৩০) নামে একজনকে গণপিটুনি দিচ্ছিল। তারা তুলি আক্তার (২০) নামে এক নারীকে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে তাদের আটক করে। সাজ্জাদ এখন খুমেক হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আছে। তুলিকে ৫৪ ধরায় গ্রেফতার করে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর অতি: চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আনিছুর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মানিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের একটি সূত্র জানান, নিহতের পরিবারের সদস্যদেরকে মামলা দায়েরের জন্য বার-বার তাগিদ দেয়া হলেও তখন পর্যন্ত কেউ আসেননি। থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ রাকিবুল ইসলাম দৈনিক জন্মভূমিকে বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।