জন্মভূমি ডেস্ক : নভেম্বর মাস শেষ হতে চললেও এখনো রাজধানীর মানুষের কাছে ধরা দেয়নি শীতের তীব্র অনুভ’তি। দিনে সূর্যের আলো থাকছে, রাতেও নেই কনকনে ঠান্ডা বাতাস। সেকারণে নগরবাসীর শরীরে এখনো উঠেনি গরমের কাপড়। বরং আবহাওয়ার পরিবর্তন বা শীতের আগমন আসি আসি করলেও নাগরিকরা ভুগছেন জ¦র-ঠান্ডায়। এমন অবস্থায় শীত যে দেশে আসেনি সেটি বলতে নারাজ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ভৌগলিক কারণে মধ্য নভেম্বর থেকেই শীতের অনুভ’তি শুরু হয়ে গেছে। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল এদিন ১৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশ শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়বে। সেসময় সারাদেশেই তাপমাত্রা কমে আসবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ভৌগলিক কারণে আমাদের দেশে সব জায়গায় তাপমাত্রা একই রকম থাকেনা। যেমন দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল- যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরাতে কনকনে ঠান্ডা পড়ে। কিন্তু কুমিল্লা, কক্সবাজার চট্টগ্রামের মানুষ সেই ঠান্ডার অনুভ’তি পায় না। এর কারণ উত্তরা বাতাসের গতিপ্রকৃতি, হিমালয়ের হিমবাহ অন্যতম। এখন পঞ্চগড়ে তাপামাত্রা বা শীতের অনুভ’তি প্রকট আকার নিয়েছে। হিমালয়ের বাতাসের তীব্রতা বাড়লে রাজধানীর নাগরিকদের ওপর শীতের প্রভাব পড়বে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। শনিবার দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হলেও সেটি আমাদের দেশের অংশে কোন প্রভাব রাখবে না। বরং দক্ষিণ ভারতে এর প্রভাব বেশি দেখা যাবে।
শনিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
যখন উত্তরা বাতাস বয়ে যায়, বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে আসে তখনই শীতের তীব্রতা বেশি হয়। এ জন্য শীতকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি কেমন সেটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর প্রভাবে শীত বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। আর দেশে জানুয়ারীকেই সবচেয়ে শীতল মাস বলা হয়ে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জনকণ্ঠকে জানান, সাধারণত তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসলে শীত অনুভ’ত হয়। এটি ক্রমান্বয়ে কমতে থাকলে শীত অনুভ’ত হবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে ঢাকার তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৪ ডিগ্রির ঘরে রয়েছে। আগামী সপ্তাহে এটি আরও কমবে। এই আবহাওয়াবিদ সতর্ক করে জানান, এবছর শীত বেশি পড়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদী তিন মাসের (নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি) পূর্বাভাসে এবারের শীত মৌসুমে দেশে ৮ থেকে ১০টি মৃদু (তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দু-তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ (৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বয়ে যেতে পারে। এবার তীব্র শীতের আগে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ সময় বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে পাঁচটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে এক-দুটি নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে পারে। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ড. মল্লিক বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাস দেওয়া হয় পেছনের কয়েক বছরের গড় করে। উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, যে দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিগত ৩০ বছরের পরিসংখ্যানের গড় করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাসের চেয়ে সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকরী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।