
হারুন-অর-রশীদ
খুলনা ও বাগেরহাটে কৃষকের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বিনা চাষে অধিক লাভ। খরচও কম। কৃষকরা ধানের চেয়ে ভুট্টায় লাভের মুখ বেশী দেখায় প্রতি বছর আগ্রহ বাড়ছে। এ বছর ১৩শ’ ৫৫ হেক্টর ভুট্টার চাষ হয়েছে। আমন চাষের পর পতিত লবণাক্ত জমিতে সবুজের সমরোহ।
সূত্র জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকা সুষম সার প্রয়োগ ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এসআরডিআই প্রকল্পের সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করায় কৃষক এই সফলতা পাবে। গত বছরের দেখাদেখি এ বছরও কৃষক ঝুকছেন ভুট্টাচাষে তারা সোনালী স্বপ্ন দেখছেন। গত বছর কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এলাকার কৃষক ভুট্টা চাষের দিকে ঝুকছেন। আমন ধান ওঠার পর এলাকার জমি পতিত থাকে। এই জমিতে রয়েছে ভুট্টা চাষের উজ্জল সম্ভাবনা।
এ বছর বটিয়াঘাটায় ৭০০হেক্টর, দাকোপে ১৫০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ৯০ হেক্টর, ফুলতলায় ১৫ হেক্টর এবং বাগেরহাটের কচুয়ায় ২০০হেক্টর ও চিতলমারীতে ২০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টাচাষ করা হয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলায় ১৯৯৬ সালে ১০একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’র লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষনা কেন্দ্র। এই গবেষণা কেন্দ্র নিয়মিত গবেষণা করা হচ্ছে। এই কেন্দ্রের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই এলাকার ১১জন কৃষক ২০১৯ সালে ১০বিঘা জমিতে বিনা চাষে ডিবলিং পদ্ধতিতে চারা রোপন ও পলি ব্যাগের তৈরী চারা রোপণ করে এর কার্যক্রম শুরু করেন। এর পর প্রতি বছর চাষ বাড়তে থাকে। লবাণাক্ত এলাকায় একটি মাত্র ফসল হত। আমন ধানে ও শুস্ক মৌসুমে আবাদের মুল সমস্যা হল লবাণাক্ততা। আমন ধান কাটার পর জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এখন এই পতিত জমিতে সোনা ফলছে। এ বছর হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ কার্যক্রম চলছে এই লবণাক্ত এলাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ মাঠ পর্যায়ে ভুট্টার চাষ ছড়িয়ে দিলেও এই প্রকল্প থেকে কৃষকদের বীজ, সার কীট নাশক ও প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার সহযোগিতা বিনা মূল্যে দেয়া হয়েছে। নভেম্বর মাস থেকে রোপন শুরু হয়। অনেক গাছে এখন ফুল ও মোচা আসছে। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে কৃষক তার সোনালী ফসল ঘরে তুলতে পারেব। বিনা চাষে ৩০-৪৫ দিন আগে জমিতে বীজ ও ফসল কর্তন করা যায়। লবাণাক্ততা বৃদ্ধি ও ঝড় বৃষ্টি আসার আগে ফসল ঘরে তোলা যায়।
বটিয়াঘাটার দেবীতলা গ্রামের কৃষক অংশুমান রায়, ভুপতি রায় ও বনস্পতি রায় এবং বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার আলী আহমেদ শেখ, মো. রুহুল আমিন ও কামরুল ইসলাম বলেন, এ বছর বাম্পার ফলন ভালো হয়েছে। বিনা চাষে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এসআরডিআই প্রকল্পের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে কৃষকরা আজ সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌছে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর (এসআরডিআই অংগ) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অমরেনাথ বিশ^াস বলেন, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের সকল প্রকার উপকরণ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। সরকার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটাতে কাজ করছেন। সে আলোকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ভুট্টাচাষে কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন।