নির্মাণ ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা
জন্মভূমি রিপোর্ট : ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা নদীর উপর ২৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ২শ’ ৭৮ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মিত হয়েছে। অন্যদিকে,পাইকগাছা উপজেলার কুড়ুলিয়া নদীর উপর ১শ’২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। আজ ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া সেতুটির উদ্বোধন করছেন এবং অপরটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, ভদ্রা নদীর উপর সেতুটি নির্মিত হওয়ায় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা, পাইকগাছা উপজেলা ও সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিকল্প সড়ক তৈরি হয়েছে। সেতুটি ব্যবহার করে পাইকগাছার কপিলমুনি বাজার ও তালা উপজেলার জাতপুর এবং তালা বাজারের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। ব্রিজটি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি জনগণের যাতায়াতের জন্য অনেক সময় সাশ্রয় হবে।
সেতুটি স্থানীয় জনগনের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও সবজি, ঘেরের মাছ, খামারীদের গরুর দুধসহ বিভিন্নপণ্য পরিবহন সহজতর করেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও অনেক ভোগান্তি কমেছে। এক সময়ে নদী পথে নৌকায় পারাপারই একমাত্র ব্যবস্থা হওয়ায় রোগীরা দ্রুত হাসপাতালে পৌছাতে বেগ পেতেন এবং শিক্ষার্থীরাও ঠিকসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌছাতে ভোগান্তিতে পড়তেন। ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা ও সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সেতুটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানান, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে পিসি গার্ডার ধরণের এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে এর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এর দৈর্ঘ্য ৩শ’১৫ দশমিক ৩০ মিটার, প্রস্থ ৭ দশমিক ৩০ মিটার। সেতুতে প্রতিটি ৪৫ মিটার আকারের ৭ টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ৭২ টি পাইল, ৬ টি পিয়ার ও দুইটি এ্যাবার্টমেন্ট রয়েছে। ব্রিজের উভয় পাশের এ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য ২শ’ ৪৫ মিটার।
ভদ্রা নদীটি খুলনার পশুর ও শিবসা নদীর দুই পাশের ভূখন্ডকে বিভক্ত করেছে এবং সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শিবসা ও পশুর নদীর মিলনাস্থলে পতিত হয়েছে। ভদ্রা নদীর পূব পাশে ১২ টি ইউনিয়ন ও পশ্চিমপাশে চারটি ইউনিয়ন রয়েছে। পশ্চিমপাশে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বেশ কয়েকটি হাট বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার হাজার-হাজার মানুষ প্রতিদিন সেতুটির সুফল ভোগ করছেন।
অপরদিকে, পাইকগাছা উপজেলার কুড়ুলিয়া নদীর উপর পিসি গার্ডার ও স্টিল ট্রাস ধরণের এই ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ৭শ’ ৪৮ দশমিক ৯০ মিটার ও প্রস্থ ৯ দশমিক ৮০ মিটার। ২৫ টি স্প্যান, ২শ’ ৪০ টি পাইল ও ২৪ টি পিয়ার, ২ টি এ্যাবেটমেন্ট এবং ১শ’৮১ মিটার এ্যাপ্রোচ সড়ক সম্বলিত এই সেতুটির চুক্তি মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১শ’২০ কোটি টাকা।
কুড়ুলিয়া নদীটি পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়নে প্রবাহমান কপোতাক্ষ নদ হতে উৎপত্তি লাভ করে শিবসা নদীতে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষে পাইকগাছা টু কয়রা সড়ক এবং বটিয়াঘাটা টু দাকোপ উপজেলার সাথে একটি বিকল্প সড়ক তৈরি হবে। এই সেতু নির্মিত হওয়ার পর পাইকগাছা হতে খুলনা শহরে যাতায়াতে অন্তত ৩০ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। এলাকার কৃষিপণ্য, ঘেরের মাছ, খামারিদের গরুর দুধসহ নানা পণ্য আনা-নেয়া সহজ হবে। খেয়াঘাটের নৌকা পারাপার হয়ে রোগীদের চিকিৎসালয়ে যাওয়ার ভোগান্তি কমবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়াও সহজ হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিছুজ্জামান দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, গত অক্টোবরে সেতুটির কার্যাদেশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে সয়েল টেস্টের কাজও শেষ হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকেরা সেতু এলাকায় নির্মান সামগ্রি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কার্যাদেশ অনুযায়ি আগামী ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্রিজের নির্মান কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।