By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে সুন্দরবন
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে সুন্দরবন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে সুন্দরবন

Last updated: 2025/12/07 at 2:41 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 2 weeks ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :  জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুই. প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোন অঞ্চলে বেশি হচ্ছে। তিন. কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চার. ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না।
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। ঋতুভেদে আলাদা আমেজ উপভোগ করা যায় বাংলাদেশে। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ছাড়াও ঋতুভেদে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, নদীভাঙন, ভূমিধস ইত্যাদি মিলিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলা হয় বাংলাদেশকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের ঋতুচক্রের হেরফেরের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও হেরফের ঘটছে। অর্থাৎ আগের মতো দুর্যোগের সেই স্বাভাবিক চিত্রটি এখন আর নজরে পড়ছে না। এর প্রধান কারণই হচ্ছে তাপমাত্রার পরিবর্তন বা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। যার প্রভাবে বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা, মরুকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশে জলবায়ুগত স্থূল পরিবর্তন সৃষ্টি করেছে। ফলে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে নদ-নদীর পানিপ্রবাহ শুকিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে নদীর পানির বিশাল চাপ না থাকার কারণে সমুদ্রের লোনাপানি যতটুকু এলাকাজুড়ে আটকে থাকার কথা ততটুকু জায়গায় থাকছে না। পানির প্রবাহ কম থাকার কারণে সমুদ্রের লোনাপানি স্থলভাগের কাছাকাছি চলে আসছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুল এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। এদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ ও লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে বাইন ও সুন্দরীগাছসহ অন্যান্য গাছের আগামরা রোগ দেখা দিয়েছে। তাতে আবার নানান ধরনের পাতাখেকো কীটের আবির্ভাবও ঘটছে। এখানে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে কীটপতঙ্গের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গ কেন টানা হচ্ছে? আসলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ইকোসিস্টেমের বিষয়টি জড়িত রয়েছে। কোনো অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন হলে সেই অঞ্চলের প্রাণিকুল অথবা কীটপতঙ্গের জীবনধারায়ও পরিবর্তন চলে আসে। এমনও হয়, সেই অঞ্চলের প্রাণিকুলের বিলুপ্তি ঘটে নতুন প্রাণিকুলের সৃষ্টি হয়। মূলত এভাবে অত্র অঞ্চলের জলবায়ুর প্রভাবে বিভিন্ন প্রজাতির কীটের আবির্ভাব হচ্ছে। যেমন- সুন্দরবনেও বিভিন্ন প্রজাতির কীট জন্মেছে। আর গাছগাছালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
দেশি প্রজাতির গাছগাছালি হারিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, বিদেশি গাছের আগ্রাসন। বিদেশি এসব গাছ ও লতাগুল্মের ক্রমাগত বর্ধনের ফলে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে হাজারখানেক প্রজাতির নিজস্ব গাছ। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিদেশি আগ্রাসী গাছগুলো এখন আমাদের দেশি প্রজাতির গাছ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। যেমন- সেগুন, মেহগনি, আকাশমণি, রেইনট্রি, বাবলা, চাম্বল, শিশু, খয়ের ও ইউক্যালিপটাসগাছ এখন অনেকের কাছে দেশি প্রজাতির গাছ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। অথচ এগুলো ভিনদেশি আগ্রাসী গাছ। যে গাছের আগ্রাসী দাপটে দেশি প্রজাতির গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জাতীয় গাছের জন্য প্রচুর জায়গা দরকার হয়, এগুলো দেশি গাছের তুলনায় অনেক দ্রুততার সঙ্গে মাটি থেকে বেশি পরিমাণে পুষ্টি শুষে নেয়। এ ছাড়া আশপাশে দেশি প্রজাতির গাছের বেড়ে ওঠায় বাধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়ায়। মূলত এ গাছগুলো ব্রিটিশ আমলে এতদঅঞ্চলে বিভিন্নভাবে আনা হয়েছে। যা আজ দেশি প্রজাতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শুধু