
জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই খ্যাত নায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী) আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) না ফেরার দেশে চলে গেলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (১৫ মে) সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফারুকের ছেলে রওশন হোসেন পাঠান ও ভাতিজি আসমা পাঠান রূম্পা ।
আসমা পাঠান রূম্পা বলেন, ‘সোমবার সকাল ৮টায় চাচা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। উনাকে দেশে এনে দাফন করা হবে।‘
ছেলে রওশন হোসেন পাঠান বলেন, ‘গত ৩-৪ দিন যাবত বাবার শরীর হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। মা ফোন দিয়ে আমাকে বলেন সিঙ্গাপুরে আসতে। সংবাদটি শুনে দ্রুত আমি সেখানে যাই। হয়তো বাবা আমার জন্যই কদিন খুব কষ্ট করেছেন। আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের প্রক্রিয়া শেষ করে বাবাকে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।’
২০২১ সালের ৪ মার্চ সিঙ্গাপুরে যান ফারুক। চেকআপের পর তখন তার ইনফেকশন ধরা পড়লে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন এই অভিনেতা। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ফারুক।
প্রায় পাঁচ দশক ধরে বড় পর্দা মাতিয়েছেন ফারুক। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে ফারুকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন মিষ্টি মেয়ে কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার আলোর মিছিল এ দুটি সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
১৯৭৫ সালে তার অভিনীত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ সিনেমা দুটি ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়। ওই বছর ‘লাঠিয়াল’র জন্য তিনি সেরা-পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ ও ‘নয়নমণি’, ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’, আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’সহ বেশকিছু সিনেমায় ‘মিয়া ভাই’খ্যাত চিত্রনায়ক ফারুকের অভিনয় প্রশংসিত হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
॥ রাষ্ট্রপতির শোক ॥
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যু দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
তিনি বলেন, তার অভিনীত চলচ্চিত্র দেশের সমাজ ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার অবদান দেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
রাষ্ট্রপ্রধান মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকশন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
॥ প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরেণ্য চিত্রনায়ক, সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ।
শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় বলেন, এই বিশিষ্ট অভিনেতা তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।