জন্মভূমি ডেস্ক : বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা অনুষ্ঠিত হবে আগামী আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে টঙ্গীর তুরাগ তীরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা এ বছরও দুই পর্বে তিন দিন করে মোট ছয় দিন অনুষ্ঠিত হবে। তাবলীগের দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের বিশাল এ আয়োজনে যাতে কোনো ঘাটতি না থাকে, সেজন্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ইজতেমার মুরব্বিদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশেষভাবে তা তদারকি করা হচ্ছে। সুশৃঙ্খলভাবে ইজতেমার প্রস্তুতি কাজ শেষ করতে জেলা প্রশাসনেরও রয়েছে নানান উদ্যোগ।
আজ শনিবার (২০ জানুযারি) টঙ্গীর তুরাগ তীরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাবলীগ মুরব্বিদের মধ্যে বিভাজনের কারণে এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম দফায় তাবলীগ মুরব্বি জোবায়ের গ্রুপের ইজতেমা ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে অংশ নেবেন দিল্লির তাবলীগ মুরব্বি মাওলানা সাদের অনুসারীরা। ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে মাওলানা সাদ গ্রুপের বিশ্ব ইজতেমা।
ইতোমধ্যে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ঘন কুয়াশা এবং তীব্র শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিদের স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রস্তুতির কাজ চলছে। ময়দানজুড়ে পাটের চট দিয়ে সামিয়ানা টানানো, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা মেরামত, ইলেকট্রিক লাইন ও মাইক স্থাপন, মুসল্লিদের ওজু-গোসলের জন্য ব্যবস্থাপনাসহ সব কাজই ইজতেমা শুরুর আগেই শেষ করবেন মুসল্লিরা। তাবলীগ মুরব্বীদের মাঝে বিভাজন থাকলেও সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে এর কোনো প্রতিফলন নেই।
প্রতিবছরের মতোই এবারেও বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সার্বিক সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে ইতোমধ্যে চলছে নানান প্রস্তুতিমূলক কাজ। সারা বিশ্ব থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমায় এসে যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন, সেজন্যে মাঠ ভরাট, টিনশেডের বিদেশি নিবাস তৈরি, পর্যাপ্ত পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহসহ আনুষঙ্গিক অনেক কাজ করা হচ্ছে। টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা আগের চেয়ে আরও অধিক পরিমাণে ব্যবস্থা করার দাবি রয়েছে তাদের।
ইজতেমা মাঠে কাজ করতে আসা তাবলীগ জামাতের মুসল্লি ঢাকার ব্যবসায়ী মীর আওলাদ হোসেনেরসহ অন্যান্য মুসল্লিরা জানান, ইজতেমা ময়দানের নিচু জমি ভরাট, বিশাল সামিয়ানা টানানো, রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। একইসঙ্গে চলছে ময়দানে খুঁটি পোতা, রাস্তাঘাট মেরামত ও মাঠ সমতল করার কাজ। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিপুল সংখ্যক লোকজন গাজীপুর, ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে তাবলীগ জামাতের সাথীরা ময়দানে এসে স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. ইব্রাহিম খান জানান, দেশ-বিদেশ থেকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ ছাড়া বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, নৌ টহল, বিস্ফোরক দ্রব্য বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল দায়িত্ব পালন করবে। ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। ইজতেমাস্থলের নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতেম মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবারও ইজতেমায় আগত লাখো মুসল্লির জন্য অন্যান্য বারের মতো আলাদা করে তৈরি করা হচ্ছে চটের ও টিনশেডের আলাদা ছাউনি। দুই গ্রুপের আলাদা সময়ে ইজতেমা সম্পন্ন করতে যাতে কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়, তা মাথায় রেখেই চলছে প্রস্তুতি কাজ। ইজতেমা শুরুর আগেই সব ধরনের প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন হবে।’