সুন্দরবনেই নয়, দেশের বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি অনেক প্রজাতির পাখপাখালি, জীবজন্তু, ফুলফল, গাছগাছালি দেশ থেকে হারিয়ে গেছে। ইউনেসকোর ‘জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের প্রায় ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, তাতে দেশের বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাসের কারণে পরিবেশের ওপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনে মৎস্য খাতের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দেশের মৎস্যসম্পদের জন্য প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবার একদিকে বৃষ্টির অভাব, অন্যদিকে অসময়ে ভারী বর্ষণ হওয়ায় মাছের প্রজননে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে মাছের ডিম নিজ শরীরে শোষিত হয়ে মা-মাছ মারা যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিকাজের ওপরও ধারাবাহিক অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছে। খরা এবং তাপমাত্রার ক্রমবৃদ্ধির কারণে বহু প্রজাতির ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, তেমনি আগাছা, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অঞ্চলভেদে মাটির উপাদানে তারতম্য ঘটছে এবং কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদনেও ব্যাহত হচ্ছেন কৃষক।
এ ছাড়া বোরো উৎপাদনে প্রচুর সেচের পানির প্রয়োজন পড়ে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জমিগুলোয় লবণাক্ততার কারণে সেচেও বিপত্তি ঘটছে। আবার লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে চিড়িং চাষেও ব্যাপক ধস নেমেছে।
অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে সেচের পানিতে আরেক বিপত্তি ঘটছে। সেখানকার ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি হওয়ায় ফসলের মাধ্যমে তা মানবদেহে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি ফসলের খেতে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। যার কারণে ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার নিচে নেমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা বলতে পারি, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ না হলে শুধু দেশের নিম্নাঞ্চলই প্লাবিত হবে না, মরুকরণ ঝুঁকিতেও পড়বে। অন্যদিকে এর প্রভাব পড়বে আমাদের বনজ ও কৃষিজ সম্পদের ওপরও। যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া তখন অনেক কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে নিজেরাই সচেষ্ট হতে হবে। নদীদূষণ রোধ এবং নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের আনাচে-কানাচে বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে। আগ্রাসী গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশ বা বায়ুদূষণ ঘটে- এমন কাজকর্ম থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। সর্বোপরি শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে প্রামাণ্য চিত্রসহ আমাদের আরজি তুলে ধরতে হবে। তাহলে রাতারাতি জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব না হলেও আমরা যথেষ্ট উপকৃত হব।
সুন্দরবন থেকে ফিরে: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের উপকূলে অবস্থিত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা সহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ৯টি উপজেলায় ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর আর ২০০৯-এর আইলা তার সাজানো জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু হারিয়ে বাঁধের ওপর কেটেছে জীবনের পরবর্তী সাতটি বছর। ইচ্ছে থাকলেও দুই সন্তানকে আর লেখাপড়া করাতে পারেননি। একমাত্র মেয়েকে নিরুপায় হয়ে বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হয়েছেন। অর্থসংকটে ছেলের লেখাপড়া বাদ দিয়ে কর্মে যুক্ত করেছেন। এমন ঘটনা দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এখন অহরহ ঘটছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এখন দৃশ্যমান। আগামী দিনের ভবিষ্যৎ শিশুরাও জলবায়ুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থেকে রেহাই পাচ্ছে না। শুধু বাংলাদেশে নয়, উপকূলীয় দ্বীপরাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবনে জলবায়ুগত সমস্যার প্রভাব পড়েছে। দেশে দেশে এখন ঝড়, বন্যা, খরা আর সুপেয় পানির সংকট। পানি