হারুন-অর-রশীদ : দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলে ঘটছে কৃষি বিপ্লব। বাম্পার ফলনে অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে কৃষক। উৎপাদিত সবজি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন তারা। জিকেবিএসপি’র প্রকল্পের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক সফলতা পেয়েছেন। আমন ও বোরো ধান আবাদ ভালো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জ-খুলনা- বাগেরহাট -সাতক্ষীরা-পিরোজপুর জিকেবিএসপি প্রকল্প এই ৫জেলায় এ মৌসুমে ২০ প্রকারের সবজি আবাদ করেছে। এজন্য কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার উপকরণ প্রদান করা হয়। প্রতি জন কৃষক এক বিঘা করে জমি ৩৫৬ বিঘা জমিতে নানা প্রকার সবজি চাষ করেছেন। তাদের উৎপাদিত সবজির মধ্যে রয়েছে উচ্ছে ও করলা ১২ বিঘা, চালকুমড়া ১৫ বিঘা, লাউ ৩০ বিঘা, তরমুজ ৩৬ বিঘা, ডেঢ়শ ১৪ বিঘা, মিষ্টি কুমড়া ২২ বিঘা, আমন ধান ৪৬ বিঘা, মরিচ ৮ বিঘা, বেগুন ২৬ বিঘা, বাঁধা কপি ৩৫ বিঘা, ফুল কপি ৩৪ বিঘা, লতিরাজ কচু ৮ বিঘা, টমেটো ২৬ বিঘা, পটোল ১২ বিঘা, সরিষা ১৪ বিঘা, শিম ১৮ বিঘা ও বোরোধান ৩০ বিঘা। সাথে রয়েছে তরমুজ, ভুট্টা ও সুর্যমুখি। অসময়ের বর্ষাকালীন তরমুজেরও বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। টমেটো প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ৫০-৫৫ মেট্রিকটন। প্রতিকেজি কৃষক পাইকারী বিক্রি করছেন ৫০-৬০ টাকায়। প্রতি বিঘায় বিক্রি করছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ঘেরের পাড়ে টমেটো চাষে আসছে সফলতা। লতিরাজ চাষে সফলতা আসছে। প্রতিবিঘায় বিক্রি ১ লাখ ৩০ হাজার এক সময়ের গরীবের কচুর লতি এখন বিত্তবানদের খাবার। লতিরাজ জাতের কচু চাষ করে কৃষক অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। সবজি ও ভেজষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্যালশিয়াম অক্সালেট কম থাকায় গলা চুলকায়না। কচু থেকে সবুজ রংয়ের লতিরাজ জন্ম নিচ্ছে। কচু গাছ থেকে ৯ মাস লতি সংগ্রাহ করা যায়। এদের জীবনকাল ৯ মাস। প্রতিবিঘায় ৫০ মন লতি সংগ্রহ করা হয়। এবছর অধিক ফলনশীল বারি-১৪, বারি-৯, বিনা ৯-১০, সরিষা-১৫, সোনালী সরিষা (এসএস) স্থানীয় টরি-৭ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন কৃষক। শীতের রিক্ততায় হলুদ রং লেগেছে। প্রাণের সস্পন্দন নিয়ে আসে সরিষার ফুল।
বেগুন একটি জনপ্রিয় সবজি। শীতকালীন এই সবজির এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ৬০মন। বালি, কমপোষ্ট ও মাটি সমপরিমানে মিশিয়ে বীজতলা তৈরী করতে হয়। কৃষকরা অল্প খরচে বেশী লাভবান হচ্ছেন। কৃষক পাইকারী প্রতিকেজি প্রথম অবস্থায় ৫০-৬০ টাকা করে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। শিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। এর বিচিও পুষ্টিকর সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। দেশে ৫০টির বেশী স্থানীয় জাতের শিম রয়েছে। এর মধ্যে আরলি-৪৫ দেশীয় জাতের চাষ করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস ফসল কাটা যায়। ফুল ধরার ২০-২৫ দিন পর ফসল কাটা যায়। প্রতিবিঘায় ২০ মেট্টিকটন উৎপাদন হয়েছে। কৃষক শুরুতেই ১০০-১১০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন। ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালি গ্রামের কৃষক তারেক আকুঞ্জি, জাহিদ আকুঞ্জি এবং ডুমুরিয়ার সাজিয়াড়া গ্রামের কৃষক মো. আ. রহিম শেখ বলেন, এই প্রকল্প থেকে সার, বীজ, প্রশিক্ষণ, শ্রমিকের মজুরীসহ সকল প্রকার উপকরণ বিনা মূল্যে প্রদান ও সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রকল্পে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে ফলন ভালো হয়েছে। সার্বক্ষনিক ভাবে প্রকল্প কর্মকর্তরা ক্ষেত পরিদর্শণ করে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
গোপালগঞ্জ-খুলনা- বাগেরহাট -সাতক্ষীরা-পিরোজপুর জিকেবিএসপি প্রকল্প কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ^াস বলেন, সারা বছর সবজি চাষ করে কৃষক লাভবান হয়েছেন। কৃষক অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। তিনি বেশী করে কৃষকদের আবাদ করার আহবান জানান।