শেখ হাসান আল মাহমুদ, শরণখোলা : বঙ্গোপসাগরে ৩ সপ্তাহ আগে অপহৃত ১৫ জেলের ১০ জন মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ী ফিরেছেন। জলদস্যুদের হাতে একটি ট্রলারসহ এখনো জিম্মী রয়েছেন ৫ জেলে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন তৎপরতা না থাকায় দুবলার জেলেপল্লীতে বিরাজ করছে হতাশা ও জলদস্যু আতংক।
দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ২৬ জানুয়ারী রাতে মান্দারবাড়ীয়ার কাছে বঙ্গোপসাগর থেকে জলদস্যুদের অপহৃত দুবলারচরের ১৫ জেলের ১০ জেলে জনপ্রতি দুই লাখ আশি হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ৩/৪ দিন আগে বাড়ী ফিরতে পারলেও এখনো জলদস্যুদের হাতে জিম্মী রয়েছেন একটি ট্রলারসহ ৫ জেলে। জিম্মী জেলেরা হচ্ছেন শাহজাহান, রিপন, নাথন বিশ^াস, মতিয়ার। অপরজনের নাম জানা যায়নি। হতদরিদ্র এ সব জেলে জমি বন্ধক রেখে ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। টাকা জোগাড় করতে না পারায় জলদস্যুদের কবল থেকে ছাড়া পাচ্ছেননা ৫ জেলে। জিম্মী জেলেদের মুক্ত করার বিষয়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোন তৎপরতা না থাকায় দুবলারচরের কয়েক হাজার শুটঁকিকরণ জেলের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা ও আতংক। জেলেরা এখন সাগরে মাছ ধরতে যেতে সাহস পাচ্ছেননা। সাগরে ২/৩ টি জলদস্যু গ্রুপের আনাগোনা রয়েছে জানিয়ে দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি আরো বলেন, দুবলারচরে কোষ্টগার্ড ও র্যাবের দুইটি ঘাটি নির্মাণ করা হলেও তাদের নেই সাগরে চলাচল উপযোগী দ্রুতগামী নৌযানসহ প্রয়োজনীয় জনবল ও সামগ্রী।
শ্যামনগরের বন্যতলা গ্রামের মৎস্যজীবি আবু তালেব হোসেন বলেন, জলদস্যুদের জনপ্রতি দুই লাখ আশি হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তার ছেলে শাহআলম ও তার ট্রলার মাঝি আজহারুলকে জলদস্যুদের কবল থেকে তিনি মুক্ত করে এনেছেন। কয়েকটি ছাগল, একটি মোটর সাইকেল বিক্রি করে এবং চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তিনি জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করেছেন বলে আবু তালেব জানান। আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের জেলে জিম্মী শাহজাহানের স্ত্রী নাজমা বেগম মোবাইল ফোনে বলেন, তার স্বামীর মুক্তির জন্য দস্যুদের তিন লাখ টাকা দেওয়া হলেও এখনো তাকে ছেড়ে দেয়নি বলে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
দুবলার আলোরকোলের রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিন ফরাজী বলেন, জলদস্যুদের ভয়ে জেলেরা সাগরে যেতে সাহস পাচ্ছেননা। অচিরে পূর্বের মতো দস্যু দমন করতে না পারলে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হবেন বলে মোতাসিন ফরাজী জানান।
এদিকে, ১৮ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত শরণখোলা উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য কোষ্টগার্ডসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহীদুল্লাহ বলেন, জেলে জিম্মীর ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি তবে ২৬ জানুয়ারী দুবলারচরে অস্ত্রসহ আটক তিন জলদস্যুর বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
দুবলার জেলেপল্লীতে বিরাজ করছে জলদস্যু আতংক: জিম্মী ৫ জেলে

Leave a comment