আড়াআড়ি হরেক রকম জালে চলছে মাছ শিকার
বিধান চন্দ্র ঘোষ, দাকোপ (খুলনা) : খুলনার দাকোপে বিভিন্ন খাল ও জলাশয়ে আড়াআড়ি টোনাজালসহ হরেক রকম জালে চলছে মাছ শিকার। এতে পানি নিষ্কাশনসহ নানা প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাজুয়া ও চড়া নদী, পূর্ব বাজুয়া, কচাসহ অসংখ্য খালের গভীরতা দিন দিন কমে আসছে। এছাড়া এলাকার বহু মানুষের আমিষের চাহিদা পূরনেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কৃষি কাজও ব্যাহত হতে পারে বলে এলাকার হাজারো কৃষকের আশঙ্কা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় বিভিন্ন নামে ২২৮টির বেশি খাল ও জলাশয় রয়েছে। এসব অধিকাংশ সরকারী খাস খালগুলো নাম মাত্র ইজারা নিয়ে ইজারাদার অথবা গায়ের জোরে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি দখলে রেখেছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তারা আড়াআড়ি অবৈধ ভাবে বাঁধ, খন্ড খন্ড টোনাজাল, নেটজাল, পাটাজাল, চাকজাল, কারেন্ট জাল ও পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছেন। তা ছাড়া খালের উপর অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা এমনকি পাকা প্রচীরও। এতে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দূর্বলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ কৃষকের বীজতলা ও রোপা আমনের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে চলেছে। আর শুকনো মৌসুমে খালে পানি ধারন ক্ষমতা না থাকায় সেচ সংকটের কারনে প্রধান অর্থকারি ফসল তরমুজ, রবি শস্য ও বোরো চাষ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারনে এক সময়েকার জলাশয়ে ভরা এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা যেমন হারিয়ে যাচ্ছে তেমনি কৃষি কাজেও দেখা দিচ্ছে চরম বিপর্যয়। অন্যদিকে পলি মিশ্রিত পানি ঐ সব জালে বাধাগ্রস্থ হয়ে খালের গভীরতা দিন দিন কমে আসছে। এতে অসংখ্য দেশী প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। ফলে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১০৬টি গ্রামের প্রায় দুই লক্ষ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরনেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
কৈলাশগঞ্জ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য সিন্ধু রায় জানান, আমার জানা মতে মৎস্য সংরক্ষণ আইনটি শুধু খাতা কলমে সিমাবদ্ধ। বাস্তবে এ আইনের কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নেওয়ার মতো এখন এ দেশে কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না। যার প্রমান প্রতিটি খাল বা নদীতে তাকালেই দেখা যায়। খালগুলোতে ঘনঘন বেহুদী জাল, টোনা জাল, বা আড়াআড়ি নেটপাটা দিয়ে মাছ শিকারের ফলে পানি সরবরাহের ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে এবং পলি পড়ে দিন দিন খালের গভীরতা কমে আসছে। এ ছাড়া শুকনো মৌসুমে খালের পানি সেচে ফেলে দিয়ে মাছ ধরে নেয়। ফলে কৃষকরা সেচ সংকটে রবি শস্যসহ বোরো চাষ করতে পারে না। এমনকি রবি শস্য ক্ষেতেও সেচ দিতে পারে না। এতে কৃষি কাজ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কিছু ইজারাদাররা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে ও ভূয়া মৎস্যজীবি সেজে সমিতির নামে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ম্যানেজ করে নদী ও খাল ইজারা নেয়। পরে সাধারণ জনগনের মধ্যে প্রতিযোগিতায় ঘাট হিসাবে বিক্রি করে। যে কারণে মৎস্য সংরক্ষণ আইন কাগজ কলমে বন্দি থাকছে। তা ছাড়া অসংখ্য দেশী প্রজাতী মাছের চারা পোনা নিধন হচ্ছে এবং প্রকাশ্যে গ্রাম্য হাট বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। ফলে উপজেলার বিপুল জনগোষ্ঠির আমিষের চাহিদা পুরনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অবিলম্বে বিভিন্ন খালের সকল জাল অপসারন এবং কৃষকের কথা বিবেচনা করে খালগুলো ইজারা বন্দের দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার বলেন, আমরা দ্রুত অভিযান পরিচালনা করবো। অভিযানে বিভিন্ন খালে আড়াআড়ি পাতা সকল জাল তুলে ফেলা হবে।