জন্মভূমি ডেস্ক : গণতন্ত্রের পালে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে, এবং তা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নানা বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। তবে চলতি বছরের জুলাই মাসে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, এবং সেই সঙ্গে রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। এরপরেই রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এই পরিবর্তনের পর থেকেই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
১৬ ডিসেম্বর, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর নির্বাচন কমিশন দ্রুত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সিইসি এ এম এম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে নতুন কমিশন ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে নির্বাচনি সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা অন্যতম। এছাড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজও শুরু হয়েছে। সাধারণত ভোটার তালিকা হালনাগাদ মার্চে শুরু হয়, তবে এবার পরিকল্পনা করা হয়েছে জানুয়ারিতেই নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ অভিযান চালানো হবে। নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সিইসির সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ এবং নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ইসি মনে করছে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। নির্বাচনে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ যেমন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, অমোচনীয় কালি, অফিসিয়াল সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, চার্জার এবং অন্যান্য সামগ্রী ইতিমধ্যে ইসির কাছে রয়েছে। তবে, অমোচনীয় কালি একটি বিশেষ উপকরণ, যা আমদানি করতে হয় এবং এটি সরবরাহের জন্য প্রায় ৭০ দিন সময় লাগে। তবে ইসি আশা করছে যে, কিছু ঠিকাদার অতীতে এ প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে, ফলে এবারও দ্রুত এই উপকরণ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়েছে, নির্বাচনের জন্য এই উপকরণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে এবং কর্মকর্তাদের সূক্ষ্ম পরিকল্পনা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, সিইসি এ এম এম নাছির উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবিত সময়সীমা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকব। নির্বাচনের জন্য কমিশন সুষ্ঠু প্রস্তুতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে এবং যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ ত্বরান্বিত করার জন্য কমিশন প্রস্তুত। সাধারণত, ২ জানুয়ারি একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া আহ্বান করা হয়। এরপর ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে যেকোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। এবার তথ্য সংগ্রহ অভিযান জানুয়ারিতে শুরু হওয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। নির্বাচন কমিশন মনে করছে, তথ্য সংগ্রহ অভিযান দ্রুত শুরু করতে পারলে এটি সঠিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভোটার তালিকা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে চারজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তারা নিশ্চিত করেছেন, সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
এদিকে, নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং নির্বাচন সামগ্রী সংগ্রহের প্রস্তুতির বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের জন্য যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং সকল প্রক্রিয়া সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
গণতন্ত্রের পালে ভোটের হাওয়া, ইসির জোর প্রস্তুতি
Leave a comment