টেলিটক গত ২০ বছরে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা লোকসান
টেলিটকের কাছে বিটিআরসি’র পাওনা ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা
বিটিসিএলের কাছে বিটিআরসি’র পাওনা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা
বিশেষ প্রতিনিধি : টেলিটক, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এবং টেলিফোন শিল্প সংস্থাকে (টেশিস) বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ক্রমাগত লোকসানে থাকা এ তিন প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। টেলিটক, বিটিসিএল ও টেশিসকে ৩০ জুনের মধ্যে লাভে ফিরতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
টেলিটক, বিটিসিএল ও টেশিসকে ৩০ জুনের মধ্যে লাভে ফিরতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ১৯৭৩ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৪ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠে টেলিফোন শিল্প সংস্থা। এখানে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যৌথভাবে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন করে সিমেন্স। এর মধ্যে ২০০৪ সালে বড় অংকের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসে স্যামসাং। তবে টেশিসের অব্যবস্থাপনা ও কমিশন বাণিজ্যের কারণে দুটি ব্র্যান্ডই চলে গেছে। এমনকি সম্প্রতি টেশিস পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের প্রতারণার শিকার হোন খোদ প্রতিমন্ত্রী।
টেশিসের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টেশিসে নজরদারি ও জবাবদিহিতা ছিল না। তারপরেই ধীরে-ধীরে টেশিসের লাভ কমতে থাকে এবং তারা এফডিআর ভেঙে-ভেঙে বেতন খাওয়া শুরু করে।
এদিকে, সাশ্রয়ী প্যাকেজ দিয়ে গ্রাহকদের মাঝে সাড়া ফেলে ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা টেলিটক। অপারেটর হিসেবে এ কোম্পানিই প্রথম দেশে থ্রিজি ও ফাইভ-জি সেবা চালু করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪৭ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে টেলিটক।
টেলিটক ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র বলছে, সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা টেলিটক গত ২০ বছরে লোকসান গুনেছে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। তরঙ্গ ও লাইসেন্স ফি বাবদ প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পায় বিটিআরসি। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে টেলিটকের মোট ব্যয় ছিল ৭৪৯ কোটি টাকা এবং তারা লোকসান গুনেছে ২৪৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, বিটিসিএলের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরের আগে টানা ১৫ বছর বিটিসিএল লোকসান গুনেছে। লোকসানের ধারা এখনো অব্যাহত আছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের মোট ব্যয় প্রায় ৮৮৮ কোটি টাকা এবং তাদের লোকসান হয় ১৪৬ কোটি টাকা। বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির মন্দ পাওনার পরিমাণ ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এগুলো আদায় না-ও হতে পারে। বর্তমানে বিটিসিএলের কাছে আয়ের অংশ ও বিভিন্ন ফি বাবদ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা পায় বিটিআরসিও। এক্ষেত্রে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আয়ের উৎসে কোনো লাভ নেই; শুধু লোকসান রয়েছে। সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ কোটি টাকার লোকসান গুনেছে বিটিসিএল। এ অবস্থায় অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে লোকসানেপড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে এবং বিনিয়োগ করতে চায় না সরকার। সে জন্য টেলিটক, বিটিসিএল ও টেশিসকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার কথা জানালেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন,
টেলিটক, বিটিসিএল ও টেশিস-এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যালুয়েশন করতে হবে। এ বিষয়টি আগামী বোর্ড মিটিংয়ে উত্থাপনের জন্য আমি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছি। এই কোম্পানিগুলোকে লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করার জন্য আমরা এক দিকে দেশীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাই; পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও। যদিও এ তিন প্রতিষ্ঠানকে ৩০ জুনের মধ্যে লাভে ফিরতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক।