আলকামা রমিন, খুবি : শিক্ষার্থীদের ছুটোছুটি আর আড্ডার শব্দে মুখরিত ক্যাম্পাস একদম সুনসান। লম্বা ঈদের ছুটি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এমন চেহারা দেখলে শিক্ষার্থীদের তো বটেই, যে কারোরই মন খারাপ হওয়ার কথা। হইচই নেই, আড্ডা নেই। ক্যাফেটেরিয়ার টেবিলগুলোর ওপর পড়ে আছে শুকনো পাতা। এ নিস্তব্ধতার মধ্যে কিছুটা প্রাণের সঞ্চার হয়, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসেন। কারণ, তাদের দেখলেই ছুটে আসে ক্যাম্পাসে থাকা কুকুর আর বিড়ালগুলো। শুধু যে খাবারের আশায় তা নয়, নিশ্চয়ই ভালোবাসা থেকেও।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একদল শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে “স্নেহTail” প্ল্যাটফর্মের প্রায় অর্ধ শতাধিক তরুণ এই মহৎ কাজের সাথে যুক্ত আছেন। এর সাথে নতুন যুক্ত হয়েছে নবীন শিক্ষার্থী জিহাদ কাজী শৈশব। এর আগেও তিনি নিজে প্রানিদের যত্ন নিতেন।
ফাঁকা ক্যাম্পাসের ক্ষুধার্ত কুকুরগুলোর জন্য খাবার নিয়ে আসেন তাঁরা। প্রশাসনের নির্দেশনায় ক্যাম্পাস যখন বন্ধ হলো, বিপাকে পড়ে গেল কুকুরগুলো। শিক্ষার্থী নেই, দোকানপাট বন্ধ। জনমানবশূন্য ক্যাম্পাসে কুকুরগুলো খাবারের অভাবে ভুগছিল। তখন এগিয়ে এসেছেন “স্নেহTail” এর দল। শুধু ক্যাম্পাসে নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচকানাচে ও হলের প্রাণীগুলোর জন্য খাবার নিয়ে ছোটেন তাঁরা। তাঁরা এ কার্যক্রমের নাম দিয়েছে ‘প্রাণীপ্রেম’।
জানা গেল, এ বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করেন তাঁরা। সপ্তাহে প্রতিদিন খুবি ক্যাম্পাসের প্রানিগুলোর খোঁজখবর নেন। প্রায় ১০ জায়গায় ঘুরে ঘুরে কুকুরগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করেন। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু দীর্ঘ ছুটির সময় এই কুকুর বিড়ালগুলো বাচিয়ে রাখা বড় চ্যানেন্স হয়ে পড়ে। বিশেষ করে তাঁরা ক্যাম্পাস ছুটি সময়ে প্রানিগুলোর খাওয়া ও অন্যান্য যত্ন নিয়ে থাকে।
এই ঈদে বন্ধের ভিতর তাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ০২ জুন থেকে। অব্যাহত ছিলো জুনের ১৩ তারিখ পর্যন্ত। প্রায় ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিদিন সাড়ে ৩ কেজি চাল দিয়ে রান্না খাবার তুলে দেওয়া হয় ক্যাম্পাসের প্রায় ৫০ টি কুকুর বিড়ালদের মুখে। তৈরি এসব খাবার রান্না করেন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়া নবীন শিক্ষার্থী শৈশবের মা। তিনি নিজ উদ্যোগে মাছের মাথা আর লেজ দিয়ে তরকারি রান্না করে ভাতের সাথে মিশিয়ে দেন এই প্রাণীদের জন্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণিত ডিসিপ্লিনের নবীন শিক্ষার্থী জিহাদ কাজী শৈশব বলেন, আমি নিজ উদ্যেগে ২০২১ সাল থেকে রাস্তার কুকুরদের খাওয়াতাম। গত রোজার ঈদের ছুটিতেও আমি নিজে ক্যাম্পাসের কুকুরদদের খোজ খবর নিয়েছি। কিন্তু এবার আমরা অনেকে। এবার আমি একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছি এর মাধ্যমে আমি আমাদের কাজকে আরো সহজ করতে পারব। আমি প্রতিদিন মোটরসাইকেলে করে ক্যাম্পাসের এই প্রাণীদের জন্য খাবার নিয়ে আসি। আশা করি বন্ধের ভিতর ক্যাম্পাসের সকল প্রাণীদের আমরা খাবার দিতে পারব।
এই কাজের সাথে যুক্ত তাসমিয়া হাসান ও তরিকুল ইসলাম তাঁরা বলেন, বন্ধের ভিতর ক্যাম্পাসের এই প্রাণীগুলোর জন্য মানবিকতা ও সহানুভূতির আসল পরীক্ষা হয়। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাক প্রাণীদের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব আছে, এবং সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি।
ইংরেজি ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তামান্না রহমান তন্নী বলেন, আমরা দুইজন মিলে প্রথমে এই সংগঠনটা তৈরি করি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ওদের জন্য ডগ শেড তৈরি করা, ক্যাম্পাসের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় ওদের খাবারের বেবস্থা করা, ক্যাম্পাসের কুকুর বিড়াল চিহ্নিত করে তাদের বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে স্পে বা নিউটার করানো। প্রাণীদের প্রতি সচেতনতা তৈরী করা।
খাবারের টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সিংহভাগ আমার সদস্যদের ব্যক্তিগত চাঁদা থেকেই এই খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের পেজ থেকে ফান্ড রাইজিং এর পোস্ট দিলেও বাইরে থেকে সামান্যই আসে।
