জি,এম,ফিরোজ, ডুমুরিয়া : এক সময়র আর্শিবাদ বিল ডাকাতিয়া বর্তমানে ডুমুরিয়া তথা খুলনার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অভিশাপে পরিণত হয়েছে। পােল্ডার পদ্ধতির পর শৈলমারী, ভদ্রা ও হামকুড়া নদী পলি ভরাট হওয়ার কারণে বিল ডাকাতিয়া ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। ২৫ নং পােল্ডারের আওতায় বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের জীবন যাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে।
বিল ডাকাতিয়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল এটি। ৭৬ হাজার একর জমি নিয়ে গঠিত। খুলনা জেলার খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানা এবং ডুমুুিরয়া, ফুলতলা ও যশােরের অভয়নগর কেশবপুর মনিরামপুর উপজেলার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে এ বিলর উপর নির্ভরশীল। একসময় কৃষিজীবী মানুষের আর্শিবাদ ছিল বিল ডাকাতিয়া। মূলত কৃষি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠছিলে এ বিলকে কেন্দ্র করে। একসময় বিল ডাকাতিয়া ম্যানগ্রােভ সুন্দরবনের অধীন ছিলাে। ৯০ এর দশকেও কৃষিজীবী মানুষ ২-৩ ফুট মাটির নীচ থক বড় বড় সুন্দরী গাছ ও কাঠ উত্তােলন করতাে। ১৯৬০ এর দশকে উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পের আওতায় ওয়াপদার পােল্ডার নির্মাণের ফলে বিল ডাকাতিয়া পােল্ডারের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে সাময়িকভাবে উপকার পেলেও পরিণামে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ৮০ দশক থেকে জলাবদ্ধতা হয় তীব্রতর।
পলি দ্বারা ভরাট হামকুড়া, শোলমারী, হরি শ্রী ও ভদ্রা নদী দিয়ে পানি সরতে না পারায় বিল ডাকাতিয়াসহ খুলনা যশাের জেলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ২৫ নং পােল্ডারটি শাহপুর- দৌলতপুর- জামিরা- ফুলতলা জনপদ নিয়ে গঠিত। বিল ডাকাতিয়ার দক্ষিণ সীমানা শাহপুর হামকুড়া নদী থেকে বালিয়াখালি ব্রীজের নিচ দিয়ে ভদ্রা নদীর বাগমারা পর্যন্ত। রংপুর ইউনিয়নের শলুয়া বাজার আপার শোলমারী নদীর উপর ৭ ভোল্টে স্লুইস গেট লােয়ার শোলমারী গেট ও শালতা মােহনার সাথে যুক্ত হয়েছে। পােল্ডার নির্মাণের পর নদীতে পলি জমে বার বার নদী ভরাট হয়েছে। অবশেষে কয়াত ১০ ভল্ট স্লুইজ গেট নির্মাণ কর জােয়ার ভাটা বন্ধ করা হয়েছে।
১৯৮৪ সাল বন্যায় বিল ডাকাতিয়া অঞ্চল প্লাবিত হয়। বানভাসি মানুষ শলুয়া ও আমভিটা ভেঁড়ি বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়। প্রায় এক যুগ ধরে জলাবদ্ধতা স্হায়ী হয়। আস্তে আস্তে জনগণের মধ্যে আন্দোলনের দাঁনা বেঁধে ওঠে। ১৯৮৮ সালে কৃষক সংগ্রাম সমিতি এবং বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের ২০ হাজার জনগণ খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে। এ অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘােষণার দাবি করেন। তৎকালীন এরশাদ সরকারের শাসনামলে ৬৮ কােটি টাকার প্রকল্প জলাবদ্ধতা নিরসন ব্যর্থ হয়। ১৯৯০ সালে ১৮ সেপ্টম্বর মাসে থুকড়া বাজারে সমাবেশের ডাক দিলে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সেখানে পুলিশ মােতায়েন করে। জনগণ এই বাঁধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করে এবং ১৮ সেপ্টম্বর বাঁধ কেটে জােয়ার ভাটা আন্দেলন সফল করে। প্রায় ৩ বছর জােয়ার ভাটা চালু থাকায় বিল ডাকাতিয়া উল্লেখযােগ্য পরিমাণ জমি উঁচু হয়। ১৯৯২-৯৩ সালে ২২৮ কােটি টাকা ব্যয়ে খুলনা যশাের পানি নিষ্কাশন ও পুর্নবাসন প্রকল্প (কেজিডিআরপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বাের্ড। এ ছাড়া শলুয়া স্লুইস গেট থেকে কৌয়া নদী খনন এবং শলুয়া থেকে বিল ডাকাতিয়ার মাধ্যেখান দিয়ে জামিরা পর্যন্ত ৮০ ফুট চওড়া খাল খনন করে। খাল খননের পর পানি নিষ্কাশন শুরু হয়। এরপর বেশ কয়েক বছর বিল ডাকাতিয়া জলাবদ্ধমুক্ত ছিল।কিন্ত কালের পরিক্রমায় আবার নদী ভরাট হতে শুরু করে। বন্ধ হয় বিলর পানি নিষ্কাশন। তার পর থেকে বিল ডাকাতিয়া আবারও অভিশাপ পরিণত হয়। প্রতিবছর রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দেড়ুলী, কৃষ্ণনগর, রংপুর ইউনিয়নের বটবেড়া, মুজারগুটা, বারানশী, সাড়াভিটাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম পানিত তলিয়ে যায়। চারদিকে পানিতে থৈ থৈ। বাড়ির উঠানে ১-৩ ফুট পানি। ঘরে থাকাতাে দূরের কথা মাথা গুজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে ফেলেছ তারা।
এদিকে অবৈধখাল দখলকারিরাও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিল ডাকায়িাসহ কয়েকটি বিলের খাল দখলে মেতে উঠেছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর তা আবার দখলর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ নেতারা। এমন অভিযােগ করেছেন বিল ডাকাতিয়া সংগ্রাম ঐক্যজােটের আহবায়ক শেখ আমান উল্লাহ, বিএম সামিউল ইসলাম, বিএম নাজমুল ইসলাম, ইউপি সদস্য গােলাম রব্বানী। সম্প্রতি বর্ষামৌসুমে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পর ঐ খালগুলাে দখলমুক্ত করে প্রশাসন।
রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদর চেয়ারম্যান মনােজীৎ বালা বলেন; দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্যে জনগণকে নিয়ে শোলমারী গেটের সামনে স্বেছাশ্রমে প্রতিনিয়ত কাজ করেছি। তাছাড়া সরকারীভাবে স্কেভটর মেশিন দিয়ে পলি উত্তােলনের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন বলন; জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ব্যাপক কাজ করেছি। বসতবাড়ি থেকে পানি প্রায় নেমে গেছে। তবে নদী খনন ছাড়া স্হায়ীভাবে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব নয়।
ডুমুরিয়ায় জলাবদ্ধতা: বিল ডাকাতিয়া এখন কৃষকের অভিশাপ!
Leave a comment