শেখ আব্দুল হামিদ : সম্প্রতি উদ্ধারকৃত তিনটি কুমিরকে খুলনা মহানগরীর বয়রাস্থ বন্যপ্রাণি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। চিন্তা করা হচ্ছে পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাতির এই তিনটি কুমিরকে এক জায়গায় রেখে বাচ্চা জন্ম দেওয়া যায় কি না।
বিলুপ্ত ঘোষণার পরও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদী, খাল ও জলাশয়ে এখনো টিকে রয়েছে মিঠা পানির কুমির। সম্প্রতি নড়াইল, ফরিদপুর ও পাবনার পৃথক তিনটি জায়গা থেকে মিঠা পানির তিনটি কুমির উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত কুমির তিনটিকে খুলনা মহানগরীর বয়রাস্থ বন্যপ্রাণি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। বর্তমানে কুমির তিনটিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিন্তা করা হচ্ছে, পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাতির এই তিনটি কুমিরকে এক জায়গায় রেখে বাচ্চা জন্ম দেওয়া যায় কি না।
পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০০০ সালে বাংলাদেশ থেকে মিঠা পানির কুমিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, বিলুপ্ত ঘোষণা করার আগে এই ধরনের কুমির বাংলাদেশের জলাধারগুলোতে শেষবার দেখা গিয়েছিল ১৯৬২ সালে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গজারিয়ার ভুবনেশ্বর নদ থেকে একটি পুরুষ প্রজাতির কুমির উদ্ধার করা হয়। এর আগে স্থানীয়রা ঐ নদীতে কুমির দেখতে পায়। এরপর স্থানীয় প্রশাসন সতর্কমূলকভাবে ভুবনেশ্বর নদে মানুষের গোসল ও মাছধরা বন্ধ করে দেয়। তবে উৎসুক লোকজন কুমির দেখার জন্য ঐ নদীর পাড়ে অপেক্ষায় থাকতেন। পরে স্থানীয় লোকজন কুমিরটি উদ্ধার করার জন্য খুলনার বন্যপ্রাণি উদ্ধারকারী দলকে খবর দেয়। হঠাৎ করে গত ১৭ অক্টোবর বিকেলে ঐ নদে কুমিরটি ভেসে ওঠে। এরপর বন্যপ্রাণী উদ্ধারকারী দল পুরো এলাকা জাল দিয়ে ঘিরে ফেলে কুমিরটি নদ থেকে উদ্ধার করে। কুমিরটির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি। এছাড়া ওজন প্রায় ৯০ কেজি। এর চার দিন পর ২১ অক্টোবর পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের একটি জলাশয় থেকে স্থানীয় লোকজন আরেকটি কুমির জাল দিয়ে ধরে। পরে সেটিকে বন্যপ্রাণী উদ্ধারকারী দল খুলনায় নিয়ে আসে। স্ত্রী প্রজাতির এই কুমিরটির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। ওজন প্রায় ৮০ কেজি।
সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের মাইগ্রাম-তেলকাড়া খাল থেকে আরো একটি মিঠাপানির কুমির ফাঁদ পেতে ধরে এলাকাবাসী। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে কুমিরটি হস্তান্তর করা হয়। এরপর কুমিরটি নিয়ে আসা হয় খুলনার বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। এর আগে গত ২২ অক্টোবর ঐ এলাকায় দুটি কুমির দেখতে পায় এলাকাবাসী। উদ্ধার হওয়া কুমিটি ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা এবং স্ত্রী প্রজাতির; ওজন প্রায় ৮০ কেজি।
খুলনা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নির্মল কুমার পাল বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, উদ্ধারকৃত তিনটিই মিঠা পানির কুমির। তিনটি কুমিরের মধ্যে একটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী প্রজাতির।
তিনি বলেন, এই প্রজাতির কুমির বাংলাদেশের নদ-নদী থেকে বিলুপ্ত প্রায়। আমরা চিন্তা করছি, এদের একসঙ্গে রাখা যায় কি না। তাহলে প্রজননের মাধ্যমে এদের বংশবিস্তার ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, মিঠা পানির কুমির ছোট-বড় নদী, খাল ও জলাশয়ে অবস্থান করে। এরা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে এসব কুমির এখন আর খুব একটা দেখা মেলে না। কেননা অতীত থেকেই মানুষ ও কুমিরের মধ্যে সংঘাত চলে আসছে। তাই নদী, খাল কিংবা অন্য কোথাও মানুষ কুমির দেখতে পেলে তার ওপর আক্রমণ চালায়। এমনকি মেরে ফেলে। বর্তমানে নদী, খাল, জলাশয় শুকিয়ে যাওয়া ও কিছুসংখ্যক হিংস্র মানুষের কারণে মিঠা পানির কুমির বিপন্ন হয়ে পড়েছে। উদ্ধার করা মিঠা পানির কুমির তিনটি কী করা হবে-তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০০০ সালে বাংলাদেশ থেকে মিঠা পানির কুমিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। তবে, আশার কথা হচ্ছে, এখনো দেশের বিভিন্ন নদ-নদী, খাল ও জলাশয়ে এখনো টিকে রয়েছে মিঠা পানির কুমির।