সংকটের কারণে শিশুরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর মানুষ ১০ ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। তথ্য মতে, গত ১ দশকে বরফ গলার হার ৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর স্থলভাগ। ফলে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে যেসব উপকূলীয় দেশ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে সেসব দেশের প্রথম সারিতে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রত্যেক দেশ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূলীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর জন্য দায়ী উন্নত দেশসমূহের মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমন।
জলবায়ুগত দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারানো পরিবারগুলোর শিশুরা অর্থ উপার্জনের জন্য যেকোনো কাজে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে! এতে করে শিশুরা নানাবিধ শোষণ ও নির্যাতনের ঝুঁকিতে পড়ছে। দায়িত্ব নিতে না পেরে অনেক পরিবার মেয়ে শিশুদের দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বহু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে এক পর্যায়ে কাজের খোঁজে শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। এতে করে এসব পরিবারের শিশুরা পাচার হওয়াসহ যৌন হয়রানির ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার শিশু ও নারীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। ইউনিসেফ-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রায় দুই কোটি শিশুর মধ্যে নদীভাঙন এলাকাগুলোয় বাস করছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিশু। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছে ৪৫ লাখ শিশু আর খরার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ শিশু। এসব শিশুর পরিবার বিভিন্ন কারণে শহরমুখী হওয়াসহ পরিবারের শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। শিল্পবিপ্লব পরবর্তী যুগে উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা বেড়ে গেছে বহুগুণ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে ঋতুচক্র বদলে গেছে। বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা। স্থানচ্যুত হয়ে মানুষ অভিবাসী বা শরণার্থীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে ভুগতে ভুগতে অনেক পরিবার সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবার তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
উপকূলে নদীভাঙনের কবলে পড়ে বহু শরণার্থী শিশু ইতিমধ্যে শহরে পাড়ি জমিয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলের শিশুরা মহাসংকটের সম্মুখীন। সবমিলিয়ে উপক‚লের শিশুরা ভালো নেই। জলবায়ুগত সমস্যা প্রকৃতির পরিবর্তনশীল বাস্তবতা। এ সমস্যা থেকে অতি দ্রুত মুক্তিরও লক্ষণ নেই! কার্যকর সমাধান বের না করলে পৃথিবী নামক এই ছোট্ট গ্রহের জন্য কী পরিণতি অপেক্ষা করছে তা সময়-ই বলবে। শিশুদের নিয়ে চিন্তাটা একটু বেশিই। কেননা শিশুদের জন্য কেমন পৃথিবী অপেক্ষা করছে তা নির্ভর করছে জলবায়ু পরিবর্তন কতটা মোকাবিলা করা যাবে তার উপর। বর্তমানে যে হারে উন্নত দেশসমূহে কার্বন নিঃসরণ চলছে সেই হার চলমান থাকলে শিশুদেও টেকসই ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত তাতে কোনো সন্দেহ নেই!
গবেষণা যা বলছে: প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত বছর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১৫ লাখের বেশি মানুষ তাঁদের নিজস্ব আবাসস্থল থেকে স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি সম্পর্কিত ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। শুধু বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় অঞ্চলে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ুগত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার কোটি কোটি শিশু। বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক এলাকার শিশুরা জলবায়ুগত সমস্যার শিকার হচ্ছে বেশি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে শিশুরা দ্রুত খাপ খাইয়ে নিয়ে পারছে না। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ‘ইউনিসেফ’ জানিয়েছে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ৭৬ ভাগ শিশু ইতিমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ উচ্চ তাপমাত্রায় ভুগছে। সংখ্যার বিচারে ঝুঁকিপূর্ণ এসব শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪৬ কোটি।