
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের ইতিহাস শতাব্দী প্রাচীন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে সুন্দরবন এলাকায় সনাতন পদ্ধতিতে ১৮২৯ সাল থেকে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। কাজেই প্রায় দু’শত বছর ধরে বৃহত্তর খুলনা জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে ধান চাষের সঙ্গে পর্যায়ক্রমিকভাবে লবণপানির বাগদা চিংড়ি ও মিঠাপানির গলদা চিংড়ি ভেড়ি চাষ পদ্ধতিতে চাষ করা হতো। এ ভেড়ি চাষ পদ্ধতিতে উপকূলীয় এলাকার লবণের মাঠ, ধানক্ষেত বা খালি জায়গায় মাছ চাষের জন্য জোয়ারের পানি প্রবেশ করানো হতো। এ পানিতে মাছের পোনার সাথে চিংড়ির পোনাও প্রবেশ করত এবং মাছসহ চিংড়ির এ পোনাকে ৩ থেকে ৪ মাস খামারে আটকিয়ে রেখে বড় হলে মাছের সাথে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে চিংড়ি আহরণ করা হতো। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশ চিংড়ি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশে চিংড়ি চাষে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হচ্ছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও কক্সবাজার এলাকায় বাগদা চিংড়ি চাষের ব্যাপকতা লক্ষণীয়। সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি বর্তমানে উল্লিখিত ৪টি জেলার বিভিন্ন এলাকায় আধা নিবিড় ও নিবিড় পদ্ধতির খামার গড়ে উঠছে এবং প্রতিনিয়ত বাগদা চিংড়ি চাষের প্রযুক্তি নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাগদা চিংড়ির খামারের স্থান নির্বাচন করতে পারব।
খামারের পানির উৎস শনাক্ত করতে পারব।
খামারের পানির গুণাগুণ পরিমাপ করতে পারব।
খামারের মাটির গুণাগুণ পরিমাপ করতে পারব।
চিংড়ি চাষের পুকুর তৈরি করতে পারব।
খামারের বেষ্টনী বাঁধ নির্মাণ করতে পারব।
খামারের পাড় সংস্কার করতে পারব।
খামারে অবাঞ্ছিত ও রাক্ষুসে মাছ শনাক্ত এবং দূরীকরণ করার পদক্ষেপ বর্ণনা করতে পারব।
পানির প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করতে পারব।
বাগদা চিংড়ির ভালো ও খারাপ পোনা শনাক্ত এবং গণনা করতে পারব
পোনা গণনা ও প্যাকিং করতে পারব।
পোনা অভ্যস্থকরণ ও অবমুক্ত করতে পারব
সম্পুরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ করতে পারব।
নমুনায়নের মাধ্যমে চিংড়ির বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে পারব।
বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাগদা চিংড়ি এ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই কমবেশি চাষ হয়ে থাকে। কোথাও চাষ হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতে, আবার কোথাও হচ্ছে উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে এবং কোথাও কোথাও আধানিবিড় পদ্ধতিতে। বাংলাদেশে বাগদা চিংড়ি চাষযোগ্য জলাশয়ের আয়তন প্রায় ১.৯০ লক্ষ হেক্টর। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন অবস্থিত, যা বিভিন্ন প্রজাতি বিশেষ করে বাগদা চিংড়ির প্রাকৃতিক আবাসস্থল হিসেবে সমধিক পরিচিত। এই উপকূলীয় এলাকায় মৌসুম ও স্থানভেদে বিভিন্ন মাত্রায় (পিপিটি) লবণাক্ত পানি পাওয়া যায়। তাই এই অঞ্চল বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ সালে উৎপাদিত মোট চিংড়ির পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এসব উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে এবং অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাত করা।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় চাষকৃত চিংড়ির শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই বাগদা চিংড়ি। তাছাড়া বাগদা চিংড়ির সাথে হরিণা, ঢাকা ও হন্নি চিংড়িসহ মিঠাপানির গলদা চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। ঘেরে চিংড়ির সাথে ভেটকি, টেংরা, পারসে, পোয়া, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া ধানের সাথে চিংড়ি ও রুই জাতীয় মাছও চাষ হয়ে থাকে
বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি চাষে ঘেরের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। যেখানে জোয়ার-ভাটার সময় পানির সরাসরি সংযোগ থাকে। মাটির ধরন হবে দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ। ঘেরে যোগাযোগের জন্য রাস্তা থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের সময় নিচের বিষয় সমূহ বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
দূষণমুক্ত এলাকা: কলকারখানা ও ট্যানারি হতে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ পরিশোধন ছাড়া সরাসরি নিক্ষেপের ফলে পানির দূষণ মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চিংড়ির মড়ক দেখা যায়। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ পরিবর্তিত হয়ে চিংড়ির জন্য প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি করে। সুতারাং এ সমস্ত এলাকায় চিংড়ি খামার স্থাপন না করাই ভালো। বরং দূষণমুক্ত এলাকা চিংড়ি খামারের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
অতি বৃষ্টিজনিত বন্যামুক্ত এলাকা: অতি বৃষ্টিজনিত ঢলের পানি খামারের পানির গুণাগুণ, যেমন- লবণাক্ততা, অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদিও হঠাৎ পরিবর্তন করে দেয়, ফলে চিংড়ি চাষ ব্যাহত হয়। এ সমস্ত স্থানে বাঁধ নির্মাণ ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বৃষ্টি ধৌত খোলা পানিতে জৈব ও অজৈব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা চিংড়ির ফুলকা পচনসহ অনেক রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই অতি বৃষ্টিজনিত এলাকা পরিহার করে বন্যামুক্ত এলাকা চিংড়ি খামারের জন্য নির্বাচন করতে হয়।
পানির উৎস: বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য লবণাক্ত পানির প্রয়োজন। এছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য অন্যান্য যে সব ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা সমুদ্রের পানিতে বিদ্যমান। তাই খামারের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে চিংড়ি চাষের উপযোগী লবণাক্ত পানি পাওয়া যায়। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য যে সব উৎস বা আধার থেকে পানি সরবরাহ করা হবে তা অবশ্যই দূষণমুক্ত হতে হবে। তাছাড়া চিংড়ি খামার থেকে পানির উৎসের দূরত্বের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। দুরুত্ব বেশি হলে সার্বক্ষণিকভাবে পানি পাবার বিষয়টি অনিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে সরবারাহ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
জোয়ার-ভাটার বৈশিষ্ট্য: খামারের পানি পরিবর্তন, পানি নিষ্কাশন ও বাঁধের উচ্চতা নির্ধারণের জন্য খামার নির্মাণের স্থানে ভূমির উচ্চতার সাথে জোয়ার-ভাটার হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাণ জানা দরকা যেসব স্থানে জোয়ার- ভাটার হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাণ ২-৩ মিটার, সেসব জায়গা খামার স্থাপনের জন্য অধিক উপযোগী। জোয়ার-ভাটার হ্রাস-বৃদ্ধি ৪ মিটারের বেশি বা ১ মিটারের কম হলে বাঁধ নির্মাণ ও পানি সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, ফলে চিংড়ি চাষ লাভজনক না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মাটির গুণাগুণ: মাটির পানি ধারণক্ষমতা ও ভেদ্যতা, মাটির উর্বরতা প্রভৃতি চিংড়ি চাষ পুকুরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। মাটির গুণাগুণ ভালো না হলে খামার স্থাপন ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়। মাটি যত ভেদ্য হবে পানি চোয়ানোর হার তত বেশি হবে। খামার স্থাপনে মাটির যে গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন তা
পানির গুণাগুণ: পানির তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পানির লবণাক্ততা, পানির স্বচ্ছতা, পিএইচ, অ্যালকালিনিটি, হার্ডনেস, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ সব প্রয়োজনীয় গুণাগুণ সঠিক মাত্রায় না থাকলে চিংড়ির উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় । কাজেই চিংড়ি চাষের জন্য পানির নিম্নোক্ত গুণাগুণসমূহ পার্শ্বে উল্লিখিত মাত্রায় থাকা অপরিহার্য বলে বিভিন্ন গবেষণা তথ্যে পাওয়া যায়
