যশোর অফিস : যশোরের চৌগাছা উপজেলার বল্লভপুর বাওড়ের প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার মাছ লুট হয়েছে। একই সাথে সমিতির সদস্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীদের দৌরাত্মে চরম সংকটে দিন পার করছেন ভুক্তভোগীরা। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর বাওড় লুটে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জিন্নাত আলী। তার সঙ্গে যোগ দেন হাইব্রিড আ.লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকশ’ নেতাকর্মী ও সমর্থক। টানা পাঁচ দিন বাওড়ের মাছ গণলুট করা হয়েছে। এখনো জিন্নাত আলীর নেতৃত্বে ১৫/২০জন মাছ লুট করছে। একই সাথে সমিতির সদস্য ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগী সমিতির সদস্যরা। এ বিষয়ে জিন্নাত আলী সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা উপজেলার ১১ নম্বর সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বল্লভপুর বাওড়টি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ৬ বছর মেয়াদে ইজারা নিয়ে চাষ করছে বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যবৃন্দ। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের একটি অংশ জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে। কিন্তু আইনগত ও প্রশাসনিক বাধার কারণে ওই চক্রটি বাওড় দখলে ব্যর্থ হয়। এ সংক্রান্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। হঠাৎ গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে যায়। এই সুযোগে বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জিন্নাত আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আইজেল হক, কার্তিক বিশ্বাস, মিজানুর রহমান,গহর মল্লিক,শহর মল্লিক, শিপন হোসেন, সুকুমার বিশ্বাস,ছাবদার হোসেন, সোহরাব গাজীসহ অন্তত ৫৩জন আওয়ামী লীগ,হাইব্রিড আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠ নেতাকর্মীর নেতৃত্বে বল্লভপুর বাওড়ের মাছ লুট শুরু হয়। পরেদিন সকালে তাদের নেতৃত্বে কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ বাওড়ের মাছ লুট করে। টানা ৫দিনের গণলুটে আনুমানিক ৪০-৪৫ লাখ টাকার মাছ তুলে নিয়েছে দুবৃত্তরা। ৫-৮ আগস্ট পর্যন্ত লুট ঠেকাতে রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তাদের শরানাপন্ন হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গণলুট বন্ধ হলেও নেতৃত্বদানকারী সন্ত্রাসীদের মাছ চুরি বন্ধ হয়নি। তাদের অব্যাহত হুমকিতে সমিতির সদস্য ও সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম শংকিত।
এ বিষয়ে বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারক কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকারের কাছ থেকে ৬ বছর মেয়াদে লিজ নিয়ে আমরা চাষ করছি। ৪২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বাওড়ে মাছ চাষ করেছি। আমরা দেনাগ্রস্ত। আমরা মাছ ধরতে পারিনি। সরকার পতনের দিন থেকেই প্রকাশ্যে লুট হয়েছে। টানা ৫দিন ধরে লুটে আমাদের ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সঞ্জয় কুমার রায় বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের জলমহাল ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী সমিতির বাইরে কাউকে বাওড় সাব লিজ দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক মদদপুষ্ট এলাকার একটি চক্র বারবার জোরপূর্বক বাওড় দখল কিংবা সাবলিজ নিতে চায়। সমিতি আইনী প্রক্রিয়ায় তাদের মোকাবেলা করে আসছে। হঠাৎ সরকার পতন হওয়ায় তারা দখলে ব্যর্থ হয়ে বাওড়ের মাছ লুট করেছে। আমাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তারা এই লুটপাট করেছে। সমিতির সদস্য ও পরিবারের সদস্যদের খুন, গুমের হুমকি দিচ্ছে। এতে আমরা খুবই ভীতসন্ত্রস্ত। বিষয়টি প্রশাসনসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
এ বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, বাওড় লুট ও হুমকির বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।