গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : তালায় কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা। গ্রামে গ্রামে শীতের উপাদেয় খাবার কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন এখানকার নারীরা। মাষকলাই ভিজিয়ে সেই ডালের সঙ্গে পাকা চালকুমড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয় এ সুস্বাদু বড়ি। শীতের সময় গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ মহিলা পালা করে বড়ি তৈরি করার কাজটি করে থাকেন। এ কাজে বাড়ির বউ, শাশুড়ি, মা, বোনেরা নিয়োজিত রয়েছেন।
তালা উপজেলার নারীরা এই বড়ি তৈরি করার জন্য বেশ কয়েক মাস আগে থেকে চাহিদা মতো পাকা চালকুমড়োর ব্যবস্থা করেন। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন হয়। মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়া অন্য ডালেও তৈরি করা যায় এই বড়ি। রোদে শুকাতে মচমচে করতে পারলে এই বড়ির ভালো স্বাদ পাওয়া যায়।
বড়ি তৈরি করা বিষয়ে আগোলঝাড়া গ্রামের নিলুফা খাতুন জানান, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিভাবে কুচি করে রাখতে হয়। এরপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। অন্যদিকে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় আথবা মেশিনে বেটে নিতে হয়। এরপর বাটা ডালের সঙ্গে কুমড়ো মেশাতে হয়। যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়, ততক্ষণ খুব ভালো করে হাত দিয়ে এ মিশ্রণ মিশাতে হয়। এরপর কড়া রোদে পাটি বা কাপড় বিছিয়ে হাতের কৌশলে বড়ির ছোট ছোট আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হয়। এভাবে বড়ি তিন থেকে চার দিন রোদে শুকিয়ে অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
তালা সদরের নুরজাহান খাতুন বলেন, শীতের সময় মূলত বড়ি তৈরি করা হয়। এ বড়ি নিজেদের খাওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়। বড়ির পুষ্টি গুণ অনেক বেশি। এটা পেটের জন্য বেশ উপকারী। রুচি সম্মতভাবে খাওয়া যায়।
তালা বাজারের বড়ি বিক্রেতা বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘শীতকালে বাজারে কুমড়ো বড়ির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এ সময় কুমড়োর বড়ি তৈরি করে আমাদের মোটামুটি ভালো আয় হয়।’
তালা উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শরীফ আব্দুল মতিন বলেন, বর্তমানে বড়ির উপকরণের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেকেই বড়ি তৈরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তবুও গ্রামে গ্রামে শীতের উপাদেয় খাবার কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। বিদেশে বড়ি এখন বেশ জনপ্রিয়। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের নিকট বিদেশে বড়ি পাঠিয়ে থাকেন।