ভূ-প্রকৃতি: যেখানে খামার স্থাপন করা হবে সেখানকার ভূ-প্রকৃতি অবশ্যই জানা থাকতে হবে। ভূ-গর্ভস্থ পানির অবস্থানও জানা দরকার। লালচে ও এসিড সালফেটযুক্ত মাটি চাষের জন্য অনুপোযোগী। স্থানটি খামার স্থাপনের উপযোগি কি না শুরুতেই যাচাই করে নিতে হবে বিশেষ করে মাটির গঠন।
অবকাঠামোগত সুবিধা: চিংড়ি খামারের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ ও স্থানান্তরের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। রাস্তা-ঘাট ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হলে চিংড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। সর্বোপরি বন্যামুক্ত এলাকা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী। এজন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে এবং পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্লুইস গেট আছে এমন এলাকা নির্বাচন করা উচিত।
ঝ. বিদ্যুৎ সরবরাহ: চিংড়ি খামারে বিদ্যুৎ থাকা জরুরি। খামারের স্থান নির্বাচনের সময় বিদ্যুৎ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকা আবশ্যক। বিদ্যুৎ না থাকলে ডিজেল চালিত পাম্পে জ্বালানি খরচ বেশি লাগবে। পানি অপসারণ বা খামারে পানি প্রবেশের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সবচেয়ে সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী বিধায় বিদ্যুতের নিশ্চয়তা আবশ্যক।
ঞ. দক্ষ জনশক্তি: চিংড়ি খামার লাভজনক করতে হলে দক্ষ জনশক্তির কোন বিকল্প নেই। খামারে সহনশীল উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও অধিক উৎপাদনের জন্য খামারের দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করতে হবে। তাই দক্ষ জনশক্তির পর্যাপ্ততা বিবেচনা করে চিংড়ি খামার স্থাপন করা উচিত
উৎপাদন সামগ্রীর প্রাপ্যতা ও সরবরাহ: এমন জায়গায় চিংড়ি খামার স্থাপন করা উচিত যেখানে খুব কাছাকাছি হাট বাজার আছে, যার ফলে খুব সহজেই খামার স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সার, চুন, যন্ত্রপাতি ও মেরামত সামগ্রী সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া দূরবর্তী বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হলে প্রয়োজনীয় পরিবহণ ব্যবস্থা থাকা উচিত।
বিরোধমুক্ত এলাকা: বিরোধপূর্ণ এলাকায় চিংড়ি খামার স্থাপন করা উচিত নয়। এতে সামাজিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া চিংড়ি একটি মূল্যবান ফসল হওয়ায় খামারের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের ব্যবস্থা করাসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চিংড়ি চাষের সফলতা মূলত সঠিক ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, স্থান, দক্ষতা, পুঁজি, অবকাঠামোগত সুবিধা, উপকরণ সরবরাহ ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণভাবে আধুনিক চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনাতে আশানুরূপ ফলন পেতে হলে সঠিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণ ও এর যথাযথ সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। খামারের সঠিক নকশা প্রণয়নপূর্বক খামারে নিম্নোক্ত অবকাঠামোসমূহ নির্মিত হওয়া আবশ্যক।
পুকুরের বাঁধ বা অভ্যন্তরীণ বাঁধ: খামারের অভ্যন্তরীণ বাঁধ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন চাষ এলাকায় ১-২ মিটার পানি ধরে রাখা যায় অর্থাৎ বাঁধের উচ্চতা কমপেক্ষ ১.৫ মিটার হতে হবে। তবে স্তরে মাটি কমপ্যাক্ট করে বাঁধ খুব মজবুতভাবে নির্মাণ করতে হবে, যাতে চাষ এলাকা বা পুকুরের পানি বের হয়ে না যায় এবং বাইরের পানি পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে। পুকুরের পাড় যাতে ধসে না যায় বা অতিবৃষ্টির ফলে বাঁধের মাটি ধুইয়ে ক্ষয় হয়ে না যায় সে জন্য বাঁধের পায়ে দুর্বা জাতীয় ঘাস অথবা পুকুরে ছায়া সৃষ্টি করবে না এ রকম গাছ লাগাতে হবে। একটি বাঁধ নির্মাণ করার সময় বিভিন্ন স্থানের পরিমাপ নিচের চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হলো:
