জন্মভূমি ডেস্ক : দৈহিক, আত্মিক ও আর্থিক ইবাদতের মনোমুগ্ধকর রমজানুল মোবারক ক্রমেই শেষ হচ্ছে। আজ ১৯তম দিবস। এ মাস দান-সাদকার মাস। জাকাত-ফিতরা দানের মাস। গরিবদের প্রতি অকাতরে সাহায্য-সহযোগিতার মাস। কিন্তু কোনো কোনো ধনী ও কৃপণ ব্যক্তি তার ধনসম্পদের জাকাত যথাযথভাবে হিসাব করে দেয় না। এ আর্থিক ইবাদত সম্পাদনের ক্ষেত্রেও নানা ছলছুতা ও ফাঁকির আশ্রয় নিয়ে থাকে, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য কখনো সৌভাগ্য ও কল্যাণ নিয়ে আসে না। টাকা-পয়সা, সোনাদানা, সহায়-সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন ও অপ্রতিরোধ্য। বস্তুত, ধনের মায়া প্রাণের মায়ার চেয়েও বেশি- এ কথা হয়তো অনেকেই স্বীকার করবে না। কেননা সবাই জানে যে, প্রাণের চাইতে মানুষ অন্য কিছুকেই বড় মনে করে না।
জাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। মহান আল্লাহর ফরজকৃত একটি বাধ্যতামূলক ইবাদত। কুরআন মজীদে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮২ বার জাকাতের কথা উল্লেখ হয়েছে। সূরা তাওবার ৬০নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে জাকাত ফরজ করা হয়েছে এবং তা ব্যয়ের খাতসমূহ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসলামের সূচনাকাল হতেই এর প্রচলন করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় হিজরীতে রোজা ফরজ হওয়ার পর একই বছরের শাওয়াল মাসে জাকাত ফরজ হয়েছে; তথাপি এর পূর্ণাঙ্গ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা মক্কা বিজয়ের পর ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে।
নবম হিজরীতে জাকাতের বিধান পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হয়। কুরআন মজীদের বহু স্থানে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং জাকাত দাও।’ মহানবী (স.) বলেন, ‘ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি : এই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, নামাজ কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, হজ আদায় করা এবং রমজানের রোজা রাখা।’ -(মিশকাত)। জাকাত ফরজ সম্পর্কে আরও বহু হাদিস বিদ্যমান।
একবার হযরত জিবরাঈল (আ.) মানুষের বেশে রাসূলুল্লাহর (স.) নিকট হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলাম কী? তিনি বললেন : ইসলাম এই যে, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবেন না। বিধিবদ্ধ নামাজ কায়েম করবেন, বাধ্যতামূলক জাকাত পরিশোধ করবেন। ‘ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা তার নবীকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই) কালিমাসহ প্রেরণ করেছিলেন।
লোকেরা তা গ্রহণ করলে পরে তাদের প্রতি নামাজ ফরজ করা হয়। তারা তাও পালন করতে থাকলে তাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়। তারা এটাও সত্যরূপে গ্রহণ করলে তাদের ওপর জাকাত ফরজ করা হয়।
অতএব জাকাত একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য এবং আর্থিক ইবাদত। কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় জাকাত প্রদান না করলে তার নিকট হতে রাষ্ট্র তা বল প্রয়োগে আদায় করবে। জাকাত প্রদান না করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ এবং তার রাসূল (স.) জাকাত আদায়ের জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং কৃপণাবশত তা পরিশোধ না করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে : যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যদানা, যা সাতটি শীষ উদগত করে। প্রতিটি শীষে একশত শস্যদানা।
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, অতঃপর যা ব্যয় করেছে তার কথা বলে বেড়ায় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না। (২১ : ২৬১-১)।
পবিত্র মাহে রমজানে অতিরিক্ত সাওয়াবের আশায় সামর্থ্যবান মুমিন মুসলমানদের জাকাতদানের একটি সোনালি ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের সমাজের ধনীরা যেন অকৃপণভাবে এ ঐতিহ্য ধরে রাখেন।