মধুপুরে যুবদল কর্মী জখম
জন্মভূমি রিপোর্ট : তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নে বিএনপি’র এক সাবেক নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী এলাকায় ফিরেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর তারা এলাকা থেকে পালিয়েছিলেন, গত মাস খানেক আগে তারা ফিরেছেন। তারা বিএনপি এবং যুবদলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশের সাথে মিশে আরেকটি পক্ষকে নাজেহাল করছেন। যদিও তারা প্রকাশ্যে না এসে অপকর্মের নেপথ্যে থাকছেন। এছাড়া পূর্ব শত্রুতা এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেও বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকরা মারামারি করছেন।
রোববার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে দক্ষিণ মোকামপুর এলাকার স্থানীয় যুবদল কর্মী হেলাল শেখ (২৪) বাজার থেকে মোটর সাইকেল যোগে বাড়ী ফিরছিলেন। পথে ওৎ পেতে থাকা ২০/২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী ধাঁরালো অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে তার উপর হামলে পড়ে। তাদের এলোপাতাড়ি মারপিটে তিনি রক্তাক্ত জখম হন। দুর্বৃত্তরা তার মোটর সাইকেলটিও ভাংচুর করেছে। এরপর ওই বাহিনির সদস্যরা ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহ জামালের বাড়ীতে যেয়ে তাকে খুঁজে না পেয়ে নারীদের গালি-গালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা জামালকে যেখানে পাবেন, সেখানেই মারপিট করবেন বলে হুমকি দিয়ে চলে আসেন। হামলা ও ভাংচুরসহ পরবর্তীতে ত্রাস সৃষ্টিতে স্থানীয় যুবদল নেতা গোলাম নবী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানান, এর আগে দক্ষিণ মোকামপুর গ্রামের বাসিন্দা আরেক যুবদল নেতা একলাসুর রহমানকে সন্ত্রাসীরা বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এই অপরাধও একই গ্রুপ সংঘটিত করে। তাদের নেপথ্যে এলাকায় ফিরে আসা আওয়ামী লীগেরও কয়েকজন ছিল।
মধুপুর পুলিশ ক্যাম্পের (আইসি) উপ-পরিদর্শক নূর আলম মুন্সী দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, খবর পেয়ে আহত যুবককে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। পূর্ব শত্রুতা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। আক্রান্ত ব্যক্তি এবং হামলাকারিরা একই রাজনৈতিক দলের।
তিনি বলেন, জামাল নামে এক ব্যক্তির বাড়ীতে রাতে দুবৃত্বদের উপস্থিতির খবর পেয়ে পুলিশ ছুটে যায়। কিন্তু তাদেরকে পাওয়া যায়নি। যদিও আশ-পাশের লোকজন উচ্চ স্বরে অশ্লীল বাক্যের ব্যবহার শুনতে পেয়েছেন বলে তাকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের যে পাঁচ/ছয় জন নেতা-কর্মী এলাকায় অবস্থান করছেন, তারা বিগত দিনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি হাসান মুন্সির পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন, এমন জনশ্রুতি রয়েছে। বিএনপি’র সাবেক ওই নেতা দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, আওয়ামী লীগের কারো সাথে তার যোগাযোগ নেই। কথাও হয়না। রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ অপর একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি জানান, গত দুই দিন আগে আওয়ামী লীগের দু’জন নেতা-কর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুবৃত্বরা ভাংচুর করেছে। তিনি ওই ঘটনার প্রতিবাদ করায় ক্ষুব্ধ হওয়া পক্ষটি তার বিরোধিতা শুরু করেছে।
তেরখাদা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ জিল্লাল হোসেন সোমবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, রোববার রাতে দক্ষিণ মোকামপুর এলাকায় সংঘটিত হামলা ও মোটর সাইকেল ভাংচুরের ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে আসেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র খুলনা জেলা আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, আওয়ামী লীগ অথবা দলটির কোনো দোসরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বিএনপিতে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই কাজের সাথে যে বা যারা জড়িত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলীয় কোনো কোন্দল থাকলে বিবাদমান পক্ষদ্বয়ের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মিমাংশা করা হবে।