চিত্রে ৬ ফুট গভীরতা সম্পন্ন একটি নার্সারি পুকুর, যার ঢাল জমির বাইরের দিক হতে বলা।কচর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, যেখানে ২ ফুট পর হতে মাটি ফেলা হয়েছে। বাইরের ঢাল ৬ ফুট, বাঁধের উপরের দৈর্ঘ্য ৬ ফুট বাইরের বাঁধের ভিতরের ঢাল ৬ ফুট ও বকচর ২ ফুটসহ মোট ২০ ফুট। ঘেরের ভেতরের দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট যার মধ্যে ২ ফুট বকচর ভেতরের দিকে ঢাল ৪ ফুট, ভিতরের বাঁধের উপরের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও ভেতরের বাঁধের বাইরের ঢাল ৪ ফুট। বাঁধের উচ্চতা নির্ভর করে উক্ত স্থানের বন্যার পানির উচ্চতা, মাটির গঠন ও পুকুরের ব্যবস্থাপনা সুবিধার উপর।
নার্সারি পুকুর: চিংড়ি পোনার সুষম বৃদ্ধি ও পোনার মৃত্যুহার নুন্যতম পর্যায়ে রাখার জন্য নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। নার্সারি পুকুর যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে। এর ফলে পোনার মজুদকালীন মৃত্যুহারও কমে যাবে এবং পোনা দ্রুত বাড়বে। এ ক্ষেত্রে পালনীয় কাজগুলো হবে
পানি সরবরাহ গেট পুকুরের তলা থেকে কিছুটা উপরে এবং নিষ্কাশন গেট পুকুরের তলা থেকে কিছুটা নিচুতে স্থাপন করা দরকার। এতে পুকুরে সঠিকভাবে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন করা যায়। ফ্লুইস গেট কাঠের, আরসিসি পাইপ বা পিভিসি পাইপ অথবা সিমেন্ট দ্বারা নির্মাণ করা যায়। ফ্লুইস গেট সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে, যথা- প্রধান ফ্লুইস গেট ও গৌণ বা অপ্রধান ফ্লুইস গেট। বেষ্টনী বাঁধের উৎসের নিকট যে গেট নির্মাণ করা হয় তাকে প্রধান ফ্লুইস গেট এবং পুকুরের পাড়ে যে গেট নির্মাণ করা হয় তাকে গৌণ ফ্লুইস গেট বলে। পানি সরবরাহ খালে পানি সরবরাহ করার জন্য সাধারণত প্রধান ফ্লুইস গেট ব্যবহার করা হয় এবং সরবরাহ খাল থেকে পুকুরে পানি সরবরাহ করার জন্য গৌণ ফ্লুইস গেট ব্যবহার করা হয়। একটি কাঠের ফ্লুইস গেট নির্মাণের সময় নিচের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে-
পুকুরে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের কাজ ৪-৬ ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা থাকা দরকার। নিষ্কাশন কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় সেজন্য পুকুরের তলদেশ পানি সরবরাহ করানোর গেটের দিক থেকে পানি নিষ্কাশন গেটের দিকে ঢালু হতে হবে। পানি সরবরাহ ফ্লুইস গেটের মুখে সূক্ষ ছিদ্রযুক্ত জাল স্থাপন করে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য অবাঞ্ছিত জলজ প্রাণীর খামারে প্রবেশ বন্ধ করা যায়। আর নিষ্কাশন ফ্লুইস গেটের মুখে জাল স্থাপন করে অতি সহজেই চিংড়ি আহরণ করা যায়।
গার্ড শেড, বাসস্থান ও ভান্ডার নির্মাণ: গার্ড শেড, বাসস্থান ও ভান্ডার খামার অবকাঠামোর অন্যতম উপাদান। খামারের প্রয়োজনীয় উপকরণাদি যেমন- চুন, সার, খাদ্য, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ইত্যাদি রাখার জন্য উপযুক্ত ভান্ডার থাকা দরকার। খামারের ভান্ডারটি শুষ্ক স্থানে হওয়া উচিত। এছাড়া খামারের শ্রমিকসহ খামার পরিচালনায় নিয়োজিত অন্যান্য জনবলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান থাকা একান্ত অপরিহার্য। কর্মরত জনবলের জন্য পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া খামারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গার্ড শেড নির্মাণ করতে হবে।
