বিধান চন্দ্র ঘোষ দাকোপ (খুলনা) : সনাতন হিন্দুধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজার আর মাত্র ৪দিন বাকি। প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততায় জানান দিচ্ছে দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। সারা দেশের ন্যায় খুলনার দাকোপে এ বছর ৬৬টি পূজা মন্ডপে শারদীয়া দূর্গা পূজা উদ্যাপনে চলছে প্রস্তুতি।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী এসব সার্বজনীন পূজা মন্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরিতে ভাস্কারদের কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মাটির কাজ। কয়েকটি মন্ডপে আবার ভাস্কাররা শুরু করেছেন রং, তুলি দিয়ে প্রতিমা সাজ সজ্জার কাজ। এতে তাদের নিখুঁত হাতের ছোয়ায় কৃত্রিম জীবন পাবেন দেবী দূর্গা, শিব, লক্ষী, সরস্বতি, কার্তিক, গনেশ, অসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা। এছাড়া কোন কোন প্রতিমায় আবার পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ অন্যান্য গয়না। এরপর ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি, আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পূজা মন্ডপগুলো।
উপজেলার পানখালী এলাকার রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, মহা চন্ডীতে উল্লেখ আছে ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সাথে যুদ্ধে রত হন। রাম চন্দ্র পাপের বিনাশের লক্ষে দেবী আদ্ধাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সিতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে নিহত করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বরা দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন। আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার দেবী পক্ষের ষষ্ঠি তিথীতে বোধন তলায় মঙ্গল ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দূর্গা দেবীর এই উৎসব শুরু হবে।
আর আগামী ১২ অক্টোবর মহাবিজয় দশমীতে দেবী দূর্গা প্রতিমা বির্ষজনে উৎসবের সমাপ্তী ঘটবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রমতে এ বছর দেবী দূর্গার আগমন হবে পালকিতে চড়ে। আর ঘোড়ায় চড়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
বটবুনিয়া এলাকার ভাস্কার ভোলা সরকার জানান, এবছর তার ৩ জনের টিম মিলে বিভিন্ন এলাকায় ৩টি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ প্রায় শেষ এখন রং তুলি দিয়ে শুরু করেছেন প্রতিমা সাজ সজ্জার কাজ। এতে তারা মোট ৬০ হাজার টাকা পাবেন। বিভিন্ন মালামালে খরচ বাদে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকতে পারে। প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রতিমা তৈরিতে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।
এবিষয়ে উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অসিত বরণ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার রায় ও চালনা পৌরসভা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অতিন মন্ডলের সাথে আলাপকালে এ প্রতিবেদকে জানান, এ বছর মোট ৬৬টি পূজা মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠানের লক্ষে প্রস্তুতি চলছে। তবে একটি বিশেষ চক্র তাদের স্বার্থ হাসিলে মন্ডপে মন্ডপে চাঁদা চেয়ে এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে উড়োচিঠি দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত না হয়ে উৎসব মূখর পরিবেশে দূর্গা পূজা পালনে মন্দির কমিটির সভাপতি, সম্পাদকসহ সকল সদস্যদের এবং সাধারন পূজারীদের প্রতি আমরা আহবান জানিয়েছি। সকল অপশক্তি রুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রেখে সবাই মিলে মিশে শান্তিপূর্ণ ভাবে দূর্গোৎসব পালন করবেন বলে তারা জানান।
এব্যাপারে থানা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, উড়োচিঠির ঘটনায় থানায় পৃথক ৫টি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পূজায় যাতে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় তার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছি। যেহেতু প্রতিটা পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলছে। আমরা নজরদারি বৃদ্ধিসহ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। শান্তিপূর্ণ ভাবে দূর্গোৎসব পালনের লক্ষে উপজেলার পূজা মন্ডপগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও সেনা বাহিনী, পুলিশ, গ্রাম পুলিশ, ব্যাটিলিয়ান আনসার, সাধারণ আনসারসহ মোবাইল টিমের সদস্যরা মোতায়ন থাকবে।
দাকোপে দূর্গোৎসব পালনে মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রস্তুতি
Leave a comment