বিশ্বের কোনো অঞ্চলের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ‘ইউনিসেফ’-এর অপর একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ ও বিপর্যয়ে (বন্যা, খরা, ঝড়, দাবানল) ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪ কোটি ৩১ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চীন, ভারত ও ফিলিপাইনসের মতো দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত (৬ বছরে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ) হয়েছে। বিপুল জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এসব দেশের মানুষ বেশি বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। তথ্য বলছে, গত দুই দশকে বাংলাদেশে ১৮৫টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। আর জলবায়ু ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি আছে এ দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ ও প্রকৃতি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুপেয় পানির আধার এখন ধুঁকছে। লবণাক্ততার প্রভাব পড়েছে পুরো উপক‚ল জুড়ে। ফলশ্রুতিতে উপকুলের শিশুদের জীবনে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কোনো না কোনোভাবে লবণাক্ত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে শিশুরা। লবণ পানি পান করার কারণে শিশুরা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। দীর্ঘসময়ব্যাপী লবণ পানি পান করার কারণে শিশুদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা জেলায় লবণাক্ততার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তথ্য বলছে, সাতক্ষীরা ও খুলনার কিছু কিছু এলাকায় পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ১০ পিপিটি (লবণাক্ততা পরিমাপক মাত্রা) পর্যন্ত। পানির অপর নাম জীবন। আর সেই পানি যদি লবণাক্ত বা দূষিত হয়ে পড়ে তবে তা শুধু শিশুদের উপর নয় সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের আবাদী জমির ৩০ ভাগ উপকূলীয় এলাকায়। বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা বলছে, দেশের উপকূলবর্তী প্রায় ৫৩ শতাংশ অঞ্চল লবণাক্ততা দ্বারা সরাসরি আক্রান্ত।চিরসবুজ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপর লবণাক্ততার প্রভাব বেড়েই চলেছে। সুপেয় পানির অভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটের মানুষের সার্বিক জীবনব্যবস্থায় বিরূপ পড়েছে এবং পড়ছে। এলাকার গরিব-অসহায় মানুষদের বিশুদ্ধ পানির জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। পানির জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। যেসব পরিবার বিশুদ্ধ পানির জন্য অর্থ ব্যয় করছে তাদের হয়তো কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। কিন্তু যেসব পরিবার বিশুদ্ধ পানি কিনছে না তাদের লবণাক্ত পানি পান করে জীবন চালাতে হচ্ছে! চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা শিশুদের অধিকাংশই লবণ পানি পান করছে। আবার মাটির গভীর থেকে পানি তোলার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। লবণাক্ত পানির প্রভাবে এলাকার ফসল উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সার্বিকভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে! নানামুখী সংকটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকার সন্ধানে শহরে অভিগমন করছে। সব দিক বিবেচনায় উপকূলীয় এলাকায় শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীতে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে অন্যতম অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে বাল্যবিবাহ। বিশ্বে বাল্যবিবাহ প্রবণ শীর্ষ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে। ২০২০ সালে ইউনিসেফ (জাতিসংঘ শিশু তহবিল)-এর এক প্রতিবেদন মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে শীর্ষে। তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৫৯ শতাংশ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ মেয়ের বাল্যবিবাহ হচ্ছে। বাংলাদেশে যত বাল্যবিবাহ হয় তার এক-তৃতীয়াংশ হয় উপকূলীয় এলাকায়। উপকূলীয় জেলাসমূহ খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও ভোলায় বাল্যবিবাহ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। একের