ক্রীড়া প্রতিবেদক : গত ৫ জুলাই জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ১২তম রাউন্ড চলছিল। গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে ভালো পজিশনেই ছিলেন আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। হঠাৎ-ই মাথা ঘুরে পড়ে যান জিয়াউর রহমান জিয়া। এরপর শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। জিয়ার মৃত্যুর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও তার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পূরণে কেউ সেভাবে এগিয়ে আসেননি। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) মিরপুর স্টেডিয়ামে ছেলে তাওজয়ার জিয়ার হাতে ৫ লাখ টাকা তুলে দিলেন তামিম ইকবাল। এই সময় জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানাও সঙ্গে ছিলেন।
বাবার স্বপ্নপূরণ করতে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চান তাজওয়ার জিয়া। এজন্য আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জিয়ার ছোট্ট ফ্ল্যাট ছাড়া আর কিছুই নেই। অনেকে সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে আর্থিক সহায়তার কথা থাকলেও কেউই সেভাবে এগিয়ে আসেনি। বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালই এগিয়ে আসলেন। ক্রীড়াবিদ, সংগঠক কিংবা সাংবাদিক কারও বিপদ হলেই তামিম এগিয়ে আসেন। এবারও এর ব্যতয় ঘটেনি।
তামিমের এই সম্মানে অভিভূত জিয়ার স্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘উনি (তামিম) আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। উনি তো আসলে বাংলাদেশে ক্রিকেট জগতের ভালো একজন খেলোয়াড়। আমার ছেলের ব্যাপারে কথা বলেছেন। জিয়াকে সম্মান করেছেন। আমার ছেলের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন।’
বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আসেন জিয়ার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান। ইনডোরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাদেরকে। জিয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বড় দাবাড়ু বানাবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে সম্মিলতি সাহায্য প্রয়োজন বলে মনে করেন জিয়ার স্ত্রী, ‘আপনাদের কাছে আমি সবসময় বলেছি আমার ছেলেকে নিয়ে সামনে আগানো দরকার। এটার জন্য সম্মিলিত সাহায্য দরকার। সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমার মনে হয় সবকিছু ভালো হবে। ’
মারা যাওয়ার পর এখনও জিয়ার পরিবারের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। আক্ষেপ করে স্ত্রী তাসমিন বলেছেন, ‘এখনও পায়নি। কারণ ও তো দেশের জন্য সবকিছু করেছে। দেশের জন্য সব খেলা খেলেছে। দেশের বাইরে প্রতিনিধিত্ব করেছে। সেই হিসেবে জিয়া এখনও কিছু পায়নি। তবে সম্মান পেলো না বললে ভুল হবে। সম্মান অবশ্যই পাবে। এখন পরিস্থিতির জন্য দেরি হচ্ছে। আমি আশা করবো যে ভবিষ্যতেও সম্মান পাবে অন্যরা। ‘
দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তামিমের সাথে আলাপ করতে পেরে দারুণ খুশি জিয়ার সন্তান তাজওয়ার। তার কাছে তামিমের পরামর্শ অনেক বেশি অনুপ্রেরণার, ‘উনিতো অনেক বড় একজন ক্রিকেটার বাংলাদেশের। উনার সঙ্গে দেখা করতে পেরে ভালো লাগছে। উনি অনেক পরামর্শ দিয়েছেন জীবনের ব্যাপারে। এটা অনেক বড় অনুপ্রেরণা ছিল। উনি বলেছেন দাবার সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে।’
একদম শেষে জিয়ার স্ত্রী তাসমিন বলেছেন, ‘উনি আমার ছেলেকে ভালো উপদেশ দিয়েছেন। সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন। উনি সবসময় পাশে থাকবেন বলেছেন।’