চিংড়ি চাষ পদ্ধতি অধিক সম্পূরক খাদ্য নির্ভর হওয়ার কারণে পুকুরের তলদেশে গভীর কাদার সৃষ্টি হয়। এ কারণে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রতি বছর ফসল আহরণের পরপরই বা পুনরায় চিংড়ির পোনা মজুদের পূর্বেই পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হয়। চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অধিক সার, খাদ্যে বর্জ্য পদার্থ ও প্ল্যাংকটন উৎপাদন সমৃদ্ধ পুকুর ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে ভাল নয়। কেননা এ ধরনের পুকুরের তলদেশে বর্জ্য পদার্থ অধঃক্ষেপনের মাধ্যমে অবায়বীয় গভীর পাঁকের সৃষ্টি হয়। অধিক অবায়বীয় জৈব্য পদার্থ সমৃদ্ধ পুকুর চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধির ও উৎপাদনের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও এধরনের অধঃক্ষেপনকৃত পদার্থের কারণে চিংড়ি ও অন্যান্য জীবভরের মৃত্যু ও বিলুপ্তি হতে পারে বা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। এ কারণেই চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রথমেই পুকুরের মাটির প্রকৃতি, পূর্ববর্তী বছরের উৎপাদনে পরিবেশগত বাধাসমূহ নির্ণয় করে পুকুর প্রস্তুতির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। নিচে পুকুর প্রস্তুতির ধাপসমূহ উল্লেখ করা হলো-
পুকুরের পানি বের করে ফেলা: চিংড়ি ও মাছ আহরণের পর পুকুরের পানি সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয়াই উত্তম। এ সময় পুকুরের তলদেশ, ঢাল ও নালার অবস্থা, ব্লুইস গেট প্রভৃতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পুকুর প্রস্তুতির কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়, যাতে পুকুরের ভৌত অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হয়। পুকুরের তলদেশের কালো মাটি পুকুর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রধান বাধাস্বরূপ। চিংড়ি আহরণের পরপরই প্রেসার পাইপের মাধ্যমে তীব্র স্রোতে বা বেগে পানি বার বার প্রবেশ ও বের করার মাধ্যমে কালো মাটি অপসারণ করা যেতে পারে। এ কাজটি পুকুরের পানি বের করে দেয়ার সাথে সাথে করতে হবে। যাতে পুকুরের মাটি সূর্যালোকে শক্ত হয়ে যেতে না পারে। বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কাজটি করলে বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে পিএল মজুদ করা সম্ভবপর হয় এবং এপ্রিল-মে মাসে ভাইরাসের সংক্রমণের পূর্বেই ফসল আহরণ করা সম্ভবপর হয়।
পুকুর শুকানোঃ পুকুরে জলস্রোত দিয়ে বা প্রম নির্ভর পদ্ধতিতে পুকুরের তলদেশের বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে ফেলার পর ১০-১৫ দিন সূর্যালোকে পুকুর এমনভাবে শুকাতে হয়, যাতে পুকুরের তলদেশের মাটিতে ২৫-৩০ সেমি গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয়। পুকুরের তলদেশের গভীর অঞ্চল শুকানোর ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন পাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিতে হবে-
পুকুরের তলার মাটি এমনভাবে শুকাতে হবে যেন মাটিতে ফাটল ধরে এবং কোথাও ভেজা ভেজা বা জলীয় উপাদান না থাকে।
শুকানোর পর দৃশ্যমান আবর্জনা দূর করতে হবে, ফলে তলার মাটি পরিষ্কার হবে জীবাণু মারা যাবে।
মাটি শুকানোর পর অতিরিক্ত কাঁদা, স্তূপীকৃত জৈব পদার্থ, দুপ যুক্ত কালো মাটি ঘের থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত।
অধিক উৎপাদন পেতে হলে পুকুর/ষের খামার ভালোভাবে শুকাতেই হবে।
তাছাড়া পুকুরের ভিতরের অংশ থেকে মাটি কেটে পুকুরের চারপার্শ্বে শক্ত মজবুত, প্রশস্থ ও দৃঢ়ভাবে পাড় তৈরি করতে হবে। চারিপার্শ্বের পানির সর্বোচ্চ উচ্চতার চেয়ে প্রধান বাঁধের উচ্চতা কমপক্ষে ৩ ফুট বেশি করতে হবে।
ভনদেশের মাটি চাষ পুকুরের মাটি শুকানোর পর ১০-১৫ সেমি গভীর তলদেশের মাটি লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে ৩-৫ বার চাষ করতে হয়। এক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ সমৃদ্ধ স্থানসমূহ অধিক গভীর করে চাষ দেয়ার প্রয়োজন হয়। সাধরণত চাষের গভীরতা পুকুরের পিএইচ হচ্ছে কোনো দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্বের ঋণাত্মক লগারিদম। সহজ ভাষায় পিএইচ হচ্ছে কোনো বস্তুর অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের পরিমাপক। পানির পিএইচ বলতে পানির অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের অবস্থা বুঝায়। পিএইচ ০ থেকে ১৪ পর্যন্ত বিস্তৃত। পানির পিএইচ যদি ০-৭ এর মধ্যে থাকে তবে তা অগ্নীয়। এই অম্লীয় পানিতে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বেশি থাকে। আবার পিএইচ যদি ৭-১৪ এর মধ্যে থাকে তবে ভা ক্ষারীয়। এই ক্ষারীয় পানিতে অক্সাইড জায়নের পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু বিশুদ্ধ পানিতে উপরোক্ত উভয় আয়নের পরিমাপ সমান সমান থাকার ফলে পানির গুণাগুণ নিরপেক্ষ বা প্রশম হয়। অর্থাৎ পিএইচ যদি থাকে তবে ভাদ্বারা নিরপেক্ষ মান নির্দেশিত হয়।