পর এক দুর্যোগে ক্ষত-বিক্ষত উপকূলের পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা যেন আরও খারাপ হচ্ছে। অনেকে কাজ হারাচ্ছে। ফলে উপকূলের অভিভাবকরা নিজের কিশোরী হওয়া মেয়েটাকে আর ঘরে রাখতে চাচ্ছে না! কিশোরী মেয়েটাকে দ্রুত বিয়ে দেওয়াটাই তাদের জন্য যেন অনেক বেশি স্বস্তির! অনেক পরিবার উপকূল ছেড়ে শহরে এসে তাদের মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিয়ে দিচ্ছে। উপকূলে লবণাক্ততার সাথে দীর্ঘদিন বসবাস করার ফলে বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া নারীদের জরায়ু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে উপক‚লের জীবনব্যবস্থা দিনের পর দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। উপক‚লে কাজের ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। অপরদিকে জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে। কাজ হারিয়ে অনেক পরিবার দরিদ্র থেকে চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়ছে। এককথায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপক‚লের জীবন বিপর্যস্ত। নদীভাঙনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বহু পরিবার শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। শহরে এসেও উদ্বাস্তু শিশুরা বিভিন্ন শ্রমের সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের শিশুদের যে পড়ালেখার প্রয়োজন আছে তা হয়তো দরিদ্র পরিবারের পিতামাতা বেমালুম ভুলে যাচ্ছে! এমনকি বহু দরিদ্র পরিবার শিশুর পড়াশোনাকে অলাভজনক কাজ হিসেবে মনে করছে! গবেষণা বলছে, শিশুশ্রমের সাথে যুক্তরাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। শিশুশ্রমের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন পরোক্ষভাবে সেইসব কারণকে ত্বরান্বিত করছে। বাড়তি অর্থের আশায় দরিদ্র পরিবারের দুঃখ ঘোচাতে বহু শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হচ্ছে। এতে হয়তো সাময়িকভাবে পরিবারের কিছুটা অর্থনৈতিক সহযোগিতা হচ্ছে বটে! তবে সার্বিকভাবে শিশুর জীবনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বর্তমানে শিশুশ্রমের সাথে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ শিশু। বেসরকারি তথ্য বলছে, বাংলাদেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৫-১৪ বছর বয়সী মোট শিশু জনসংখ্যার ১৯ ভাগ। বাংলাদেশে বর্তমানে শিশুশ্রমের সাথে যুক্ত সঠিক পরিসংখ্যান নেই বললেই চলে! তবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে শিশুশ্রমের সাথে যুক্ত শিশুর সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি।
‘বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন-২০১৬’ অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশু শ্রম হিসেবে গণ্য হবে। যদি এখনই শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকর, পরিকল্পিত ও বাস্তসম্মত পদক্ষেপ না নেওয়া যায় তাহলে শিশুশ্রমমুক্ত দেশ গড়া স্বপ্নই থেকে যাবে।
জলবায়ু সমস্যার কারণে অনেক শিশু লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে লেগে পড়েছে। একটা সমস্যা কাটিয়ে না উঠতেই আরেকটা সমস্যার কবলে পড়ে শিশুরা দিশেহারা। ফলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।মানসিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।স্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান হল মনের সুস্থতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO এর মতে স্বাস্থ্য হল ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। কিন্তু জলবায়ুগত সমস্যার কবলে পড়া শিশুদের ক্ষেত্রে ঘটছে তার উল্টো। শিশুদের মানসিক বিকাশ মূলত তিন ক্ষেত্র থেকে হয় যথা: পরিবার, বিদ্যালয় ও সামাজিক অবস্থা। এই তিন জায়গার কোনোটা থেকেই শিশুর মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। জলবায়ুগত সমস্যার কবলে পড়া শিশুদের কাউন্সেলিং করা হয় না। অনেক শিশু সমস্যার কাছে হার মেনে বিপথে চলে যাচ্ছে। তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির কাছে খাপ-খাইয়ে উঠতে পারছে না। শরণার্থী শিশুদের মানসিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। সাধারণত শরণার্থী শিশুরা অন্য শিশুদের তুলনায় সাহায্য-সহযোগিতা কম পায়। জলবায়ুগত সমস্যার কারণে ঠিক কতভাগ শিশু মানসিক সমস্যায় জর্জরিত তার সঠিকপরিসংখ্যান নেই। এ নিয়ে কোনো গবেষণাও নেই!
