জন্মভূমি ডেস্ক : বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছরে দেশকে সব দিক থেকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আগামীতে সেই অগ্রগতি যেন থেমে না যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ যেন দাঁড়াতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি।
রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তনের বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আমরা সরকার ক্ষমতায় আছি। ২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৩, এটি এখন এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের ছাত্র-ছাত্রীরা উপলব্ধি করতে পারবে না ২০ বছর আগে কেমন বাংলাদেশ ছিল। সেখানে ক্ষুধা-দারিদ্র ছিল, বৈজ্ঞানিক কোনো কিছু ছিল না। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান ও কম্পিউটার শিক্ষা চালু করি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন চেয়েছিলেন তেমন বাংলাদেশ গড়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আমার কাছে প্রধানমন্ত্রীত্ব কিছু না। প্রধানমন্ত্রী হলে বহু আগেই হতে পারতাম। কিন্তু আমি সেভাবে চাইনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, ক্ষমতা হবে জনগণের কল্যাণ সাধন করার। জাতির পিতা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই দেশকে গড়ে তোলা। সেই প্রচেষ্টাই আমি চালিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে পথ চলায় আজকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আমরা পেয়েছি। যা বাস্তবায়ন হবে ২০২৬ সাল থেকে। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে যদি রাষ্ট্র পরিচালনা হয়, তাহলে এই বাংলাদেশ আর পেছনে ফিরে তাকাবে না। অনেক দেশই আমাদের সঙ্গে হয়েছিল, অনেকেই পিছিয়ে গেছে। আমরা কিন্তু পিছিয়ে যাইনি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর আমাদের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। অনেক ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা শুরু করি। ১৫ আগস্টের পর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই ভাষণ বাঁজিয়েছিল এবং তা মানুষকে শুনিয়েছিল। আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো ভাষণ এতবার শোনা হয়েছে কি না। আজকে সেই ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যা বাঙালি জাতির ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক সবাই আমাদের এই যে অর্জনগুলো ধরে রাখেন। এর মাধ্যমেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। জাতির পিতা এই বাংলাদেশের জন্য যে মহান আত্মত্যাগ করে গেছেন, সেটি আমাদের ভুললে চলবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বলেন, ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতার প্রতি যে বহিষ্কারাদেশ ছিল, প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। আজকে জাতির পিতাকে ডক্টর অব লজ ভূষিত করেছেন, আমি জানি না আপনাদেরকে কীভাবে ধন্যবাদ জানাবো। আমি কন্যা হিসেবে কৃতজ্ঞতা জানাই।
শেখ হাসিনা বলেছেন, এ জাতিকে নিয়ে সবসময় একটা স্বপ্ন ছিল জাতির পিতার। তিনি নিজের জন্য কিছু চাননি,এই জাতির জন্য চেয়েছেন সবসময়। অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে। আমি চাই সকল শিক্ষার্থীরা যেন এই বইগুলো ভালোভাবে পড়ে। এই বইগুলো পড়লে একদিন আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং আমাদের দেশের অবস্থানও জানতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মরণোত্তর সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।
গবেষণার প্রতি তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণায় অনেক উন্নতি করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার হৃদয়ের বিশ্ববিদ্যালয়। সবার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, গবেষণায় যেন বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশের যত আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, তার সূতিকাগার এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমি নিজেই গর্ববোধ করি।
এর আগে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ড. অব লজ’ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রধান করা হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের হাত থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সম্মাননা সূচক এই ডিগ্রি গ্রহণ করেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।