চিংড়ি চাষে পিএইচ-এর প্রভাব: চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনার সাথে পিএইচ মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত চিংড়ি চাষের জন্য মৃদু ক্ষারীয় পানি অর্থাৎ পানির পিএইচ ৭.৫-৮.৫ এর মাঝে হলে সবচেয়ে ভালো। পানির পিএইচ ৪ এর নিচে নেমে গেলে অর্থাৎ পানি খুব বেশি অম্লীয় হয় তাহলে চিংড়ি বাঁচতে পারে না। কারণ তখন পানিতে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার পানি যদি খুব বেশি ক্ষারীয় হয় অর্থাৎ পিএইচ মান ৯.৫ এর বেশি হয় তাহলে চিংড়ি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। কারণ এই অবস্থায় পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকে না। শুধু তাই নয় এই অবস্থায় পানিতে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই দুটো অবস্থাই চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর। পিএইচ মান ১১ এর উপরে গেলে চিংড়ি মারা যায়। চিংড়ি চাষে ভালো ফল পেতে হলে মাছ চাষিকে অবশ্যই পুকুরের পানির পিএইচ মান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পিএইচ মান কাঙ্ক্ষিত মানের চেয়ে কম বেশি হলে সম্ভাব্য কারণসমূহ জেনে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। অম্লীয় ও ক্ষারীয় পানির উৎস ও তার প্রভাব নিচে আলোচনা করা হলো:
কোন পুকুরের তলা থেকে এক মুঠ (প্রায় ২০ গ্রাম) মাটি নিয়ে খুব ভালোভাবে শুকিয়ে গুঁড়া করে পাউডার বানাতে হবে। এই পাউডারের দ্বিগুণ পরিমাণ পরিষ্কার ফোটানো ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে খুব ভালোভাবে নেয়ে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। পরদিন সকালে পিএইচ কাগজ দিয়ে থিতানো পানির পিএইচ পরীক্ষা করতে হবে। প্রাপ্ত পিএইচ হবে পরীক্ষিত পুকুরের মাটির পিএই
পিএইচ কমে গেলে বা পানি অগ্নীয় হলে করণীয় :
যে কোন কারণে পুকুরের পানির পিএইচ কমে যেতে পারে। যদি কোনো কারণে পিএইচ মান কমে যায় তাহলে জাতীয় পানিতে শতাংশ প্রতি ১ কেজি পোড়া ফুল প্রয়োগ করতে হবে। চুলের পরিমাণ নগ্নতা বা পানির পিএইচ এর উপর নির্ভরশীল।
পিএইচ বেড়ে গেলে বা পানি ক্ষারীয় হলে করণীয় : অপ্রত্যাশিতভাবে পানির পিএইচ বেড়ে গেলে পিএইচ কমানোর নির্মিত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন প্রাথমিকভাবে তেঁতুল গোলানো পানি বা তেঁতুল/সজনের পাতা ভেজানো পানি দিতে হবে। তবে শতাংশ প্রতি ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাগদা চিংড়ি এ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই কমবেশি চাষ হয়ে থাকে। কোথাও চাষ হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতে, আবার কোথাও হচ্ছে উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে এবং কোথাও কোথাও আধানিবিড় পদ্ধতিতে। বাংলাদেশে বাগদা চিংড়ি চাষযোগ্য জলাশয়ের আয়তন প্রায় ১.৯০ লক্ষ হেক্টর। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন অবস্থিত, যা বিভিন্ন প্রজাতি বিশেষ করে বাগদা চিংড়ির প্রাকৃতিক আবাসস্থল হিসেবে সমধিক পরিচিত। এই উপকূলীয় এলাকায় মৌসুম ও স্থানভেদে বিভিন্ন মাত্রায় (পিপিটি) লবণাক্ত পানি পাওয়া যায়। তাই এই অঞ্চল বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ সালে উৎপাদিত মোট চিংড়ির পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এসব উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে এবং অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাত করা হয়।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় চাষকৃত চিংড়ির শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই বাগদা চিংড়ি। তাছাড়া বাগদা চিংড়ির সাথে হরিণা, ঢাকা ও হন্নি চিংড়িসহ মিঠাপানির গলদা চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। ঘেরে চিংড়ির সাথে ভেটকি, টেংরা, পারসে, পোয়া, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া ধানের সাথে চিংড়ি ও রুই জাতীয় মাছও চাষ হয়ে থাকে।
