মারপিট করায় ছেলের বিরুদ্ধে মায়ের মামলা
তালা প্রতিনিধি : তালা উপজেলার পল্লীতে মা ও বোনদের ফাকি দিতে প্রতারণার মাধ্যমে অসুস্থ পিতা দলিল উদ্দীনের কাছ থেকে জমি লিখে নেন ২ ছেলে আব্দুস সাত্তার ও হোসেন আলী। বিষয়টি জানাজানি হলে জমি ফেরৎ দেবার কথা বলে বৃদ্ধা মায়ের কাছ থেকে সাড়ে ৩লক্ষ টাকা নেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও টাকা বা জমি ফেরৎ না দিয়ে উল্টো বৃদ্ধা মাকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে ছেলেরা। এ ঘটনার হতভাগ্য মা খাইরুন্নেছা বেগম সাতক্ষীরার আদালতে ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। নির্মম এই ঘটনাটি ঘটেছে তালা উপজেলার ঢ্যামসাখোলা গ্রামে।
উপজেলার ঢ্যামসাখোলা গ্রামের বৃদ্ধা খাইরুন্নেছা বেগম জানান, তাঁর স্বামী দলিল উদ্দীন মোড়ল অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার কথা বলে ছেলে আব্দুস সাত্তার ও হোসেন আলী মোড়ল বাড়ি থেকে রেজিষ্ট্রি অফিসে নিয়ে সমন্ত জমি নিজেদের নামে লিখে নেন। সম্পত্তির ৯জন ওয়ারেশ রেখে দলিল উদ্দীন মারা যাবার পর জমি রেজিষ্ট্রির বিষয়টি জানাজানি হলে পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে আব্দুস সাত্তার ও হোসেন মোড়ল সালিশে ওয়ারেশ হিসেবে প্রাপ্য জমি তাদের মা এবং বোনদের ফেরৎ দিতে রাজি হন। এজন্য সবমিলিয়ে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দাবী করলে বৃদ্ধা মাতা খাইরুন্নেছা বেগম (৭৫) সেই টাকা যোগাড় করে ছেলেদের দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও টাকা বা জমি ফেরৎ পায়নি মা এবং ৩ ভুক্তভোগী বোন। এঘটনায় বিরোধের জেরে বৃদ্ধা মাতাকে পিটিয়ে আহত করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ছেলে ছাত্তার মোড়ল ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগম। এঘটনায় প্রতিবাদ করায় বোন আসমাকেও মারপিট করা হয়। পৈশাচিক অত্যাচারের ফলে হতভাগ্য বৃদ্ধা মা খাইরুন্নেছা বেগম ছেলে সাত্তার, হোসেন ও ছেলের বৌ খাাদিজা এবং হামিদা বেগমদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার আদালতে একটি মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগী মা খাইরুন্নেছা বলেন, তাঁর স্বামী দরিদ্র ছিলেন। ৩ মেয়ে আসমা বেগম, আমেনা বেগম ও ছলেয়া বেগমকেও বিয়ে দেয়া হয় দরিদ্র ঘরে। ছেলেদের কারনে ৩ মেয়েসহ আমি অসহায় হয়ে অমানবিক জীবন-যাপন করছি।
তিনি বলেন, মেঝো মেয়ে ছলেয়া বেগম বিয়ের পর লেবাননে যান। সেখানে গৃহকর্মী হিসেবে চাকরি করে বেতনের সমুদয় টাকা প্রতি মাসে ভাই হোসেন আলীর ব্যাংক হিসাবে পাঠাতো। ৫ বছর ৩মাস পর দেশে ফিরে ছলেয়া বেগম তার পাঠানো প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা ফেরৎ চাইলে ভাই হোসেন আলীর সাথে তার বিরোধ বাঁধে। দীর্ঘ বিরোধের একপর্যায়ে হোসেন আলী ও তার স্ত্রী হামিদা বেগম ২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ফেরৎ দিতে চাইলেও ছলেয়াকে মাত্র ৩ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়েছে। অনুরুপ সেঝো মেয়ে আসমা বেগম জমি কেনার জন্য আপন ভাই মোস্তফাকে সাড়ে ৩লক্ষ টাকা দিয়েছিল। ১৭ বছরের মধ্যে মাত্র ১ লক্ষ টাকা ফেরৎ দিয়ে বাকি আড়াই লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে মোস্তফা। অপরদিকে ছোট মেয়ে আমেনা বেগম ঢাকায় কাজ করে জমানো ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা তার মেয়ের বিয়ের জন্য আপন ভাই সাত্তার মোড়লের কাছে জমা রাখে। দীর্ঘ ৪/৫ বছরের মধ্যে সাত্তার সেই টাকা ফেরৎ না দেয়ায় ক্ষোভে আমেনা বেগমকে তালাক দিয়েছে তার স্বামী মফিজুল ইসলাম। বর্তমানে ৩ ছেলে আর ১ মেয়েকে নিয়ে মায়ের সাথে অমানবিক জীবন যাপন করছে আমেনা বেগম।
ভুক্তভোগী ছলেয়া বেগম বলেন, ৩ কুলাঙ্গার ভায়ের কারনে আমরা ৩বোন সহ বৃদ্ধা মা সব হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। পাওনা টাকা এবং প্রাপ্য জমি ফেরৎ চাইলে ৩ ভাই, ভাবি ও হোসেন ভায়ের শশুর সাকাত খাঁ প্রতিনিয়ত আমাদের মারপিট ও গালিগালাজ করে। তাদের অত্যাচার ও হুমকি থেকে বাঁচার জন্য মা এবং বোন আসমা বেগম বেগম আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। এই মামলা করার পর থেকে ছেলে সাত্তার মোড়ল, হোসেন আলী মোড়ল ও তার শশুর ঘোনা গ্রামের সাকাত খাঁ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধা মা খাইরুন্নেছা বেগম এবং তার ৩ অসহায় মেয়ে আসমা বেগম, আমেনা বেগম ও ছলেয়া বেগমকে হুমকি প্রদান করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এবিষয়ে জানার জন্য বৃদ্ধার কোনও ছেলেকে পাওয়া যায়নি। তবে হোসেন আলীর শ^শুর সাকাত খাঁ বলেন, আমার জামাইয়ের বোনেরা জমি পাবে সত্য কিন্তু ভিটে বাড়ি থেকে তাদের কোনও জমি দেয়া হবেনা। আর টাকা পয়সা পারলে তারা আদায় করে নিবে।