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবার আলাদা করে শিশুর জন্য কখনো ভাবে না! শিশুর পুষ্টি নিয়ে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের হয়তো কোনো ধারণাই নেই! সবচেয়ে বড় কথা, জলবায়ু পরিবর্তনে একটার পর একটা দুর্যোগের শিকার ও করোনা মহামারির বাস্তবতায় আয়-রোজগার কমে যাওয়ার দরুন পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি নিয়ে ভাবার সময় কোথায়! নতুন বিপদ হিসেবে হাজির হয়েছে মূল্যস্ফীতি। পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় যেখানে মেপে মেপে পা ফেলতে হচ্ছে সেখানে পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া কি সম্ভব? ফলশ্রুতিতে উপক‚লবর্তী অঞ্চলসমূহে দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়ছে। দরিদ্র পরিবারের হাজার হাজার শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। উপকূলের বহু দরিদ্র পরিবার জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। ঠাঁই নিচ্ছে শহরের কোনো বস্তিতে, নদীর তীরে বেড়িবাঁধে কিংবা রেললাইনের পাশে। নিজেরাই যেখানে জীবনযাপন ও খাদ্যের জোগাড় করতে ক্লান্ত সেখানে পরিবারের শিশুদের পুষ্টির চিন্তা করা রসিকতা ছাড়া আর কী! অপুষ্টির প্রধান কারণ দারিদ্র্য। তবে অন্যভাবে চিন্তা করলে পরিবারের সদস্যদের পুষ্টিজ্ঞান না থাকলেও শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূল অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার দারিদ্র্য হয়েছে এবং এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। উপক‚লবর্তী জেলাসমূহে দারিদ্র্য বেশি, ঠিক সেই কারণেই উপক‚লের শিশুরা অপুষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেও বেশি। পরিবারের আয় কমে গেলে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হবে- এটাই স্বাভাবিক! চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে! স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সদ্য প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের হাসপাতালগুলোয় তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। পুরো দেশের অবস্থা যখন এই তখন উপক‚লের অবস্থা সহজে অনুধাবনযোগ্য।
ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা শিশুদের জীবন তছনছ করে দিচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭টি অভীষ্ট সফলভাবে অর্জন করতে হলে এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ ও টেকসই পৃথিবী গড়তে জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি অভিযোজনের বিকল্প নেই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের সুরক্ষা দিতে হবে সবার আগে।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের এই বিপর্যয়কে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান-এ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোনো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্যিই পড়ছে কিনা, তা চারটি মানদন্ডে বিবেচনা করা হয়: ১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে ৩. সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ৪. ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার বিস্তার এবং হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক বেশি। তাই উল্লেখিত চারটি মানদন্ডেই বাংলাদেশ রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় শীর্ষে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০-এ প্রকাশিত গ্লােবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এই সমীক্ষা চালানো হয় ১৯৯০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ১৯৩টি দেশের উপর। পরবর্তীতেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
আবহমান কাল থেকে এদেশে ঋতুবৈচিত্র্য বর্তমান। ছয় ঋতুর কারণে দেশটিকে ষড়ঋতুর দেশও বলা হয়ে থাকে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যা অনেক সময়ই বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। এছাড়াও মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের আগমুহূর্তে কিংবা বিদায়ের পরপরই স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, কিংবা সাগরে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়, যার আঘাতে বাংলাদেশ প্রায় নিয়মিতই আক্রান্ত হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে বাংলাদেশের এই স্বাভাবিক চিত্রটি এখন অনেকখানি বদলে গেছে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্তর সর্বদিক দিয়ে সংঘটিত এসকল পরিবর্তন বাংলাদেশে জলবায়ুগত স্থূল পরিবর্তন সৃষ্টি করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নদ-নদীর পানিপ্রবাহ শুকনো মৌসুমে স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না। ফলে নদীর পানির বিপুল চাপের কারণে সমুদ্রের লোনাপানি যতটুকু ।

জন্মভূমি ডেস্ক December 11, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article বৈদেশিক মুদ্রা আনছে সাতক্ষীরার মিঠাপানির শুঁটকি
Next Article হারিয়ে যাচ্ছে কলারোয়ার ঐতিহ্যবাহী টালি শিল্প

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ

By জন্মভূমি ডেস্ক 37 minutes ago
সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago
খুলনা

ডুমুরিয়ায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

By জন্মভূমি ডেস্ক 17 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

বিপন্ন উপকূল, দিশেহারা মানুষ, কে শুনবে দুঃখ

By জন্মভূমি ডেস্ক 37 minutes ago
সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago
জাতীয়তাজা খবর

যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে

By জন্মভূমি ডেস্ক 19 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?