বাগদা চিংড়ি একটি স্পর্শকাতর চাষযোগ্য প্রজাতি হওয়ায় চাষ কার্যক্রমটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এবং ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হয়। সমগ্র চাষ কার্যক্রমটিকে কয়েকটি ধাপে সম্পাদন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। খামার ব্যবস্থাপনার ধাপসমুহ নিম্নরূপ-
বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি চাষে ঘেরের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। যেখানে জোয়ার-ভাটার সময় পানির সরাসরি সংযোগ থাকে। মাটির ধরন হবে দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ। ঘেরে যোগাযোগের জন্য রাস্তা থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের সময় নিচের বিষয় সমূহ বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
ক. দূষণমুক্ত এলাকা: কলকারখানা ও ট্যানারি হতে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ পরিশোধন ছাড়া সরাসরি নিক্ষেপের ফলে পানির দূষণ মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চিংড়ির মড়ক দেখা যায়। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ পরিবর্তিত হয়ে চিংড়ির জন্য প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি করে। সুতারাং এ সমস্ত এলাকায় চিংড়ি খামার স্থাপন না করাই ভালো। বরং দূষণমুক্ত এলাকা চিংড়ি খামারের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
অতি বৃষ্টিজনিত বন্যামুক্ত এলাকা: অতি বৃষ্টিজনিত ঢলের পানি খামারের পানির গুণাগুণ, যেমন- লবণাক্ততা, অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদিও হঠাৎ পরিবর্তন করে দেয়, ফলে চিংড়ি চাষ ব্যাহত হয়। এ সমস্ত স্থানে বাঁধ নির্মাণ ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বৃষ্টি ধৌত খোলা পানিতে জৈব ও অজৈব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা চিংড়ির ফুলকা পচনসহ অনেক রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই অতি বৃষ্টিজনিত এলাকা পরিহার করে বন্যামুক্ত এলাকা চিংড়ি খামারের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
পানির উৎস: বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য লবণাক্ত পানির প্রয়োজন। এছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য অন্যান্য যে সব ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা সমুদ্রের পানিতে বিদ্যমান। তাই খামারের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে চিংড়ি চাষের উপযোগী লবণাক্ত পানি পাওয়া যায়। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য যে সব উৎস বা আধার থেকে পানি সরবরাহ করা হবে তা অবশ্যই দূষণমুক্ত হতে হবে। তাছাড়া চিংড়ি খামার থেকে পানির উৎসের দূরত্বের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। দুরুত্ব বেশি হলে সার্বক্ষণিকভাবে পানি পাবার বিষয়টি অনিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে সরবজাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্যখাতের অবদান বিবেচনায় এনে মৎস্যসম্পদের স্থায়িত্বশীল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, মৎস্যচাষ ও মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ ও সমাজবান্ধব নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তর, গ্রামীণ বেকার ও ভূমিহীনদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ প্রসারিত করা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, বদ্ধ জলাশয় এবং সম্প্রসারিত সামুদ্রিক জলাশয়ের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য সুনির্দিষ্ট।

